প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার লক্ষ্যগুলি কীভাবে পূরণ করা যায়

প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার লক্ষ্যগুলি কীভাবে পূরণ করা যায়

প্রাক্-প্রাথমিক শিক্ষার লক্ষ্যপূরণ এবং এক্ষেত্রে প্রাক্- প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলির ভূমিকা

(1) সুস্বাস্থ্যাভ্যাস গঠন: শিক্ষার্থীদের সুস্বাস্থ্য রক্ষার উদ্দেশ্যে পাঠক্রমের মধ্যে বিভিন্ন সু-অভ্যাস যেমন-পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, নিয়মিত প্রাতঃকৃত্য  করা, রোজ দাঁত মাজা, ব্যায়াম করা ইত্যাদির অভ্যাস করাতে পারলে শিক্ষার্থীদের সুস্বাস্থ্য গড়ে উঠবে। এক্ষেত্রে প্রাক্-প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলি যেমন-মন্তেসরি, কিন্ডারগার্টেন ইত্যাদি বিদ্যালয়গুলি শ্রেণিকক্ষে শিশুদের এই বিষয়ে সচেতন করে তুলতে পারে। শ্রেণিকক্ষে স্বাস্থ্যবিজ্ঞান > পাঠের মধ্য দিয়েও এটি করা যেতে পারে।

(2) প্রাক্ষোভিক বিকাশ: শৈশবে শিশুর প্রক্ষোভগুলি থাকে অসংযত এবং অনিয়ন্ত্রিত। প্রাক্-প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বিভিন্ন দলগত খেলাধুলা ও কাজের ব্যবস্থা করতে পারলে শিক্ষার্থীদের অসংযত প্রক্ষোভগুলি সংযত হবে।

(3) সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি গঠন: দলবদ্ধভাবে মিলেমিশে থাকা এবং বিভিন্ন কাজে অংশগ্রহণের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মধ্যে সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি গঠিত হয়। এই উদ্দেশ্যে প্রাক্-প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সরস্বতী পূজা, স্বাধীনতা দিবস পালন, রবীন্দ্র জয়ন্তী উদ্যাপন প্রভৃতি অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের উপর দায়িত্ব অর্পণ করা হয়।

(4) কৌতূহল প্রবৃত্তির বিকাশ: প্রত্যেক শিশুর কৌতূহলপ্রবণতা যাতে বৃদ্ধি পায়, তার জন্য প্রাক্-প্রাথমিক বিদ্যালয়ে রূপকথার গল্প বলা এবং শিক্ষামূলক ভ্রমণের ব্যবস্থা করা যেতে পারে।

(5) অঙ্গসঞ্চালনগত বিকাশ: অঙ্গপ্রত্যঙ্গগুলি যাতে সুস্থভাবে বিকশিত হয়, সেদিকে দৃষ্টি রেখে বিভিন্ন ধরনের খেলাধুলা, ব্যায়াম, ব্রতচারী প্রভৃতির ব্যবস্থা করতে পারলে শিক্ষার্থীদের অঙ্গসঞ্চালনগত কোনো ত্রুটি দেখা দেবে না।

(6) নৈতিক বিকাশ: শিশুদের নৈতিক বিকাশ ঘটানোর জন্য নীতিবাক্য সহযোগে গল্প বলা, যেমন-জাতকের গল্প, মহাপুরুষদের জীবনী পাঠ ইত্যাদির ব্যবস্থা করা হয়। সেইসঙ্গে শিশুদের মধ্যে ন্যায়-অন্যায়, ভালোমন্দ, সত্য-মিথ্যা বোধ গড়ে তোলার চেষ্টা করা হয়।

(7) সৃজনশীলতার বিকাশ: শিশু শিক্ষার্থীদের সৃজনশীল প্রতিভার বিকাশের উদ্দেশ্যে প্রাক্-প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ছবি আঁকা, রং করা, ইচ্ছেমতো মাটির কাজ, কাগজের কাজ প্রভৃতি করতে দেওয়া হয়।

(8) বাচনিক বিকাশ: প্রতিটি শিশু যাতে স্পষ্ট ভাষায় মনের ভাব প্রকাশ করতে পারে, সেই উদ্দেশ্যে এই ধরনের বিদ্যালয়গুলি ছড়া, আবৃত্তি, বিতর্ক, তাৎক্ষণিক বক্তৃতা প্রভৃতির ব্যবস্থা করে।

(9) সৌন্দর্যবোধের বিকাশ  : শিশুদের মধ্যে সৌন্দর্যবোধ জাগিয়ে তোলা প্রাক্-প্রাথমিক শিক্ষার উদ্দেশ্য, বিশ্বপ্রকৃতির রূপ-রস-বর্ণ-গন্ধ ইত্যাদিকে যাতে শিশুরা উপভোগ করতে পারে, সেদিকে দৃষ্টি রেখে এই স্তরের শিক্ষাব্যবস্থা পরিচালিত করতে হবে। সেইসঙ্গে বিদ্যালয়ে অঙ্কন প্রতিযোগিতা, উৎসব প্রাঙ্গণ সাজানো, বিভিন্ন হাতের কাজের প্রদর্শন প্রভৃতির আয়োজনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের চাহিদা পূরণ হতে পারে।

(10)  আত্মপ্রকাশের সুযোগ: প্রত্যেক শিশুর মধ্যে কোনো-না-কোনো সম্ভাবনা সুপ্ত অবস্থায় থাকে। শিক্ষার্থীর এই অন্তর্নিহিত সম্ভাবনার বিকাশের উদ্দেশ্যে প্রাক্-প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রতিদিনের বাণীপাঠ, দেয়ালপত্রিকা প্রকাশ, সংগীত প্রতিযোগিতা, আন্তঃবিদ্যালয় ক্রীড়া প্রতিযোগিতা প্রভৃতির আয়োজন করা হয়।

আরও পড়ুন – আজব শহর কলকেতা প্রশ্ন উত্তর

Leave a Comment