বৈদিক যুগের নারীশিক্ষা সম্পর্কে লেখো। প্রাচীন বৈদিক শিক্ষায় শিক্ষকের কী কী বৈশিষ্ট্য থাকত
অথবা, গুরুকুল প্রথায় শিক্ষকের বৈশিষ্ট্যগুলি আলোচনা করে শিক্ষক- শিক্ষার্থীর সম্পর্ক লেখো

নারীশিক্ষা
বৈদিক যুগে সমাজে নারীরা অবহেলিত হত না, নারী ও পুরুষের ভেদাভেদ ছিল না, নারীদেরও বেদ শিক্ষায় অধিকার ছিল। তারাও গুরুগৃহে ব্রহ্মচর্য পালন করত। অথর্ববেদে বলা হয় শিক্ষা শেষ না করে নারীদের বিবাহের কোনো অধিকার ছিল না। বৈদিক যুগের নারীরা শিক্ষার পাশাপাশি মন্ত্রদ্রষ্টাও ছিলেন। লোপামুদ্রা, অপালা, ইন্দ্রানী প্রমুখরা ঋগ্বেদের মন্ত্রদ্রষ্টা ছিলেন। এদের ‘ঋত্বিক’ বলা হত। নারীরা বেদ অধ্যয়ন ও অধ্যাপনা করতেন। এমনকি পাঠ্যপুস্তকও রচনা করতেন।
প্রাচীন বৈদিক শিক্ষায় শিক্ষকের বৈশিষ্ট্য ও শিক্ষক-শিক্ষার্থীর সম্পর্ক
(1) শিক্ষার্থীর কাছে শিক্ষক: গুরু ও শিষ্যের সম্পর্ক ছিল খুব সুন্দর, গুরু ছিলেন শিষ্যদের কাছে পরম শ্রদ্ধার পাত্র। অথর্ববেদ অনুযায়ী পিতা-মাতা সন্তানের দেহ সৃষ্টি করেছে এবং শিক্ষা দিয়ে তাকে নতুন জন্ম দিয়েছে গুরু। তাই গুরুকে শিষ্যরা পিতৃরূপে জ্ঞান করত।
(2) শিক্ষকের সাহায্য: গুরুকুলভিত্তিক শিক্ষাব্যবস্থায় গুরু নিজের মতন করে শিক্ষার্থীদের পাঠদান করতেন। গুরুর মুখনিঃসৃত বেদবাক্য শুনে শুনে মনে রাখত শিষ্যরা। গুরুর সাহায্য ছাড়া বেদ শিখতে পারত না শিষ্যরা, শুদ্ধ উচ্চারণ ও আবৃত্তি কৌশল শিষ্যরা গুরুর কাছ থেকে শিখত। পক্ষপাতহীনভাবে গুরু সকল শিষ্যদের সমানভাবে শিক্ষা দিতেন।
(3) শিক্ষকের ব্যক্তিত্ব: শিক্ষক বা গুরু শুধু বিদ্বান নন, তিনি ছিলেন একাধারে সুবক্তা, প্রত্যুৎপন্নমতিসম্পন্ন। তবে শিষ্যকে গুরু কোনো ছল করে বিদ্যা থেকে বঞ্চিত রাখতে পারবেন না নিজের স্বার্থের জন্য। এরকম হলে গুরু আচার্য নামের অযোগ্য বিবেচিত হবেন।
(4) শিষ্যদের পুত্রের ন্যায় স্নেহ: গুরু শিষ্যকে পিতা-মাতার মতন সেবা-যত্ন করতেন। শিষ্য অসুস্থ হলে, শিষ্যের আহার বাসস্থানের ব্যবস্থা করতেন গুরু স্বয়ং। কোনো পারিশ্রমিক ছাড়াই গুরু শিষ্যদের শিক্ষাদান করতেন। শিক্ষাশেষে গুরু শুধু দক্ষিণা নিতেন।
(5) আদর্শ: শিক্ষক বা গুরু জীবনে বিদ্যাকে পাথেয় মেনে সমস্ত রকম মোহ, রাজসম্মান, যশ ত্যাগ করেছিলেন এবং শিক্ষকতাকে জীবনের প্রধান কর্তব্য মেনেছিলেন। এই সকল কারণে শিক্ষকের স্থান সমাজে সকলের উপরে ছিল।
(6) শিক্ষার্থীদের করণীয়: শিক্ষার্থীরা দৈনিক বিভিন্ন ধরনের কর্মসম্পাদন করত। ব্রহ্মচর্যাশ্রমে তারা কঠোর নিয়মশৃঙ্খলা মেনে চলত, ধনী-দরিদ্র নির্বিশেষে সকলকে সংযম ও কৃচ্ছসাধন করতে হত। গুরুকে সেবা করা তাদের আবশ্যকীয় কর্তব্যের মধ্যে ছিল, জ্ঞানচর্চা ছাড়া তারা গোচারণ ইত্যাদি কাজ করত। গুরু শয্যা ত্যাগের আগে শিষ্যকে শয্যা ত্যাগ করে অপেক্ষা করতে হত। গুরুর নিন্দা করা যেমন অনুচিত ছিল তেমনই নিন্দা শোনাও অনুচিত ছিল। গুরুর সামনে হাই তোলা, হাঁচি দেওয়া, ঠাট্টা করা নিষিদ্ধ ছিল। গুরুর অনুমতি ছাড়া শিষ্যরা বাইরে কোথাও যেতে পারত না।
আরও পড়ুন – বিকাশের স্তরসমূহ প্রশ্ন উত্তর