পরিবেশ কাকে বলে? পরিবেশের বৈশিষ্ট্যগুলি আলোচনা করো

পরিবেশ কাকে বলে? পরিবেশের বৈশিষ্ট্যগুলি আলোচনা করো

পরিবেশ

পরিবেশ বলতে বোঝায় পারিপার্শ্বিক সেই সমস্ত ত্তর উপাদানের প্রভাব, যা শিশুর আচরণধারার পরিবর্তন এনে তার জীবন গঠন করে। জার্মান শব্দ ‘environ’-এর ‘en’-এর অর্থ ‘in’ বা মধ্যে এবং ‘viron’-এর অর্থ ‘circuit’ বা পরিবেষ্টন। অর্থাৎ পরিবেশ বলতে পরিবেষ্টনকারী পারিপার্শ্বিক অবস্থাকে বোঝায়। মনোবিদ উডওয়ার্থ (Woodworth)-এর মতে, “Environment covers all the outside factors that have acted on the individual since he began life.” অর্থাৎ যে-সমস্ত বাহ্যিক উদ্দীপক শিশুর জন্মের পর থেকে তার উপর ক্রিয়াশীল হয়, তাদের সমষ্টিকে পরিবেশ বলে। কয়েকজন বিখ্যাত পরিবেশবাদী হলেন- ক্যাটেল, ডগলাস, হল্যান্ড, বারবারা বার্কস প্রমুখ।

পরিবেশের বৈশিষ্ট্য

পরিবেশের মধ্যে যে-সমস্ত বৈশিষ্ট্য লক্ষ করা যায়, সেগুলি হল-

(1) সক্রিয় সত্তা: পরিবেশ কোনো নিষ্ক্রিয় উপাদান নয়, এটি একটি সক্রিয় সত্তা।

(2)  বিস্তৃতি: মানবজীবনের বিস্তৃতি যতটুকু, পরিবেশও ততটাই বিস্তৃত। সুতরাং পরিবেশ মানবজীবনের শুরু থেকে মৃত্যু পর্যন্ত বিস্তৃত।

(3) গতিশীলতা: পরিবেশ গতিশীল। ব্যক্তির সঙ্গে পরিবেশের মিথস্ক্রিয়ার ফলে ব্যক্তি বিভিন্ন অভিজ্ঞতা অর্জন করে।

(4) ধারাবাহিকতা: প্রকৃতি ধারাবাহিকভাবে চলতে থাকে। তাই মানুষ যতদিন বাঁচে, ততদিন তাকে পরিবেশের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে হয়।

(5) ব্যক্তিমাত্রা: অনেকের ধারণা, পরিবেশ একটি বস্তুধর্মী উদ্দীপক সত্তা। কিন্তু আধুনিক শিক্ষাবিদদের মতে, পরিবেশের যে-কোনো বস্তুগত উদ্দীপক মানুষের নিজস্ব উদ্দেশ্যের পরিপ্রেক্ষিতে ব্যক্তিমাত্রা লাভ করে। পরিবেশের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রাযোজ্য।

(6) উন্নয়নধর্মিতা: পরিবেশ দ্বারা শিক্ষার্থীদের মধ্যে যে সক্রিয়তা সঞ্চারিত হয়, তা উন্নয়নমুখী। তাই শিক্ষার্থীর আচরণগত পরিবর্তন, পরিণমন, বিকাশ ইত্যাদি পরিবেশ দ্বারা সৃষ্ট প্রক্রিয়াগুলি উন্নয়নধর্মী।

(7) ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া: পরিবেশের দুটি উপাদান সজীব ও জড়। এদের জন্য মানুষের ক্রিয়া ও প্রতিক্রিয়া অনবরত ঘটছে।

(8) শক্তি সঞ্চারক: পরিবেশ হল একটি শক্তি সঞ্চারক ক্রিয়াশীল মাধ্যম। পরিবেশের ক্রিয়াশীলতা মানুষের মধ্যে শক্তির সঞ্চার করে। তাই শিক্ষাক্ষেত্রে পরিবেশ হল শক্তির উৎস।

(9) বিভিন্নতা: পরিবেশ বিভিন্ন প্রকারের হতে পারে, যেমন-প্রাকৃতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক পরিবেশ ইত্যাদি।

(10) ক্ষতিপূরণে সহায়তা: সহজাতভাবে শিশু যেসব বৈশিষ্ট্যের অধিকারী হয়, তার মধ্যে কোনোটি ত্রুটিপূর্ণ হলে উন্নত পরিবেশ দ্বারা ক্ষতিপূরণ সম্ভব হয়। দৃষ্টিহীন শিশুদের লেখাপড়ার জন্য যে ব্রেইল পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়, তা পরিবেশগত উপাদান।

(11) নিয়ন্ত্রণসাপেক্ষ: প্রয়োজন অনুযায়ী পরিবেশকে নিয়ন্ত্রণ করে শিশুকে আমরা আমাদের ইচ্ছেমতো পরিচালিত করতে পারি।

(12) পরিবর্তনশীলতা: পরিবেশ পরিবর্তনশীল, তাই পরিবেশের একটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল পরিবর্তনশীলতা। অর্থাৎ স্বাভাবিকভাবে অথবা কৃত্রিমভাবে পরিবেশের পরিবর্তন ঘটানো সম্ভব।

(13) শিশুর সাধ্য ইতিবাচক পরিবর্তনসাধন: যখন কোনো শিশুর পরিবেশের সঙ্গে সার্থকভাবে মিথস্ক্রিয়া ঘটে, তখন তার মধ্যে বেশ কিছু পরিবর্তন লক্ষ করা যায়, যা ইতিবাচক হয়ে থাকে।

(14) সুপ্ত সম্ভাবনার বিকাশসাধন: জন্মাবস্থা থেকে শিশু অনেকগুলি সুপ্ত সম্ভাবনা নিয়ে ধীরে ধীরে বেড়ে ওঠে, যা পরিবেশের সাহায্যে যথাযথভাবে পূর্ণতা পায়। অর্থাৎ পরিবেশের বিভিন্ন উপাদান যেমন শিশুর মধ্যে থাকা সুপ্ত সম্ভাবনাগুলির পুষ্টিসাধন করে, তেমনই পরিবেশের মধ্যে অনুশীলনের মাধ্যমে এগুলি সক্রিয় ও বিকশিত হয়। শিক্ষার্থীর অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ তার জীবন পরিবেশের অন্তর্গত। শিক্ষাগত দিক থেকে শিক্ষার্থীর জীবন পরিবেশ এমন কতকগুলি উদ্দীপকের সমবায়, যেগুলি বিভিন্ন সময়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে সক্রিয়তা সঞ্চার করে এবং পরিপূর্ণ জীবন বিকাশে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সাহায্য করে। সুতরাং পরিবেশ এমন একটি গতিশীল ধারণা, যা শিক্ষার্থীদের মধ্যে সঞ্চার করা যায়।

আরও পড়ুন – মনোবিজ্ঞানে অনুসন্ধানের পদ্ধতিসমূহ প্রশ্ন উত্তর

Leave a Comment