বৈদিক যুগ, পরবর্তী বৈদিক যুগ এবং ব্রাহ্মণ্য যুগে কীভাবে নারীশিক্ষার অগ্রগতি ঘটেছিল

বৈদিক যুগ, পরবর্তী বৈদিক যুগ এবং ব্রাহ্মণ্য যুগে কীভাবে নারীশিক্ষার অগ্রগতি ঘটেছিল

বৈদিক যুগ, পরবর্তী বৈদিক যুগ এবং ব্রাহ্মণ্য যুগে কীভাবে নারীশিক্ষার অগ্রগতি ঘটেছিল
বৈদিক যুগ, পরবর্তী বৈদিক যুগ এবং ব্রাহ্মণ্য যুগে কীভাবে নারীশিক্ষার অগ্রগতি ঘটেছিল

বৈদিক যুগে নারীশিক্ষা

(1) বৈদিক যুগে বেদপাঠের অধিকারী বহু নারী ছিলেন এমনকি বেদের স্তোত্র রচনায় অংশ নিয়েছিলেন অনেকে।

(2) আশ্বলায়ন গৃহ্যসূত্র অনুযায়ী গুরুগৃহে পাঠশেষ পর্বে নিজগৃহে ফেরার আগে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন হত। যেখানে দু-হাতে তালুতে একপ্রকার তৈল জাতীয় জিনিস ঘষে ঘষে ব্রাহ্মণদের মুখে, ক্ষত্রিয়দের বাহুতে, বৈশ্যদের পেটে এবং নারীদের নিম্নাঙ্গে, শ্রমজীবীদের উরুদেশে মাখতে হত; যা প্রমাণ করে নারীদের বেদ পাঠের কথা। গুরুগৃহে থেকে নারীরা বেদ, বেদাঙ্গ, উপনিষদ ইত্যাদি পড়তেন।

(3) এই যুগে নারীরা উপনয়ন ও সাবিত্রী মন্ত্রের অধিকারী ছিলেন।

(4) এই সময় নারীরা বেদ অধ্যয়ন যেমন করতে পারতেন সেরূপ অধ্যাপনাও করতেন।

(5) এই যুগে কয়েকজন বিদুষী নারী যেমন- অপালা, ঘোষা, লোপামুদ্রা প্রমুখ শিক্ষাগ্রহণের যথেষ্ট সুযোগ লাভ করেছিল। নারীদের শিক্ষাগ্রহণের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল ধর্মচর্চা, ব্যক্তিত্ব গঠন, ব্যক্তিত্বের বিকাশ সাধন করা।

(6) নারীরা অনেক পুস্তক রচনাও করেছেন।

(7) নারীশিক্ষার ক্ষেত্রে অথর্ববেদ অনুযায়ী কুমারী কন্যারা বেদ অধ্যয়ন করার ফলে তরুণ যুবা পতি লাভ করত।- “ব্রহ্মচর্যেন কন্যা যুবানম্ বিন্দতে পতিম্।”

(৪) পরিবারগুলিতে পুত্রসন্তান কাম্য হলেও নারীরা মোটেই অবহেলিত ছিল না।

(9) নারী-পুরুষ ভেদাভেদ না থাকায় নারীরা যজ্ঞে অংশগ্রহণ করতে পারতেন।

পরবর্তী বৈদিক যুগে নারীশিক্ষা

বৈদিক পরবর্তী যুগ হল খ্রিস্টপূর্ব 1000 থেকে 600 খ্রিস্টপূর্ব পর্যন্ত। ঋগ্বেদ যুগের সমাপ্তিকাল থেকে জৈন ও বৌদ্ধ যুগের সূচনাকাল অবধি। 

(1) আদি বৈদিক যুগে নারীদের যে শিক্ষার অধিকার ছিল তার অনেকটা হ্রাস পায়।

(2) এইসময় বাল্যবিবাহ ও সতীদাহপ্রথা শুরু হয়।

(3) উপনিষদের যুগে স্বামীর সঙ্গে তাদের স্ত্রীরাও ধর্মীয় অনুষ্ঠানে অংশ নিতে পারত। উপনিষদে আছে স্বামীর ভুলভ্রান্তি স্ত্রীরা ধরিয়ে দিত।

(4) উপনিষদের যুগে যাজ্ঞবন্ধ্যের অন্যতম স্ত্রী মৈত্রেয়ী বিদুষী ছিলেন।

(5) পরবর্তী বৈদিক যুগে যেসকল নারী বিদ্যাচর্চা করতেন তাদের বলা হত সদ্যোদ্বাহা। যেসকল নারী অবিবাহিত থেকে ধর্মতত্ত্ব-দর্শন চর্চা করতেন তাদেরকে বলা হত ব্রহ্মবাদিনী।

ব্রাহ্মণ্য যুগে নারীশিক্ষা 

(1) এই যুগে মহিলারা পুস্তক রচনাও করেছিলেন।

(2) ব্রাহ্মণ্য যুগে নারীরা সূচিশিল্পে, বয়নশিল্পে, চারুশিল্পে, পশম শিল্পে পারদর্শিতা অর্জন করেন। সূচিশিল্পকে বলা হত পেশ, স্ত্রী সূচি শিল্পীকে বলা হত পেশস্করী।

(3) তৈত্তিরীয় সংহিতায় বলা হয় নারীর শিক্ষালাভের কোনো প্রয়োজন নেই, তা সত্ত্বেও নারীশিক্ষা ব্যাহত হয়নি। উচ্চশিক্ষায় কৃতিত্বের সাক্ষ্য রেখেছিলেন এযুগের অনেক নারী গার্গী, মৈত্রেয়ী প্রমুখ।

আরও পড়ুন – বিকাশের স্তরসমূহ প্রশ্ন উত্তর

Leave a Comment