পরিবেশ শিক্ষা বলতে কী বোঝো? পরিবেশ শিক্ষার বৈশিষ্ট্য লেখো ও পরিবেশ শিক্ষার উপযোগিতা বা প্রয়োজনীয়তা সংক্ষেপে লেখো

পরিবেশ শিক্ষা বলতে কী বোঝো? পরিবেশ শিক্ষার বৈশিষ্ট্য লেখো ও পরিবেশ শিক্ষার উপযোগিতা বা প্রয়োজনীয়তা সংক্ষেপে লেখো

(1)পরিবেশ শিক্ষা

পরিবেশ শিক্ষা হল পরিবেশের জন্য শিক্ষা, পরিবেশ বিষয়ক শিক্ষা এবং পরিবেশের মাধ্যমে শিক্ষা। এই শিক্ষা পরিবেশ এবং পরিবেশ সম্পর্কিত সমস্যার ধারণাগুলিকে নির্দিষ্ট করে মূল্যবোধ গড়ে তোলে।

(2) পরিবেশ শিক্ষার বৈশিষ্ট্য

(1) প্রাসঙ্গিকতা: পরিবেশ শিক্ষা আমাদের প্রাকৃতিক পরিবেশ, সামাজিক পরিবেশ, জীবনপরিবেশ সম্পর্কে প্রাসঙ্গিক জ্ঞান অর্জনে সাহায্য করে।

(2)  আন্তঃসম্পর্ক: পরিবেশ শিক্ষার বিষয়টির ক্ষেত্রে মানুষ, তার পরিবেশ ও সংস্কৃতির মধ্যে আন্তঃসম্পর্ক রচনার মাধ্যম হিসেবে কাজ করে।

(3) সচেতনতা: পরিবেশ শিক্ষা মানুষকে পরিবেশ সম্পর্কে সচেতন করে তোলে।

(4) আচরণবিধির মান্যতা: পরিবেশ শিক্ষা পরিবেশগত সমস্যাসমাধানের ক্ষেত্রে ব্যক্তিকে নির্দিষ্ট আচরণবিধি সম্বন্ধে জ্ঞান দান করে এবং সেগুলি মেনে চলার ক্ষেত্রেও অভ্যস্ত করে তোলে।

(5) উৎপাদনমুখীনতা: পরিবেশ শিক্ষা ব্যক্তি শিশুকে বিভিন্ন ধরনের দক্ষতা, অনুভূতি, মূল্যবোধ প্রভৃতি সমন্বিত উৎপাদনমুখী ভূমিকা নিতে সাহায্য করে। ফলে দেশের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি পায় এবং সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য সংরক্ষিত হয়।

(6) পরিবেশ রক্ষা: পরিবেশ শিক্ষা প্রাকৃতিক ও সামাজিক পরিবেশ ধ্বংসের কারণ এবং পরিবেশ সংরক্ষণের উপায় সম্পর্কে মানুষকে অবহিত করে। এর ফলে মানুষ পরিবেশে সমস্যাগুলি সমাধান করতে উদ্যোগী হয়।

(7)  তত্ত্বগত জ্ঞান: পরিবেশ শিক্ষা ব্যক্তিকে পরিবেশ সংক্রান্ত তত্ত্বগত জ্ঞান সরবরাহ করে।

(8) দক্ষতা অর্জনে সহায়তা: পরিবেশ শিক্ষা ব্যক্তিকে সুস্থ জীবনযাপনের উপায় নির্দেশ করে এবং বিভিন্ন বিষয়ে দক্ষ করে তোলে।

(9) দূষণরোধে সহায়তা: দূষিত পরিবেশ মানুষের অস্তিত্বকে প্রশ্নচিহ্নের সামনে দাঁড় করায়। পরিবেশ শিক্ষা পরিবেশকে দূষণমুক্ত করতে সাহায্য করে। ফলে সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য সংরক্ষণে কাজটি অনেক সহজ হয়।

(10) স্বাস্থ্য সাচতনতা বৃদ্ধি: একটি সুস্থ মানুষ একটি সুন্দর ও পরিচ্ছন্ন সংস্কৃতি গড়ে তুলতে পারে। আর পরিবেশ শিক্ষা সেই সুস্থ মানুষ গড়ে তুলতে সহায়তা করে।

(11) সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সঞ্চালন: পরিবেশ শিক্ষা প্রাচীন সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে সংরক্ষণ করে এবং নতুন প্রজন্মের মধ্যে সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের সঞ্চালন ঘটায়।

(3) পরিবেশ শিক্ষার উপযোগিতা বা প্রয়োজনীয়তা

(1) জীববৈচিত্র্য সম্পর্কে জ্ঞানলাভ: পরিবেশ শিক্ষার সাহায্যে স্থানীয় ও পারিপার্শ্বিক জীব এবং তাদের বৈচিত্র্যময় জীবনযাত্রা সম্পর্কে জ্ঞানলাভ করা যায়।

(2) মানুষের সাঙ্গে পরিবেশের সম্পর্ক: পরিবেশ শিক্ষা মানুষ এবং পরিবেশের মধ্যে সম্পর্ক সম্বন্ধে চেতনা জাগ্রত করে এবং সম্পর্কের উন্নতি ঘটায়।

(3) সম্পর্ক নির্ধারণ: পরিবেশ শিক্ষা কোনো বিশেষ গোষ্ঠী বা সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত জীবদের পারস্পরিক সম্পর্ক নির্ধারণ করে।

(4) ক্ষতিকারক দিক সম্পার্ক জ্ঞান: মানুষ কীভাবে পরিবেশের উপাদানকে কাজে লাগাচ্ছে এবং তার ফলে পরিবেশের কীরূপ ক্ষতি হচ্ছে, সে সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করা যায় পরিবেশ শিক্ষা থেকে।

(5) প্রাকৃতিক দুর্যোগ সম্পর্কে জ্ঞান: প্রাকৃতিক দুর্যোগের প্রকৃতি এবং কীভাবে মানুষ তা থেকে রক্ষা পেতে পারে- এই সম্পর্কীয় সমস্ত জ্ঞান পরিবেশ শিক্ষা থেকে পাওয়া যায়।

(6)  জনস্বাস্থ্যের মান: বিভিন্ন স্থানের জনস্বাস্থ্যের মান কীরূপ এবং কোন্ কোন্ কারণে এই মান হ্রাসপ্রাপ্ত হয়, কীভাবে জনস্বাস্থ্য উন্নত করা যায়? তার জ্ঞান পাওয়া যায় পরিবেশ শিক্ষা থেকে।

(7) দূষণের কারণ ও প্রতিকার: পরিবেশ শিক্ষা থেকে পরিবেশের বিভিন্ন প্রকার দূষণ, তার কারণ ও প্রতিকার সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। এককথায় বলতে গেলে পরিবেশ শিক্ষা পরিবেশকে সুস্থ, সবল, দূষণমুক্ত করে আমাদের অস্তিত্বকে টিকিয়ে রাখতে সাহায্য করে।

Leave a Comment