প্রাথমিক শিক্ষার ক্ষেত্রে বিদ্যাসাগরের বর্ণপরিচয় পুস্তকটির গুরুত্ব আলোচনা করো

প্রাথমিক শিক্ষা প্রসঙ্গে বর্ণপরিচয়ের গুরুত্ব
আমাদের দেশে প্রাথমিক শিক্ষাবিস্তারে ও সাধারণ মানুষের মধ্যে নিরক্ষরতা দূরীকরণে বিদ্যাসাগরের বর্ণপরিচয় এক অবিস্মরণীয় অবদান। তিনি নিজে জনসাধারণের মধ্যে শিক্ষা প্রসারের জন্য মাতৃভাষার মাধ্যমে পুস্তক রচনায় উদ্যোগি হন। এই উদ্দেশ্যে তিনি মনোবৈজ্ঞানিক ভিত্তির উপর সৃষ্টি করেন ‘বর্ণপরিচয়‘ নামক শিশুপাঠটি। বর্ণপরিচয়ের প্রথম ভাগ প্রকাশিত হয় 1855 সালের 13 এপ্রিল এবং দ্বিতীয় ভাগ প্রকাশিত হয় 1855 সালের 14 জুন। স্পষ্ট করে বলা, শেখা ও উচ্চারণের জন্য এই পুস্তকটি রচিত হয়েছিল। ধ্বনির সঙ্গে সংগতি রেখে উচ্চারণ শেখানো এবং বাংলা ভাষাকে সরলীকৃত করার জন্যই তিনি ‘বর্ণপরিচয়’ লেখেন। তিনিই প্রথমে ছেদ ও যতিচিহ্নের ব্যবহার শুরু করেন এবং লেখনীর মধ্যে কথ্য ভাষার প্রয়োগ ঘটান। তাঁর এই বর্ণপরিচয় নামক পুস্তকে বিজ্ঞানসম্মত উচ্চারণের উপর যথেষ্ট গুরুত্ব দেন। শুধু তাই নয় হস্তাক্ষর, বানান এবং লেখার দক্ষতা যাতে সঠিকভাবে হয় সে দিকেও নজর দেন। এই পাঠ্যপুস্তকে তিনি বিশেষ্য, বিশেষণ, সর্বনাম, ক্রিয়া ও ক্রিয়াবিশেষণের ব্যবহারের উপর ভিত্তি করে পাঠ রচনা করেন। তিনি বর্ণপরিচয় থেকে ‘ঋ’ ও ‘৯’-কে বাদ দেন এবং অনুস্বর (ং) ও বিসর্গ (ঃ)- কে স্বরবর্ণের তালিকা থেকে বাদ দিয়ে ব্যঞ্জনবর্ণের সঙ্গে যুক্ত করেন।
গণশিক্ষার প্রসারের ক্ষেত্রে ‘বর্ণপরিচয়’ পুস্তকটির একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। পুস্তকটি শুধুমাত্র যে সাক্ষরতা বিস্তারের ক্ষেত্রেই ব্যবহৃত হয়েছিল তা নয়, এটি ছিল বাংলা ভাষা শেখার ক্ষেত্রে প্রথম পদক্ষেপ। বিদ্যাসাগর বাংলা ভাষা শেখার ক্ষেত্রে যে ধারাটি প্রবর্তন করেছিলেন তার উপর ভিত্তি করে পরবর্তীকালে অনেক পুস্তক রচিত হয়েছিল। যেমন- শিশু শিক্ষা’, ‘বাল্যপাঠ’, ‘বাল্যশিক্ষা’, ‘আদর্শলিপি’ ইত্যাদি। আজও আমাদের পাঠ শুরু হয় বর্ণপরিচয়ের মাধ্যমে। আজও এই বিজ্ঞানমনস্ক আধুনিক শিক্ষা বর্ণপরিচয়ের গুরুত্বকে এতটুকু মলিন করতে পারেনি।
আরও পড়ুন – মধ্যযুগীয় ভারতের শিক্ষা প্রশ্ন উত্তর