পরাবিদ্যা ও অপরাবিদ্যা বলতে কী বোঝো? পরা ও অপরাবিদ্যার লক্ষ্যগুলি আলোচনা করো

পরাবিদ্যা ও অপরাবিদ্যা বলতে কী বোঝো? পরা ও অপরাবিদ্যার লক্ষ্যগুলি আলোচনা করো

পরাবিদ্যা ও অপরাবিদ্যা বলতে কী বোঝো? পরা ও অপরাবিদ্যার লক্ষ্যগুলি আলোচনা করো
পরাবিদ্যা ও অপরাবিদ্যা বলতে কী বোঝো? পরা ও অপরাবিদ্যার লক্ষ্যগুলি আলোচনা করো

পরাবিদ্যা

উপনিষদ অনুযায়ী আত্মসংযম ও যোগসাধনার পথে বিদ্যালাভ করাকে বলে পরাবিদ্যা বা ব্রহ্মবিদ্যা। জগৎ ও জাগতিক বিষয়সমূহের মধ্যে সুসম্পর্ক স্থাপন করে বেদের অন্তর্নিহিত আধ্যাত্মিক তত্ত্ব উপলব্ধির মাধ্যমে আত্মজ্ঞানে উদ্বুদ্ধ করার বিদ্যা এটি, যা বৈদিক যুগে প্রচলিত ছিল। এই ব্রহ্মজ্ঞান লাভ হল মুক্তিলাভের বা পরম সত্য ব্রহ্মলাভের সহায়ক বিদ্যা। এই বিদ্যার পাঠক্রমে ছিল বেদ; এছাড়া ইতিহাস, পুরাণ, ব্রহ্মবিদ্যা, নক্ষত্রবিদ্যা, রাশিবিদ্যা, সর্পবিদ্যা ইত্যাদি পড়ানো হত।

অপরাবিদ্যা

ব্রাহ্মণ্য শিক্ষার পাঠক্রমের অপর গুরুত্বপূর্ণ ভাগ হল অপরাবিদ্যা, পার্থিব সুখস্বাচ্ছন্দ্য লাভের বিদ্যা হল অপরাবিদ্যা। বাস্তব জীবনের উপযোগী জ্ঞান আহরণের জন্য প্রাচীন যুগে যে বিদ্যা ছিল তাকে বলে অপরাবিদ্যা। যেমন- অস্ত্রবিদ্যা, নীতিশাস্ত্র, দণ্ডনীতি। এ ছাড়া পশুপালন, কৃষিকাজ, ব্যাবসাবাণিজ্য, চিকিৎসাবিদ্যা, নৃত্য, গীত প্রভৃতি এর অন্তর্ভুক্ত ছিল।

পরাবিদ্যা ও অপরাবিদ্যার লক্ষ্যসমূহ 

(1) পরাবিদ্যার লক্ষ্য:

  • আত্মার মুক্তি: জাগতিক সমস্ত বাধাবিঘ্ন, মায়ার বন্ধন থেকে মুক্তিলাভ হল পরাবিদ্যার অন্যতম লক্ষ্য। এই মুক্তিলাভের স্তম্ভগুলি হল- ব্রহ্মচর্য, গার্হস্থ্য, বানপ্রস্থ ও সন্ন্যাস।
  • অনুশীলন: মানুষের মুক্তিলাভের জন্য পরাবিদ্যার অনুশীলন একটি শ্রেষ্ঠ পথ।
  • আধ্যাত্মিক বিকাশ : পরাবিদ্যা সকলের মধ্যে আধ্যাত্মিক মনোভাব তৈরি করে।
  • আত্মোপলব্ধি: পরাবিদ্যা অনুশীলনের মাধ্যমে মানুষের মনের পরিতৃপ্তি ঘটে আত্মজ্ঞান লাভ করে। তদানীন্তন ঋষিগণ বিশ্বাস করতেন যে, ব্যক্তি পরমসত্তার সঙ্গে যত একাত্ম হতে পারবে তত আত্মোপলব্ধি ঘটবে এবং মোক্ষলাভ সম্ভব হবে।

অপরাবিদ্যার লক্ষ্য

  • দেহ ও মনের বিকাশ: সৎ চিন্তার দ্বারা দেহ ও মনকে সুস্থ রাখা এই শিক্ষার অন্যতম লক্ষ্য ছিল, যার মাধ্যমে দেহ ও মনের বিকাশ ঘটবে।
  • শৃঙ্খলাবোধের বিকাশ: সমগ্র শিক্ষাপদ্ধতিতে শিষ্যদের কঠোর কৃচ্ছসাধন করতে হত যা তাদের মধ্যে আত্মপ্রত্যয় সৃষ্টি করত।
  • সামাজিক বোধ ও নৈতিক শিক্ষা: শিক্ষার্থীদের ধৈর্য, সততা, শ্রদ্ধাবোধ প্রভৃতি জাগরণের মাধ্যমে তাদের নৈতিক শিক্ষাদান ও সামাজিক বোধ জাগরণ এই শিক্ষার লক্ষ্য।
  • বাস্তবিক জ্ঞান লাভ: শিক্ষার্থীদের বাস্তব সম্পর্কে জ্ঞান দেওয়া এই শিক্ষার অন্যতম লক্ষ্য। যেমন- বিজ্ঞান, শিল্প, কলা, গার্হস্থ্যজীবন সম্পর্কে জানা ইত্যাদি।

আত্মনিয়ন্ত্রণ: এই শিক্ষাব্যবস্থা শিক্ষার্থীদের আত্মনিয়ন্ত্রিত করতে সাহায্য করে। শিক্ষার্থীদের জীবনের প্রকৃত অর্থ উপলব্ধি করতে সাহায্য করে।

আরও পড়ুন – বিকাশের স্তরসমূহ প্রশ্ন উত্তর

Leave a Comment