বৌদ্ধ যুগের শিক্ষণ পদ্ধতি, শৃঙ্খলা, মূল্যায়ন ও বৌদ্ধ শিক্ষার প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে লেখো

বৌদ্ধ যুগের শিক্ষণ পদ্ধতি, শৃঙ্খলা, মূল্যায়ন ও বৌদ্ধ শিক্ষার প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে লেখো

বৌদ্ধ যুগের শিক্ষণ পদ্ধতি, শৃঙ্খলা, মূল্যায়ন ও বৌদ্ধ শিক্ষার প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে লেখো
বৌদ্ধ যুগের শিক্ষণ পদ্ধতি, শৃঙ্খলা, মূল্যায়ন ও বৌদ্ধ শিক্ষার প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে লেখো

বৌদ্ধ যুগের শিক্ষণ পদ্ধতি ও শৃঙ্খলা

(1) শিক্ষণ পদ্ধতি:

(1) বৌদ্ধ যুগে শিক্ষণ পদ্ধতি ছিল মূলত মৌখিক। লিপির প্রচলন ছিল। বৌদ্ধ শাস্ত্রে এই লিপির ব্যবহার রয়েছে।

(2) গুরুশিষ্যপরম্পরায় মুখে মুখে চলত সংঘজীবনের শিক্ষা সংঘের নিয়মকানুন, ধর্মীয় উপাখ্যান, বৌদ্ধধর্মের সারকথা ইত্যাদি।

(3) সংঘে ভিক্ষুদের অধিকাংশ সময় কাটত ধ্যান করে এবং বাকি সময়টুকু শিক্ষাদান কার্যে।

(4) বিহারে শিক্ষানবিশরা ছিলেন আবাসিক ছাত্র।

(5) মুখস্থ ও আবৃত্তি পদ্ধতি বৌদ্ধ শিক্ষাব্যবস্থার প্রধান কৌশল, যে কারণে গৌতম বুদ্ধ নিজেও উপদেশমূলক গল্প, উপকথার মাধ্যমে শিক্ষাদান করতেন।

(6) শিক্ষাদানের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হত মাতৃভাষা, আঞ্চলিক ভাষা।

(7) এই শিক্ষাপদ্ধতি প্রথমে ছিল ব্যক্তিগত কিন্তু পরবর্তীকালে ক্রমাগত শ্রমণের সংখ্যা বাড়তে থাকায় শ্রেণি শিক্ষণ শুরু হয়।

(৪) বিহার বা সংঘগুলিতে দু-ধরনের শিক্ষাব্যবস্থা প্রচলিত ছিল। আবাসিক শিক্ষার্থীদের ধর্ম এবং বিনয় সম্বন্ধে পড়ানো হত। তবে যারা বাইরে থেকে আসত তাদের নানা বিষয়ে পড়ানো হত। যেমন- রাজকথা, চোরকথা, মহামাত্যকথা, সেনাকথা, যুদ্ধকথা ইত্যাদি।

(2) শৃঙ্খলা:

(1) বৌদ্ধ বিহারগুলিতে সুনিয়ন্ত্রিত পরিকাঠামো ছিল। যেখানে সকলের জীবন ছিল নির্দিষ্ট নিয়মে বাঁধা। ভিক্ষায় যাওয়া শ্রমণদের জন্য ছিল বাধ্যতামূলক, দিনরাত মিলিয়ে চব্বিশ ঘণ্টায় তিন বারের বেশি খাওয়া নিষিদ্ধ ছিল এবং সুনির্বাচিত খাদ্যতালিকাও ছিল।

(2) ভিক্ষুদের বিস্তারিত নিয়মকানুন ছিল। কোনো ভিক্ষু অন্যায় করলে তাকে দশ জন প্রধান ভিক্ষু মিলে শাস্তির বিধান দিতেন। যদি অপরাধ গুরুতর হত তাহলে সংঘচ্যুত হতেন।

(3) প্রতিমোক্ষ হল শাসনশাস্ত্র বা বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের দণ্ডদানের বিধিসংবলিত শাস্ত্র। এতে অনেক বিধি রয়েছে। ভগবান বুদ্ধের আদেশমতো প্রতিক্ষণের মধ্য ভাগে চতুর্দশী কিংবা পূর্ণিমার দিন চার জন ভিক্ষু একসঙ্গে হয়ে এই শাস্ত্রের এক একটি বিধি আবৃত্তি করবেন। একটি বিধি শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কেউ যদি সেই বিধি লঙ্ঘন করে থাকে তাহলে সেই সময়ে অপরাধ স্বীকার করে নেবে।

(4) শিক্ষার্থীদের বিহারে দশশীল বিধি মেনে চলতে হত।

বৌদ্ধ যুগের মূল্যায়ন ব্যবস্থা ও প্রতিষ্ঠান 

(3) মূল্যায়ন ব্যবস্থা: বৌদ্ধ শিক্ষাব্যবস্থায় শিক্ষাগত যোগ্যতা পরিমাপের জন্য বিভিন্ন ধরনের মূল্যায়ন কৌশল অবলম্বন করা হত। বৌদ্ধ শিক্ষাকালের বিভিন্ন পর্যায়গুলিতে এক পর্যায় থেকে অন্য পর্যায়ে উন্নীত হওয়ার সময় ভিক্ষুকমণ্ডলীর সামনে উপস্থিত থেকে, শ্রমণকে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দিতে হত, এই প্রশ্ন-উত্তর কৌশলে তাদেরকে মূল্যায়ন করা হত। মূল্যায়নের আর-একটি কৌশল উপাধি প্রদান। অর্থাৎ মূল্যায়ন শেষ হলে শ্রমণকে উপাধি দেওয়া হত। যেমন, ভিক্ষুদের জন্য উপসম্পদা ছিল সর্বশেষ স্তর তবে এরপরে ব্যক্তিগত চেষ্টায় কোনো কোনো ভিক্ষু উপাধ্যায় বা আচার্যের স্তরে উন্নীত হতেন। যেসকল শিক্ষার্থী ভিক্ষু জীবন সম্পর্কে অনাগ্রহী ছিল তাদের অন্ততপক্ষে পাঁচ বছরের জন্য গুরুগৃহে থেকে শিক্ষাগ্রহণ করতে হত এবং শিক্ষান্তে তাদের গৃহী জীবনে ফিরে যেতে অসুবিধা ছিল না।

(4) বৌদ্ধ শিক্ষার প্রতিষ্ঠান : বৌদ্ধ বিহারগুলি শিক্ষার পীঠস্থান ছিল। ছোটো ছোটো বিহারের পাশে রাজার সহায়তায় বড়ো বড়ো বিহার গড়ে উঠেছিল। এগুলি সবকটি বৌদ্ধ শিক্ষার উল্লেখযোগ্য পীঠস্থান ছিল। বড়ো বড়ো বৌদ্ধ বিহারগুলি ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের নিদর্শন। এরূপ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় যথাক্রমে নালন্দা, বিক্রমশীলা প্রভৃতি। অন্যান্য কয়েকটি বৌদ্ধ শিক্ষাকেন্দ্র যথাক্রমে বল্লভী, ওদন্তপুরী, সারনাথ, জগদ্দল প্রভৃতি।

আরও পড়ুন – বিকাশের স্তরসমূহ প্রশ্ন উত্তর

Leave a Comment