প্রাক্-প্রাথমিক শিক্ষার গুরুত্ব লেখো। ভারতে প্রাক্-প্রাথমিক শিক্ষার প্রতিষ্ঠান বা শিক্ষালয় সম্পর্কে আলোচনা করো
প্রাক্-প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষামূলক দায়িত্ব সম্পর্কে আলোচনা করো
সাধারণত শিশুর 2-2½ বছর বয়স থেকে 5/6 বছর বয়স পর্যন্ত প্রাথমিক শিক্ষার পূর্ববর্তী শিক্ষাকে প্রাক্-প্রাথমিক শিক্ষা বলে। প্রাক্-প্রাথমিক শিক্ষা হল প্রাথমিক শিক্ষার প্রস্তুতি পর্ব। এই শিক্ষার গুরুত্ব বা প্রয়োজনীয়তা হল-
(1) শিশুর সুস্থ ও স্বাভাবিক বিকাশ নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে প্রাক্-প্রাথমিক শিক্ষা গভীরভাবে তাৎপর্যপূর্ণ।
(2) প্রাক্-প্রাথমিক শিক্ষাই শিশুর জন্মগত আবেগ বা প্রক্ষোভগুলি নিয়ন্ত্রিত এবং পরিমার্জিত করতে দায়িত্ব গ্রহণ করে।
(3) নৈতিক আদর্শের ভিত্তিতে আদর্শ চরিত্রগঠনের ক্ষেত্রে প্রাক্ প্রাথমিক শিক্ষার গুরুত্ব অপরিসীম। কারণ শৈশবকাল হল প্রকৃত চরিত্রগঠনের সময়।
(4) পরবর্তী প্রাথমিক বা উচ্চশিক্ষা গ্রহণের জন্য প্রস্তুত করার ক্ষেত্রে প্রাক্-প্রাথমিক শিক্ষার গুরুত্ব অনস্বীকার্য।
(5) কথ্য এবং লেখ্য ভাষায় মনের ভাব প্রকাশ করার ক্ষেত্রে প্রাক্ প্রাথমিক শিক্ষা বিশেষ প্রয়োজনীয়।
(6) শৈশবে শিশুর আচরণ থাকে অসংহত ও বিশৃঙ্খলিত। শিশুদের এই অসংহত ও বিশৃঙ্খল আচরণকে সংযত ও সুশৃঙ্খল করে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে প্রাক্-প্রাথমিক শিক্ষার গুরুত্ব অপরিসীম।
(7) বাস্তবভিত্তিক এবং বিজ্ঞানসম্মত দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তোলার ক্ষেত্রে প্রাক্-প্রাথমিক শিক্ষা বিশেষ উপযোগী, এই উদ্দেশ্যপূরণের জন্য পশুপাখি, গাছপালা, পাহাড়-পর্বত, নদনদী ইত্যাদি পর্যবেক্ষণে আগ্রহ সৃষ্টি করার চেষ্টা করা হয় প্রাক্-প্রাথমিক বিদ্যালয়ে।
(৪) সমাজে সুস্থ-স্বাভাবিকভাবে বেঁচে থাকার জন্য শিশুর মধ্যে যথাযোগ্য সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি গঠনের দায়িত্ব গ্রহণ করে প্রাক্-প্রাথমিক শিক্ষা।
ভারতে প্রাক্-প্রাথমিক শিক্ষার প্রতিষ্ঠান
(1) নার্সারি বিদ্যালয়: ইংল্যান্ডের মার্গারেট ম্যাকমিলান ও র্যাচেল ম্যাকমিলান তৈরি করেন নার্সারি বিদ্যালয়। এই জাতীয় বিদ্যালয়ের মূল দায়িত্ব হল স্বতঃস্ফূর্ত শৃঙ্খলায় খেলার মাধ্যমে শিশুর দেহ-মনের বিকাশ ঘটিয়ে পরিপূর্ণ বিকাশসাধন করা।
(2) মন্তেসরি বিদ্যালয়: 1907 সালে ড. মাদাম মারিয়া মন্তেসরি ‘Casa dei-Bambini’ যাকে বাংলায় শিশু নিকেতন বলে, সেই বিদ্যালয় স্থাপন করেন। যা পরবর্তীকালে মন্তেসরি বিদ্যালয় নামে পরিচিত হয়।
(3) কিন্ডারগার্টেন: কিন্ডারগার্টেনের প্রতিষ্ঠাতা হলেন জার্মান শিক্ষাবিদ অগাস্ট ফ্রয়েবেল। আত্মোপলব্ধির মাধ্যমে শিক্ষার্থীর অন্তর্নিহিত সম্ভাবনার বিকাশ ঘটানো এই প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব।
(4) শিশু শিক্ষাকেন্দ্র: সর্বশিক্ষা অভিযানের বাস্তব প্রয়োগ হল শিশু শিক্ষাকেন্দ্র। শিশুদের শিক্ষার মূলস্রোতে ফিরিয়ে আনা এই বিদ্যালয়গুলির প্রধান কাজ। কন্যা শিশু বা বিভিন্ন পশ্চাৎপদ শিশুদের শিক্ষার জন্য এই বিদ্যালয়গুলি বিশেষ ভূমিকা গ্রহণ করে।
(5) বালশিক্ষামন্দির: এই বিদ্যালয়টিতে মন্তেসরি ও বুনিয়াদি শিক্ষার সমন্বয় ঘটে। এখানে শিক্ষার্থীকে স্বাস্থ্যকর ও সামাজিক জীবনযাপনের জন্য প্রয়োজনীয় অভ্যাসও আয়ত্ত করতে সাহায্য করে।
(6) প্রাথমিক বিদ্যালয়: প্রাথমিক শিক্ষাকে সর্বজনীন করার লক্ষ্যে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলি Infant Stage-এর শিক্ষার দায়িত্ব গ্রহণ করে।
(7) অঙ্গনওয়াড়ি: প্রাক্-প্রাথমিক শিক্ষার জন্য ICDS (Integrated Child Development Services) প্রকল্পের মাধ্যমে শিক্ষা প্রদান করা হয়। অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রগুলিতে জনসাধারণের সহায়তা-সহ 50 শতাংশ পর্যন্ত আর্থিক সহায়তা করা হয়েছে। এই কেন্দ্রগুলি শিশুর পুষ্টি, স্বাস্থ্য, সামাজিক, দৈহিক, নৈতিক প্রভৃতির বিকাশে প্রধান দায়িত্ব গ্রহণ করে।
(৪) ক্রেশ: ক্রেশ এমন একটি প্রতিষ্ঠান যেখানে অতি অল্প বয়সের শিক্ষার্থীরা শিক্ষা গ্রহণ করে। বিশেষত যেসব গৃহে বাবা-মা উভয়ে চাকরি করতে বেরিয়ে পড়ে, তাদের সন্তানের শিক্ষার দায়িত্ব ও দেখার দায়িত্ব ক্রেশ গ্রহণ করে থাকে।
আরও পড়ুন – আজব শহর কলকেতা প্রশ্ন উত্তর