পাশ্চাত্য শিক্ষা ও জ্ঞান-বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে রাজা রামমোহন রায়ের অবদান আলোচনা করো

পাশ্চাত্য শিক্ষা ও জ্ঞান-বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে রাজা রামমোহন রায়ের অবদান আলোচনা করো

পাশ্চাত্য শিক্ষা ও জ্ঞান-বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে রাজা রামমোহন রায়ের অবদান আলোচনা করো
পাশ্চাত্য শিক্ষা ও জ্ঞান-বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে রাজা রামমোহন রায়ের অবদান আলোচনা করো

পাশ্চাত্য শিক্ষার বিস্তারে রাজা রামমোহন রায়ের অবদান

রামমোহন রায় মনে করতেন দেশের মানুষকে যদি উন্নত করতে হয় তাহলে পশ্চিমি জ্ঞান বিজ্ঞান অপরিহার্য। তিনি বলেন যে, আধুনিক পাশ্চাত্য শিক্ষার উপর ভিত্তি করেই নবভারত গড়ে উঠবে। পাশ্চাত্য শিক্ষাবিস্তারে রামমোহনের বিভিন্ন উদ্যোগগুলি হল-

(1) ইংরেজি মাধ্যমে শিক্ষা : রামমোহন ইংরেজি ভাষায় পাশ্চাত্য শিক্ষাদানের উপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করেছিলেন। তিনি অনুধাবন করেছিলেন মিশনারিদের শিক্ষাপ্রচারের প্রয়াসের ফলে ইতিমধ্যে সাধারণ মধ্যবিত্ত শ্রেণির ভারতীয়দের কাছে ইংরেজি মাধ্যমে পাশ্চাত্য শিক্ষা জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। আর এই জনপ্রিয়তার জন্য বেশকিছু ভারতীয় জনগণ ইংরেজি শিক্ষার দাবি জানাচ্ছেন।

(2) পাশ্চাত্য জ্ঞানবিজ্ঞানের অনুশীলন: রামমোহন রায় মনে করেছিলেন পাশ্চাত্য জ্ঞান-বিজ্ঞান শিক্ষার জন্য ইংরেজি ভাষার একটা অবদান আছে। পাশ্চাত্য সাহিত্য-দর্শন, বিজ্ঞান অনুশীলন করলে সাধারণভাবে ভারতীয়দের মানসিকতার উন্নতি ঘটবে। ফলে সতীদাহ প্রথার মতো অন্ধ কুসংস্কারগুলি দূর করা সম্ভব হবে।

(3) ইংরেজি ভাষার প্রভাবে ভারতীয় সংস্কৃতির চর্চা: ভারতীয় প্রাচীন শিক্ষা ও জ্ঞান বিজ্ঞান সম্পর্কে রামমোহন রায়ের ছিল অগাধ পাণ্ডিত্য। ভারতীয়রা ইংরেজি ভাষা গ্রহণ করলে তাদের পক্ষে ভারতীয় সংস্কৃতিকে বহির্বিশ্বে তুলে ধরা সহজ হবে। ভারতীয়রা নিজেদের সংস্কৃতিকে বিশ্বের সামনে প্রকাশ করে নতুন করে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করবে।

(4) বিজ্ঞান-সচেতনতা : রামমোহন রায় বিশ্বাস করতেন বিজ্ঞান শিক্ষা  প্রসার লাভ করলে কুসংস্কার দূর হবে এবং বিজ্ঞানভিত্তিক শিক্ষার ফলে ভারতবর্ষ ও ইউরোপের উন্নত দেশগুলির মতো প্রগতির পথে এগিয়ে গণিত, জড়বিজ্ঞান, জীবন বিজ্ঞান, রসায়ন, শারীর সংস্থান ইত্যাদি কার্যকর বিদ্যাশিক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে। এই বিজ্ঞান সচেতনতাই দেশ থেকে কুসংস্কারের অন্ধকার দূর করার একমাত্র উপায়।

(5) লর্ড আমহাস্ট-কে চিঠি: পাশ্চাত্য শিক্ষাবিস্তারের প্রয়াসে রামমোহনের সর্বোপরি উল্লেখযোগ্য প্রয়াসের মধ্যে অন্যতম হল 11 ডিসেম্বর, 1823 সালে লর্ড আমহার্স্ট-এর কাছে পাঠানো এক ঐতিহাসিক চিঠিতে সরকারের সংস্কৃত কলেজ প্রতিষ্ঠার বিরুদ্ধে তীব্র ভাষায় প্রতিবাদ করেন। পাশাপাশি এই চিঠিতে তিনি পশ্চিমি শিক্ষাব্যবস্থা প্রবর্তনের জন্য আবেদন জানান এবং এর জন্য সরকারি অর্থ সাহায্যের অনুরোধ জানান। তাঁর লিখিত এই পত্রটি ভারতীয় নবজাগরণের ইতিহাসে এক মূল্যবান দলিল।

(6) হিন্দু কালজ ও ইংরেজি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা: হিন্দু কলেজ প্রতিষ্ঠার সঙ্গে তিনি যুক্ত ছিলেন বলে অনেকে মনে করেন। তবে বিষয়টি বিতর্কিত। 1816 সালে তিনি নিজ ব্যয়ে কলকাতায় একটি ইংরেজি বিদ্যালয় পরিচালনা করতেন। ডেভিড হেয়ারের শিক্ষা বিস্তারের কাজে তিনি তাঁর অন্যতম প্রধান সহায়ক ছিলেন।

(7) ইঙ্গ-বৈদিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা: 1822 সালে ইউনিটেরিয়ান অ্যাসোসিয়েশনের পরিচালনায় তিনি ইঙ্গ-বৈদিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। এই বিদ্যালয়টির কার্যকরী সমিতিতে তিনি ডেভিড হেয়ার এবং রেভারেন্ড অ্যাডামকে যুক্ত করেন। তিনি মনে করতেন ভারতীয় শিক্ষার্থীদের শিক্ষাদানের জন্য ইউরোপীয় শিক্ষক নিয়োগ করা প্রয়োজন।

(8) জেনারেল অ্যাসেম্বলিজ ইন্সটিটিউশন-এর সঙ্গে যুক্ত: পাশ্চাত্য ইংরেজি শিক্ষা প্রসারের জন্য 1830 সালে স্কটিশ মিশনারি আলেকজান্ডার ডাফ কলকাতায় জেনারেল অ্যাসেম্বলিজ ইন্সটিটিউশন প্রতিষ্ঠা করতে উদ্যোগী হলে সেখানে রামমোহন ছিলেন তাঁর প্রধান সহায়ক। রামমোহন রায় পাশ্চাত্য শিক্ষা তথা ইংরেজি শিক্ষার সমর্থন করেছিলেন কিন্তু তাঁকে অনুকরণ করতে বলেননি। ভারতীয় মূল্যবোধকে কখনোই বিসর্জন দিতে বলেননি। এই কারণে রামমোহনের নেতৃত্বে ইংরেজি শিক্ষার সপক্ষে যে আন্দোলন গড়ে উঠেছিল তাকে বলা হয় সমন্বয়পন্থী আন্দোলন।

আরও পড়ুন – মধ্যযুগীয় ভারতের শিক্ষা প্রশ্ন উত্তর

Leave a Comment