পরিবেশ কয় প্রকার ও কী কী? এই প্রসঙ্গে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করো

পরিবেশ কয় প্রকার ও কী কী? এই প্রসঙ্গে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করো

মানুষের পরিবেশ সংক্রান্ত ধারণা অনেকাংশে খুবই সংকীর্ণ। কিন্তু আধুনিক জীববিজ্ঞানী এবং মনোবিদগণ পরিবেশকে বিস্তৃত অর্থে গ্রহণ করেছেন। এই প্রসঙ্গে তাঁরা পরিবেশকে কয়েকটি শ্রেণিতে ভাগ করেছেন। যথা-

আন্তর পরিবেশ

ব্যক্তির নিজস্বতা যে পরিবেশের অন্তর্ভুক্ত, তাই-ই হল আন্তর পরিবেশ। এটি দুই প্রকার, যথা- জৈবিক পরিবেশ, মনোবৈজ্ঞানিক পরিবেশ।

(1) জৈবিক পরিবেশ : মাতৃগর্ভে শিশু যে পরিবেশে বাস করে, সেই পরিবেশ থেকে বংশানুক্রমিকভাবে বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য তার মধ্যে আসে। যেমন-শিশু মাতৃগর্ভের পরিবেশ থেকে পুষ্টি লাভ করে এবং তা শিশুর দৈহিক গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

(2) মনোবৈজ্ঞানিক পরিবেশ : বংশগতসূত্রে শিশু বিভিন্ন ধরনের বৈশিষ্ট্য পায়, যেমন-বুদ্ধি, আগ্রহ, প্রবণতা ইত্যাদি। এই বিষয়গুলি মনোবিজ্ঞানের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত এবং এগুলি জৈবিক পরিবেশ থেকে আসে, তাই মনোবৈজ্ঞানিক পরিবেশ জৈবিক পরিবেশের অন্তর্ভুক্ত।

বহিঃপরিবেশ

শিশু ভূমিষ্ঠ হওয়ার আগে বা পরে যে বাইরের পরিবেশ শিশুর বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যকে প্রভাবিত করে, সেই পরিবেশই হল বহিঃপরিবেশ। এর দুটি ভাগ হল- 

(1) প্রাক্-ভূমিষ্ঠ পরিবেশ : শিশুর ভূমিষ্ঠ হওয়ার আগের পরিবেশ হল প্রাক্-ভূমিষ্ঠ পরিবেশ। যেমন-মাতৃগর্ভে থাকাকালীন মায়ের যথাযথ পুষ্টির জন্য পুষ্টিকর খাদ্যগ্রহজা(যা বাইরের পরিবেশ থেকে আসে)।

(2) উত্তর-ভূমিষ্ঠ পরিবেশ: ভূমিষ্ঠ হওয়ার পরে শিশু যে পরিবেশে ধীরে ধীরে বড়ো হয়ে ওঠে, তাই-ই হল উত্তর-ভূমিষ্ঠ পরিবেশ। এক্ষেত্রে শিশুর পুষ্টি, পরিচর্যা বাইরের পরিবেশ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। উত্তর-ভূমিষ্ঠ পরিবেশের ভাগগুলি হল-

  • প্রাকৃতিক পরিবেশ: পার্থিব জগতের যেসকল বিষয়বস্তু শিশুর বৈশিষ্ট্যকে প্রভাবিত করে, তাই-ই হল প্রাকৃতিক পরিবেশ। এটি দুই ধরনের হয়ে থাকে। যথা-
  • জড় পরিবেশ: যার মধ্যে প্রাণ বা জীবনীশক্তি নেই, সেইসব নিয়ে যে পরিবেশ, তাই-ই হল জড় পরিবেশ। যেমন- জল, বায়ু ইত্যাদি। 
  • সজীব পরিবেশ: প্রকৃতির মধ্যে সজীব উপাদান নিয়ে যে পরিবেশ, গাছের গুঁড়ি তাই-ই হল সজীব পরিবেশ। যেমন- উদ্ভিদ, মানুষ, পশুপাখি প্রভৃতি।
  • পারিবারিক পরিবেশ: পরিবারের বাবা ও মা-এর সঙ্গে শিশুর সম্পর্ক, বাবা-মা-এর সন্তানের প্রতি ভালোবাসা শিশুর বিকাশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। অন্যান্য আত্মীয়স্বজনের শিশুকে স্নেহ ও ভালোবাসা শিশুর বিকাশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ শর্ত।
  • শিক্ষালয় পরিবেশ: বিদ্যালয়ের পরিবেশ শিশুর উপর যথেষ্ট পরিমাণ প্রভাব বিস্তার করে। যথাযথ বিদ্যালয় পরিবেশের জন্য প্রয়োজন বিদ্যালয় পরিকাঠামো, উপযুক্ত শিক্ষক, উপযুক্ত সহপাঠী, শিক্ষাকর্মী, প্রশাসন প্রমুখ।
  • সামাজিক পরিবেশ: সমাজ হল মানুষের সমবায়। কিছু সংখ্যক ব্যক্তি নিয়ে তৈরি হয় গোষ্ঠী। এইরকম বিভিন্ন গোষ্ঠীর সমবায়ে তৈরি হয় সমাজ। সমাজের মধ্যেই প্রাণীর জন্ম, বৃদ্ধি, বিকাশ ও মৃত্যু হয়। সামাজিক পরিবেশ শিশুকে নিরাপত্তা, সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য ইত্যাদি দেয়। মানুষের সামাজিক পরিবেশের উপাদান হল- পরিবার, সমাজ, সামাজিক প্রতিষ্ঠান।
  • কর্ম পরিবেশ: শিশু তথা শিক্ষার্থীদের যথাযথ বিকাশের জন্য প্রয়োজন যথাযথ কর্ম পরিবেশ। কর্ম পরিবেশে পারস্পরিক মানবীয় সম্পর্ক অর্থাৎ সৌহার্দ্য, শ্রদ্ধা, ভ্রাতৃত্ববোধ, দায়বদ্ধতা, একাত্মবোধ ইত্যাদি বৈশিষ্ট্যগুলি থাকা দরকার।

সাংস্কৃতিক পরিবেশ: সংস্কার, সামাজিক রীতিনীতি, মূল্যবোধ, লোকাচার, লোকনীতি ইত্যাদিকে সাংস্কৃতিক উপাদান হিসেবে বিবেচনা করা হয়। আর এইগুলি নিয়ে তৈরি হয় সাংস্কৃতিক পরিবেশ।

আরও পড়ুন – মনোবিজ্ঞানে অনুসন্ধানের পদ্ধতিসমূহ প্রশ্ন উত্তর

Leave a Comment