প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা কী? প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার লক্ষ্যগুলি কী কী
অথবা, প্রাক্-প্রাথমিক শিক্ষা কী? কোঠারি কমিশনের মতে, প্রাক- প্রাথমিক স্তরের শিক্ষার উদ্দেশ্যগুলি কী, তা লেখো
প্রাক্-প্রাথমিক শিক্ষার ধারণা
গান্ধিজির মতে, ‘মাতৃজঠরেই শিশুর শিক্ষা শুরু হয়।’ ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর শিশুর পাঁচ বা ছয় বছর বয়স পর্যন্ত যে শিক্ষা অর্জিত হয়, তাই-ই হল প্রাক্-প্রাথমিক শিক্ষা। এটি প্রথাগত শিক্ষার প্রথম পর্ব বা স্তর। সাধারণত জন্ম থেকে পাঁচ-ছয় বছর বয়স পর্যন্ত সময়কে শৈশব বলে। এই স্তরে শিশু যে শিক্ষা লাভ করে, তাকে প্রাক্-প্রাথমিক শিক্ষা বলে। সাধারণত দুই-আড়াই বছর বয়স থেকে পাঁচ-ছয় বছর বয়স পর্যন্ত নির্দিষ্ট উদ্দেশ্যের ভিত্তিতে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যাওয়ার পূর্বে শিশুরা যে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা লাভ করে, তাই-ই হল প্রাক্- প্রাথমিক শিক্ষা।
প্রাক্-প্রাথমিক শিক্ষার লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য
(1) অভ্যাস গঠন: প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার প্রধান উদ্দেশ্য হল শিশুর মধ্যে সু-অভ্যাস গঠন করা। শিশুদের মধ্যে সু-অভ্যাস গড়ে উঠলে ভবিষ্যৎ জীবনবিকাশ অনেক ভালো হয়।
(2) মানসিক বিকাশ : শিশুর যথাযথ ভাষার বিকাশ ঘটানো, চিন্তন শক্তি, কল্পনাশক্তির বিকাশ ঘটানো হল প্রাক্-প্রাথমিক শিক্ষার অন্যতম উদ্দেশ্য।
(3) সামাজিক বিকাশ : প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার অন্যতম উদ্দেশ্য হল শিশুদের মধ্যে সামাজিকতাবোধের বিকাশ ঘটিয়ে শিশুকে যথাযথভাবে সামাজিক করে গড়ে তোলা।
(4) প্রাক্ষোভিক বিকাশ : এই শিক্ষাস্তরের একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য হল শিশুর প্রক্ষোভের যথাযথ বিকাশ ঘটানো। কারণ শিশু রাগ, ভয়, দুঃখ, হিংসা, হাসি, কান্না ইত্যাদি প্রক্ষোভগুলিকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না।
(5) নান্দনিক বিকাশ : নাচ, গান, আঁকা, ছড়া বলা ইত্যাদির মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মধ্যে সৌন্দর্যবোধের বিকাশ ঘটানোও এই শিক্ষাস্তরের অন্যতম উদ্দেশ্য।
(6) নৈতিক বিকাশ: শিশুর মধ্যে কী করা উচিত আর কী করা উচিত নয়, এই বোধ গড়ে তোলার দায়িত্ব পালন করে এই স্তরের শিক্ষা। অর্থাৎ শিশুদের নৈতিক বিকাশ ঘটানো এই শিক্ষার অন্যতম উদ্দেশ্য।
(7) কৌতূহলের বিকাশ: কৌতূহল থেকে জ্ঞানের জাগরণ ঘটে। তাই এই স্তরের শিক্ষার একটি উদ্দেশ্য হল শিশুর মধ্যে কৌতূহল প্রবণতার বিকাশ ঘটানো।
(8) শৃঙ্খলাবোধের বিকাশসাধন: এই স্তরের শিক্ষার অন্যতম উদ্দেশ্য হল শিশুর মধ্যে আত্মশৃঙ্খলা, নিয়মানুবর্তিতা জাগ্রত করা। ছোটো ছোটো নীতিবাক্য সহযোগে গল্প বলে শিশুর মধ্যে নৈতিকবোধ, শৃঙ্খলাবোধ জাগিয়ে তোলা।
(9) দৈহিক বিকাশ: শিশুর যথাযথ দৈহিক বিকাশের উদ্দেশ্য কোঠারি কমিশন প্রাক্-প্রাথমিক শিক্ষার পাঠক্রমে অঙ্গসঞ্চালনমূলক বিভিন্ন কর্মের অন্তর্ভুক্তিকরণের কথা বলেছেন।
(10) ভাষা বিকাশে সহায়তা: এই স্তরে শিশুর শব্দভান্ডার বৃদ্ধি পায় এবং সে ভাষা প্রয়োগ করতে শেখে। তাই এইসময় শিশুকে নির্ভুল শব্দ ও ভাষার স্পষ্ট উচ্চারণ, বানান ইত্যাদির শিক্ষা দেওয়া প্রাক্-প্রাথমিক শিক্ষার অন্যতম উদ্দেশ্য হওয়া উচিত বলে কমিশন মনে করে।
(11) আত্মপ্রকাশে সহায়তা: ছবি আঁকা, গান করা, নাচ করা প্রভৃতি সৃজনশীল কাজের মাধ্যমে শিক্ষার্থীর আত্মবিকাশে সহায়তা করা এই শিক্ষার অন্যতম উদ্দেশ্য।
আরও পড়ুন – আজব শহর কলকেতা প্রশ্ন উত্তর