বিদ্যালয় শিক্ষার উন্নতির জন্য বিদ্যাসাগর যে অবদান রেখে গেছেন তা আলোচনা করো

বিদ্যালয় শিক্ষার উন্নতির জন্য বিদ্যাসাগর যে অবদান রেখে গেছেন তা আলোচনা করো

বিদ্যালয় শিক্ষার উন্নতির জন্য বিদ্যাসাগর যে অবদান রেখে গেছেন তা আলোচনা করো
বিদ্যালয় শিক্ষার উন্নতির জন্য বিদ্যাসাগর যে অবদান রেখে গেছেন তা আলোচনা করো

বিদ্যালয় শিক্ষার উন্নতিতে বিদ্যাসাগরের অবদান

বাংলার সমাজসংস্কারে ও শিক্ষার সামগ্রিক সমৃদ্ধিতে যে-সমস্ত মনীষীগণ তাঁদের কাজ চিরস্মরণীয় করে গেছেন, বিদ্যাসাগর তাঁদের মধ্যে ছিলেন অন্যতম। তাঁর সময়কালে মাধ্যমিক শিক্ষা ও উচ্চশিক্ষা ব্যতীত প্রাথমিক শিক্ষা তেমনভাবে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা লাভ করেনি। দেশীয় পাঠশালাগুলির অবস্থা ছিল শোচনীয়। এমতাবস্থায় এগুলির সংস্কারসাধন ও উন্নতির যে প্রয়োজন তা অনুধাবন করে 1853 সালে প্রাথমিক স্কুল স্থাপন, পাঠ্যপুস্তক রচনা, শিক্ষক-শিক্ষণের ব্যবস্থা করা ইত্যাদি সুপারিশ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন সরকারের কাছে তুলে ধরেন। তৎকালীন বড়োলাট লর্ড ডালহৌসিও বিদ্যাসাগরের প্রতিবেদনের সুপারিশগুলিকে সমর্থন করেন। 1854 সালে বাংলা প্রদেশের প্রথম ছোটোলাট মি. হ্যালিডেও দেশজ প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলির প্রতি সহানুভূতি ও সচেতনতা প্রকাশ করেন এবং উভয়ের আলোচনা সাপেক্ষে কিছু সংখ্যক মডেল স্কুল স্থাপন ও সেগুলি পরিদর্শনের ব্যবস্থা করা প্রভৃতি বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেন। বিদ্যাসাগর 1861 সালে কলকাতা ট্রেনিং স্কুলের সম্পাদকের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। 1864 সালে তাঁর অনুপ্রেরণায় মেট্রোপলিটন ইন্সটিটিউশন স্থাপিত হয়। 1873 সালে মেট্রোপলিটন কলেজের প্রতিস্থাপন- 1875 সালে প্রথমে বউবাজার শাখা ও পরবর্তীতে 1887 সালে প্রথমে বড়োবাজার শাখার পত্তন হয়।

কলেজীয় শিক্ষার পাশাপাশি বিদ্যাসাগর স্কুল শিক্ষার প্রতিও গুরুত্ব দিয়েছিলেন। বিদ্যালয়গুলির উন্নতিকল্পে তিনি বলেছিলেন-

(1) মাতৃভাষাই হবে পাঠদানের মূল মাধ্যম।

(2) পাঠদানের শুরুতে লেখা ও পড়া, গণিত, ভূগোল, ইতিহাস, জ্যামিতি, পাটিগণিত, প্রকৃতিবিজ্ঞান, নীতিবিজ্ঞান, শারীরতত্ত্ব, রাষ্ট্রবিজ্ঞান ইত্যাদি বিষয়গুলি শিক্ষাদানের কথা বলেন।

(3) তৃতীয় শ্রেণি থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত মডেল স্কুলগুলির পরিকল্পনার ক্ষেত্রে একজন করে প্রধানপন্ডিত ও দুজন করে সহকারী পণ্ডিত রাখার কথা বলেন।

(4) গুণমান ও যোগ্যতা অনুযায়ী পণ্ডিতদের বেতন কুড়ি থেকে ত্রিশ টাকা এবং প্রধান পণ্ডিতের বেতন কম করে পঞ্চাশ টাকা করার কথা বলেন।

(5) বিদ্যালয় শিক্ষার উন্নতিকল্পে হুগলি, নদিয়া, বর্ধমান ও মেদিনীপুর এই চারটি জেলায় মোট 50টি বিদ্যালয় স্থাপনের কথা বলেন এবং বাংলা মাধ্যম বিদ্যালয়গুলির কদর রাখার জন্য এগুলির কোনোটিই ইংরেজি মাধ্যম বিদ্যালয় বা মহাবিদ্যালয়ের কাছে অবস্থিত হবে না বলে জানান।

(6) বিদ্যালয়গুলির পরিদর্শনের ক্ষেত্রে মাসিক 150 টাকা বেতন সাপেক্ষে দুজন পরিদর্শক নিয়োগের কথা বলা হয়। যাদের মধ্যে একজনের অধীনে থাকবে হুগলি ও মেদিনীপুর জেলা এবং অন্যজনের অধীনে থাকবে বর্ধমান ও নদিয়া জেলা।

(7) সংস্কৃত কলেজের অধ্যক্ষই প্রধান পরিদর্শকের ভূমিকা নেবেন।

(৪) বিদ্যালয়গুলির সুষ্ঠু প্রশাসন পরিচালনার উদ্দেশ্যে সার্কেল প্রথা চালু হয়, যেখানে বিদ্যাসাগর দক্ষিণবাংলা সার্কেলের পরিদর্শক নিযুক্ত হন এবং তাঁর অধীনের প্রতিটি জেলায় পাঁচটি করে বিদ্যালয় স্থাপন করেন।ঐহিক পদার্থ সম্পর্কে শিশুমনে স্বচ্ছ ধারণা না থাকলে তা যে পরবর্তীকালে সেই শিশুমনকে কোনো বিষয়েই আকর্ষণ করতে পারে না, তা বিদ্যাসাগর উপলব্ধি করেছিলেন। তাঁর রচিত- বর্ণপরিচয়, কথামালা, বোধোদয়, বাংলার ইতিহাস, পন্থাবলি, চারুপাঠ, জীবনচরিত প্রভৃতি বইগুলির পাঠবিন্যাস সেই সাক্ষ্যই প্রমাণ করে। পরিশেষে স্বীকার করে নিতেই হয় যে, বর্তমান যুগের বিদ্যালয় স্তরের শিক্ষা থেকে শুরু করে শিক্ষার উচ্চস্তর পর্যন্ত অনেকাংশেই আমরা তাঁর কাছে ঋণী।

আরও পড়ুন – মধ্যযুগীয় ভারতের শিক্ষা প্রশ্ন উত্তর

Leave a Comment