প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার পাঠক্রম ও শিক্ষাপদ্ধতি আলোচনা করো। ডাইড্যাক্টিক অ্যাপারেটাস কী
প্রাক্-প্রাথমিক শিক্ষার পাঠক্রম
প্রাক্-প্রাথমিক শিক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার উদ্দেশ্য কেবল জ্ঞানের বিকাশ নয়, তার দৈহিক, মানসিক, প্রাক্ষোভিক, নৈতিক প্রভৃতি দিকের বিকাশ ঘটানো। তাই প্রাক্-প্রাথমিক শিক্ষার পাঠক্রমে নিম্নলিখিত বিষয়গুলি রাখা বিশেষ প্রয়োজন। যেমন-
(1) শারীরিক বিকাশের উপযোগী বিভিন্ন কর্মসূচি : খেলা, নাচ, গান, আসন, ব্যায়াম, অঙ্গসঞ্চালন ইত্যাদি।
(2) ইন্দ্রিয় পরিমার্জনা সংক্রান্ত কার্যাবলি: এখানে শিশুদের আকার, ওজন, স্পর্শ, শব্দানুভূতি প্রভৃতির প্রত্যক্ষণ। বিভিন্ন আকারের বস্তুর টুকরো, কাগজ, আসবাবপত্র, বিভিন্ন রঙের উল, ঘণ্টা ইত্যাদির ব্যবহার শেখানো হয়।
(3) ভাষাগত উন্নয়ন: পড়ার চেয়ে কথা বলার উপর বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়। শব্দ লেখা বিভিন্ন কার্ড ব্যবহার করা হয়। শব্দগুলি বারবার পুনরাবৃত্তি করে বাক্য শেখানো হয়।
(4) লেখা শিক্ষার অনুশীলন: বিভিন্ন স্তরের মাধ্যমে হাতের লেখা শেখানো হয়। লাইন কাটা, অক্ষর লেখা, বিভিন্ন আকার যেমন- ত্রিভুজ, চতুর্ভুজ, চোঙ ইত্যাদি এঁকে রং করতে শেখানো হয়।
(5) গাণিতিক বিকাশ: আঙুল গণনা, কাঠের ব্লকের সাহায্যে গোনা, যোগ, বিয়োগ, গুণ, ভাগ প্রকৃতি শেখানো আবার নানা উপকরণের মাধ্যমে ছোটো ছোটো অংশ শেখানো হয়।
(6) প্রকৃতি পরিচয়: প্রাক্-প্রাথমিক শিক্ষায় প্রকৃতি পরিচয়ের জন্য বিভিন্ন বিষয় যেমন- জীবজন্তুর ছবির বই, বিভিন্ন পরিবেশের ছবি, বিভিন্ন জায়গায় বেড়াতে যাওয়া, সিনেমা দেখানো ইত্যাদি করা হয়।
(7) সৌন্দর্যবোধের বিকাশ : সৌন্দর্যবোধের বিকাশের জন্য অঙ্কন, মাটির কাজ, কাগজ কেটে বিভিন্ন জিনিস তৈরি ইত্যাদি করা হয়।
(8) সু-অভ্যাস গঠনের কার্যাবলি : সু-অভ্যাস গঠনের জন্য বিভিন্ন কাজের দিকে লক্ষ রাখা হয়। যেমন- স্কুলের ঘর গোছানো, ধুলো ঝাড়া, চেয়ার, টেবিল সাজানো ইত্যাদি অভ্যাস গঠন করা হয়।
(9) সামাজিকীরণের শিক্ষা: সামাজিক গুণ আয়ত্ত করা, একত্রে খেলাধুলা করা, টিফিন খাওয়া, সামাজিক আচরণ, রীতিনীতি আয়ত্ত করা ইত্যাদির মাধ্যমে সামাজিকীকরণের শিক্ষা দেওয়া হয়।
(10) নৈতিক শিক্ষা: বিভিন্ন মনীষীদের জীবনকাহিনি, ধর্মীয় গল্প, নীতি শিক্ষা বিষয়ক গল্পের ক্লাস, অভিনয় প্রভৃতির মাধ্যমে নীতিশিক্ষা প্রদান করা হয়।
প্রাক্-প্রাথমিক স্তরে শিক্ষার পদ্ধতি
প্রাক্-প্রাথমিক শিক্ষান্তরে নিম্নলিখিত পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়। যথা- খেলার ছলে শিক্ষা, সক্রিয়তার মাধ্যমে শিক্ষা, স্বাধীনতার মাধ্যমে শিক্ষা, গল্পের ছলে শিক্ষা, শিক্ষা, ব্যক্তিকেন্দ্রিক শিক্ষা ইত্যাদি।
অর্থাৎ প্রাক্-প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিশুশিক্ষার্থীদের জন্য বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ধরনের শিক্ষাপদ্ধতি অবলম্বন করা হয়। মন্তেসরি তাঁর শিশুনিকেতনে শিক্ষার্থীদের শিক্ষাদানের জন্য ব্যক্তিকেন্দ্রিক শিক্ষাপদ্ধতি অবলম্বন করেছিলেন।
- Didactic Apparatus: মন্তেসরি তাঁর শিক্ষাপদ্ধতিতে ইন্দ্রিয় পরিমার্জনা (Sense training)-র কথা বলেন। কারণ ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমেই ব্যক্তি সংবেদন ও প্রত্যক্ষণ প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে জ্ঞানার্জন করে। তাই শিশুকে শিক্ষা দেওয়ার জন্য ইন্দ্রিয় প্রশিক্ষণের প্রয়োজন। তাই মন্তেসরি বিভিন্ন ধরনের যন্ত্র তৈরি করেন যেগুলির মাধ্যমে শিশুরা বিভিন্ন বস্তুর মধ্যে পার্থক্য নিরূপণ করতে পারে ও ইন্দ্রিয়ের কার্যাবলিও পরিমার্জিত হয় এর দ্বারা। মন্তেসরি এই ধরনের যন্ত্রগুলির নাম দিয়েছেন ‘ডাইড্যাক্টিক যন্ত্র’ (Didactic Apparatus)।
আরও পড়ুন – আজব শহর কলকেতা প্রশ্ন উত্তর