প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য জ্ঞানের সংমিশ্রণের অন্যতম পথিকৃৎ ছিলেন রামমোহন- আলোচনা করো। এদেশে পাশ্চাত্যের যুক্তিনির্ভর বৈজ্ঞানিক শিক্ষাব্যবস্থার প্রচলন সম্পর্কে রামমোহনের ভাবনা কী ছিল

প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য জ্ঞানের সংমিশ্রণের অন্যতম পথিকৃত
প্রসঙ্গত এ কথা বলতেই হবে যে, প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য সভ্যতার জ্ঞান- বিজ্ঞানের মধ্যে সমন্বয়সাধন করে প্রাচীন সভ্যতার বুকে প্রাণাবেগ সঞ্চারের জন্য যাঁরা সচেষ্ট হয়েছিলেন, রাজা রামমোহন রায় তাঁদের মধ্যে অন্যতম পথিকৃৎ। ভারতের প্রাচীন নিদর্শন ও সাহিত্য সম্পর্কে শ্রদ্ধাশীল হওয়ায় তিনি উপলব্ধি করেন, এই প্রাচীন সভ্যতা ও সংস্কৃতির ধারাকে পুনরুজ্জীবিত করা দরকার। ভারতীয় সভ্যতা ও সংস্কৃতির উপর চেপে বসা জগদ্দল পাথরকে সরিয়ে তার অন্তর্নিহিত সত্তায় গতি সঞ্চার করা প্রয়োজন। তাই পাশ্চাত্য জ্ঞান-বিজ্ঞানের ধারার সঙ্গে ভারতের আধ্যাত্মমূলক চিন্তাধারার যোগসাধন করতেই হবে। তাই রামমোহন একদিকে যেমন বেদান্ত মহাবিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন, তেমনি আবার অন্যদিকে Anglo Hindu School -ও প্রতিষ্ঠা করেন।
দেশে পাশ্চাত্য যুক্তিনির্ভর বৈজ্ঞানিক শিক্ষাব্যবস্থার প্রচলন
গভীর কুসংস্কারাচ্ছন্ন জাতিকে জাগাতে হলে প্রয়োজন যুক্তিনির্ভর বৈজ্ঞানিক শিক্ষাব্যবস্থা। রামমোহন বুঝেছিলেন, প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থার আমূল সংস্কার না হলে শত শত বছরের ঘুম থেকে এ জাতিকে জাগানো যাবে না। সমস্ত শিক্ষাব্যবস্থা ঢেলে সাজাতে হবে। তার জন্য প্রয়োজন যুক্তিনির্ভর বৈজ্ঞানিক শিক্ষাব্যবস্থা, যার দ্বারা ভারতবাসী প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থার সংকীর্ণ ধ্যানধারণা থেকে মুক্ত হয়ে নিজেদের শক্তিকে উপলব্ধি করতে পারবে। ভারতবর্ষ বিশ্বসভায় তার যোগ্য স্থান নেবে- এটিই ছিল মহৎপ্রাণ রামমোহনের স্বপ্ন। রাজা রামমোহন রায় জনসাধারণের উন্নতির জন্য প্রগতিশীল শিক্ষাব্যবস্থা ও তার প্রচারের কথা বলেন। তিনি গণিত, প্রকৃতিবিদ্যা, দর্শন, রসায়ন, দেহতত্ত্ব ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় বিজ্ঞান পঠনপাঠনের পরামর্শ দেন।
আরও পড়ুন – মধ্যযুগীয় ভারতের শিক্ষা প্রশ্ন উত্তর