বৈদিক যুগে গুরু ও শিষ্যের সম্পর্ক কেমন ছিল? বৈদিক শিক্ষাব্যবস্থার ত্রুটি বা সীমাবদ্ধতা আলোচনা করো

বৈদিক যুগে গুরু ও শিষ্যের সম্পর্ক কেমন ছিল? বৈদিক শিক্ষাব্যবস্থার ত্রুটি বা সীমাবদ্ধতা আলোচনা করো

বৈদিক যুগে গুরু ও শিষ্যের সম্পর্ক কেমন ছিল? বৈদিক শিক্ষাব্যবস্থার ত্রুটি বা সীমাবদ্ধতা আলোচনা করো
বৈদিক যুগে গুরু ও শিষ্যের সম্পর্ক কেমন ছিল? বৈদিক শিক্ষাব্যবস্থার ত্রুটি বা সীমাবদ্ধতা আলোচনা করো

গুরু ও শিষ্যের সম্পর্ক

ব্রাহ্মণ্য যুগে গুরু-শিষ্যের সম্পর্ক ছিল অতি পবিত্র এবং মধুর। গুরু-শিষ্যের মধ্যে গড়ে উঠত পিতা-পুত্রের সম্পর্ক। গুরুগৃহে সর্বদা অনাবিল সুখ-শান্তি বিরাজ করত। শিষ্য ছিল গুরুর কাছে সমর্পিত প্রাণ। গুরুর পরিবারের একজন সদস্য হিসেবে শিষ্য গুরুর সেবা করত। আবার শিষ্য অসুস্থ হলে গুরু পিতার ন্যায় তাকে সেবা করতেন।

বৈদিক শিক্ষাব্যবস্থার ত্রুটি

(1) অমনোবৈজ্ঞানিক : বৈদিক শিক্ষাব্যবস্থা অমনোবৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে পরিচালিত হত। গুরুর কথাই ছিল শেষ কথা। শিষ্যের মতামতের বিশেষ গুরুত্ব ছিল না এই ব্যবস্থাতে। শিক্ষাক্ষেত্রে শিক্ষার্থীর চাহিদা, সামর্থ্য অধিক গুরুত্বপূর্ণ।

(2) বংশপরম্পরা দোষে দুষ্ট: বৈদিক শিক্ষাব্যবস্থা বংশপরম্পরা দোষে দুষ্ট ছিল। অর্থাৎ গুরুপুত্র গুরুই হত। তার মধ্যে গুরু হওয়ার যোগ্যতা থাকুক বা নাই থাকুক। শিক্ষাক্ষেত্রে মেধার গুরুত্ব দেওয়া উচিত।

(3) বাস্তবতাবর্জিত : এই শিক্ষাব্যবস্থা বাস্তবভিত্তিক বা জীবনকেন্দ্রিক ছিল না। ফলে এই শিক্ষাগ্রহণে শিক্ষার্থীরা বিশেষ আগ্রহ প্রকাশ করত না। শিক্ষা হবে জীবনকেন্দ্রিক।

(4) সর্বজনীনতার অভাব : বৈদিক শিক্ষা সর্বজনীন ছিল না। অর্থাৎ সব বর্ণের শিক্ষার্থীরা এই শিক্ষার সুযোগ পেত না। ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয় এবং বৈশ্য এই তিন বর্ণের শিক্ষার ব্যবস্থা থাকলেও শূদ্রদের শিক্ষার কোনো অধিকার ছিল না। শিক্ষাক্ষেত্রে সমানাধিকার থাকা অবশ্যই উচিত।

(5) একঘেয়েমি শিক্ষা: গুরুগৃহে দীর্ঘদিন একঘেয়ে জীবনযাপনের মাধ্যমে শিক্ষাগ্রহণের ফলে শিক্ষার্থীদের শিক্ষা হয়ে উঠত নীরস এবং একঘেয়ে। ফলে শিক্ষার্থীর মধ্যে যথেষ্ট আগ্রহের অভাব পরিলক্ষিত হত।

(6) ধর্মীয় শিক্ষার প্রতি অধিক গুরুত্বদান: ধর্মীয় শিক্ষার প্রতি অধিক গুরুত্ব দানের ফলে বৈদিক শিক্ষাব্যবস্থায় ব্যাবহারিক শিক্ষা যথেষ্ট উপেক্ষিত ছিল। শিক্ষা হওয়া দরকার ধর্মনিরপেক্ষ ও জাত নিরপেক্ষ।

(7)  ব্রাহ্মণদের একাধিপত্য: এই যুগের শিক্ষাব্যবস্থায় ব্রাহ্মণদের একচ্ছত্র আধিপত্য ছিল। অর্থাৎ সমস্ত সুযোগসুবিধা ব্রাহ্মণরা ভোগ করত এবং সম্পূর্ণ শিক্ষাব্যবস্থা এদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হত, যা এই শিক্ষা প্রসারে বিশেষ বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল। বর্তমানে এই প্রথাকে ত্যাগ করে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত যোগ্য শিক্ষকের প্রতি গুরুত্বদান করা দরকার।

(8) বৃত্তিশিক্ষা অবহেলিত: বৈদিক শিক্ষাব্যবস্থায় বৃত্তিশিক্ষা বিশেষভাবে অবহেলিত ছিল। কিন্তু শিক্ষাক্ষেত্রে বৃত্তিশিক্ষা অতি গুরুত্বপূর্ণ।

(9) সৃজনশীলতার অভাব: এই শিক্ষাব্যবস্থায় শিক্ষার্থীর সৃজনশীল প্রতিভার বিকাশের কোনো সুযোগ ছিল না, গুরুর কথাই ছিল শেষ কথা। এখানে শিক্ষার্থীর অনুধাবন ক্ষমতা, কল্পনাশক্তি, বিচক্ষণতা প্রভৃতির কোনো গুরুত্বই ছিল না।

(10) জাতীয় উন্নয়নে বাধা: বৈদিক শিক্ষাব্যবস্থায় জাতির সার্বিক উন্নয়নের জন্য বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করতে দেখা যায়নি।

(11) প্রকৃতিগত ত্রুটি: বৈদিক শিক্ষাব্যবস্থা ছিল তুলনামূলকভাবে বেশ জটিল প্রকৃতির। শিক্ষার্থীর সামর্থ্য, চাহিদা গুরুত্ব পায়নি। চাচা

(12) সহপাঠক্রমের অভাব: শিক্ষার্থীদের বিরক্তি বা ক্লান্তি দূর করার জন্য এবং পাঠক্রমকে সরস করার জন্য সহপাঠক্রমের বিশেষ ব্যবস্থা ছিল না বৈদিক শিক্ষাব্যবস্থায়।

(13) বেদ ও যাগযজ্ঞের উপর অধিক গুরুত্বদান : বৈদিক শিক্ষাব্যবস্থায় বেদ পড়া এবং বেদ অনুশীলনের উপর বেশি গুরুত্ব দেওয়া হত। শিক্ষার্থীরা বেশিরভাগ সময় গুরুর সঙ্গে যাগযজ্ঞের কাজেই ব্যস্ত থাকত। ফলে শিক্ষার অন্যান্য দিকগুলি পুরোপুরিভাবে অবহেলিত হত। অর্থাৎ শিক্ষা মূলত বেদকেন্দ্রিক, ফলে অন্যান্য বিষয় সম্পর্কিত জ্ঞান শিক্ষার্থীর হওয়া সম্ভব ছিল না।

আরও পড়ুন – বিকাশের স্তরসমূহ প্রশ্ন উত্তর

Leave a Comment