বেগম রোকেয়ার শিক্ষাভাবনা ও শিক্ষাচিন্তা সংক্ষেপে আলোচনা করো

বেগম রোকেয়ার শিক্ষাভাবনা ও শিক্ষাচিন্তা সংক্ষেপে আলোচনা করো

বেগম রোকেয়ার শিক্ষাভাবনা ও শিক্ষাচিন্তা সংক্ষেপে আলোচনা করো
বেগম রোকেয়ার শিক্ষাভাবনা ও শিক্ষাচিন্তা সংক্ষেপে আলোচনা করো

বাঙালি মুসলমান নারীর শিক্ষাবিস্তার, অধিকার সচেতনতা নারীমুক্তি আন্দোলনের অগ্রদূত এবং মুক্তচিন্তায় উদ্বুদ্ধ সাহিত্যসেবী বেগম রোকেয়ার পরিচিতি সুবিদিত। রোকেয়া তাঁর গোটা জীবনের অভিজ্ঞতার আলোকে বুঝতে পেরেছেন শিক্ষা কীভাবে উন্নয়ন ও অগ্রগতির উৎস হিসেবে কাজ করে। তিনি নারীকে উদ্বুদ্ধ করেছেন, প্রেরণা দিয়েছেন, নারী অধিকার ও তা আদায়ের পন্থা সম্পর্কিত তাঁর বক্তব্য আজও সমাজ কর্মীদের প্রেরণার উৎস।

শিক্ষাভাবনা ও শিক্ষাচিন্তা

নারীর সামাজিক অবস্থান-অধিকার- মর্যাদার দাবীকে অগ্রাধিকার দিয়ে, নারীর মুক্তি ও নারী জাগরণের চিন্তা, নারী স্বাধীনতার বানী, পুরুষ-নারীর বৈষম্যকে চিন্তাশক্তি দিয়ে বিচার করেন। বেগম রোকেয়া মনে করতেন সুশিক্ষার অভাবেই হৃদয়বৃত্তি সংকুচিত হয়ে যায়। রোকেয়ার শিক্ষাদর্শন প্রয়োগবাদও অভিজ্ঞতাবাদী হিসেবে চিহ্নিত। তিনি শিক্ষার মধ্য দিয়ে কীভাবে আর্থসামাজিক উন্নয়ন, ব্যক্তিত্বের উন্নয়ন সম্ভব সে বিষয়ের উপর গুরুত্ব দিয়েছেন। শিক্ষার মাধ্যমে অর্জিত জ্ঞানের সাহায্যে একজন ব্যক্তি যেন ন্যায়-অন্যায়, ভালো-মন্দ পার্থক্যের জ্ঞান অর্জন করতে পারে এবং তার আলোকে দেশ ও দশের সেবা করতে পারে সেই দিকটির প্রতিও গুরুত্ব দিয়েছেন।

রোকেয়ার বাস্তবভিত্তিক-যুক্তিবাদী দৃষ্টিভঙ্গিতে বিচার করার পরিপ্রেক্ষিত থেকে তিনি তাঁর শিক্ষাভাবনা ও শিক্ষাচিন্তার বাস্তবায়ন করতে চেয়েছেন এবং বাঙালি মুসলিম নারী সমাজে বাস্তবভিত্তিক শিক্ষার প্রসার ঘটিয়েছেন। তাঁর শিক্ষাভাবনার বিভিন্ন দিকগুলি হল-

(1) মুসলিম নারীর জন্য শিক্ষা: বেগম রোকেয়া বিশ্বাস করতেন শিক্ষার মাধ্যমেই নারীরা তাদের অধিকার সম্বন্ধে সচেতন হবে এবং মুক্তির পথ উন্মুক্ত হবে। মুসলিম নারীদের এমন শিক্ষায় শিক্ষিত করতে চেয়েছিলেন যাতে তারা মানসিক শক্তি ফিরে পায়। নারীর মধ্যে কীভাবে আদর্শকে সক্রিয় করে তোলা যায়, তাই ছিল রোকেয়ার প্রতিদিনকার ভাবনা ও প্রচেষ্টা। সেই ভাবনাকে তিনি সাখাওয়াত মেমোরিয়াল গার্লস স্কুল গঠনের মাধ্যমে বাস্তব প্রতিফলন করেন। বিজ্ঞান শিক্ষা, ভূগোল, ইতিহাস, গার্হস্থ্য বিজ্ঞান, রসায়ন বিজ্ঞান, বৈজ্ঞানিক-আবিষ্কারের ও ভাষা ব্যবহারের দক্ষতা অর্জনের শিক্ষা দেন। মানসিক শিক্ষার সাথে শারীরিক শিক্ষাকেও রোকেয়া সমান গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচনা করেছেন। শারীরিক শিক্ষার জন্য মেয়েদের লাঠিখেলা, লাফঝাঁপ, নাচ ইত্যাদি আচরণ চর্চা করা হয়।

(2) শিক্ষাদান পদ্ধতি: কেবল পর্যবেক্ষণ নয়, শিক্ষালাভের পদ্ধতি হিসেবে অনুসন্ধান, শ্রেণিকরণ ও পরীক্ষণের উপরেও রোকেয়া গুরুত্ব প্রদান করেন। বিজ্ঞানের প্রতিটি বিষয় পরীক্ষণের মাধ্যমে শেখাতে চেয়েছেন। বইপত্রের উপর নির্ভরতার বদলে গল্পছলে শিক্ষা দেওয়ার কথা গুরুত্বের সঙ্গে উল্লেখ করেছেন। রোকেয়ার মতে, ধর্মবিশ্বাস দৃঢ় করার জন্য জ্ঞানের আবশ্যিকতা রয়েছে। চোখ-কান ঠিকমতো ব্যবহার করে দৃষ্টি জগতের পরিচয় না নিলে স্রষ্টাকে ভালোভাবে চেনা যায় না। তিনি শিক্ষার্থীদের কোরানের নির্দেশ অনুসারে জীবন গড়ে তোলার তাগিদ দেন।

(3) শিক্ষক: শিক্ষাদানের ক্ষেত্রে শিক্ষকের আচরণ বা ভূমিকা ও যোগ্যতাকে রোকেয়া গুরুত্ব দিয়ে দেখেছেন। শিক্ষকদের বিভিন্ন বিষয়ে ব্যাপক সমন্বিত জ্ঞান থাকতে হবে যাতে তিনি শিক্ষার্থীর প্রশ্নগুলোর সঠিক উত্তর দিতে পারে। তিনি মনে করেন শিক্ষকের ভূমিকা হবে আন্তরিকতাপূর্ণ হাসিখুশি ও সহিমু, শাসন ও শৃঙ্খলার বিধানে মনোবিজ্ঞানের তত্ত্ব দ্বারা পরিচালিত।

আরও পড়ুন – মধ্যযুগীয় ভারতের শিক্ষা প্রশ্ন উত্তর

Leave a Comment