কৈশোরের ছেলেমেয়েদের চাহিদাপূরণের জন্য বিদ্যালয় তথা শিক্ষক-শিক্ষিকা ও বাবা-মায়ের ভূমিকা কেমন হওয়া উচিত, লেখো
কৈশোরের চাহিদাপূরণে বিদ্যালয় এবং পরিবারের ভূমিকা
জীবনবিকাশের স্তরগুলির মধ্যে বয়ঃসন্ধিকাল খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি স্তর। কৈশোরের চাহিদাপূরণে শিক্ষক-শিক্ষিকা এবং পিতা-মাতার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকাগুলি হল নিম্নরূপ।
(1) যৌন চাহিদা: কৈশোরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ চাহিদাটি হল যৌন চাহিদা। এই চাহিদাজনিত সমস্যাসমাধানের জন্য শিক্ষক-শিক্ষিকা এবং পিতা- মাতাকে সহানুভূতিশীল এবং বন্ধুস্থানীয় হতে হবে। তাঁরা যৌন পরিণমনের স্বাভাবিক পরিণতি সম্পর্কে বিজ্ঞানসম্মত ব্যাখ্যা দান করবেন। সেই সঙ্গে বিদ্যালয় পাঠক্রমে যৌন শিক্ষাকে (Sex Education) স্থান দিতে হবে।
(2) স্বাধীনতা ও আত্মপ্রকাশের চাহিদাপূরণ: স্বাধীনতা ও আত্মপ্রকাশের চাহিদার দরুন তারা বিভিন্ন সৃজনাত্মক কাজে অংশগ্রহণ করে তাদের প্রতিভা সকলের সামনে মেলে ধরতে চায়। এই ব্যাপারে পিতা-মাতাদের যেমন সজাগ থাকতে হবে, তেমনই বিদ্যালয়ে শিক্ষক-শিক্ষিকাদেরও বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান যেমন- অভিনয়, নাচ, গান, আঁকা, সাহিত্য রচনা ইত্যাদিরও ব্যবস্থা করতে হবে।
(3) প্রাক্ষোভিক চাহিদা: এই বয়সের শিক্ষার্থীরা খুব আবেগতাড়িত হয় এবং প্রাক্ষোভিক দিক থেকে খুবই স্পর্শকাতর হয়। তাই পিতা-মাতা এবং শিক্ষক-শিক্ষিকার কাজ হল সবসময় তাদের অতিরিক্ত শাসন না করে ধর্ম ও সমবেদনার সঙ্গে তাদের সমস্যাগুলি শোনা এবং সুষ্ঠু সমাধানের পথ রচনা করা। এক্ষেত্রে শিক্ষক হবেন ‘Friend-Philosoper and Guide’.
(4) দৈহিক চাহিদাপূরণ: এই বয়সের দৈহিক পরিবর্তন কিশোর- কিশোরীদের নতুনত্বের স্বাদ আনে এবং অজানাকে জানার আকাঙ্ক্ষা প্রকট করে। এই বয়সে তারা আত্মসচেতন, আত্মসক্রিয় হতে চায় এবং সকলের সামনে নিজেকে তুলে ধরতে চায়, আকর্ষণীয় করে তুলতে চায়, দৈহিক উৎকর্ষ সাধনের এই চাহিদাকে পরিতৃপ্ত করার জন্য বিদ্যালয়ে খেলাধুলা, ব্যায়াম, শরীরচর্চা, NCC প্রভৃতি সহপাঠক্রমিক কার্যাবলির ব্যবস্থা রাখতে হবে। তবেই তাদের নিরাপত্তাজনিত অভাব দূর হবে এবং দৈহিক চাহিদাপূরণ হবে।
(5) জ্ঞানের চাহিদাপূরণ: এই বয়সি শিক্ষার্থীদের কৌতূহল ও জ্ঞানের চাহিদা পরিতৃপ্তির জন্য পিতা-মাতা এবং শিক্ষক-শিক্ষিকারা বিরক্ত না হয়ে বিষয়জ্ঞানের পাশাপাশি বিষয় বহির্ভূত নতুন নতুন জ্ঞানের সন্ধান দেবেন। তাদের জ্ঞানপিপাসু মনোভাবকে বাঁচিয়ে রাখবেন।
(6) নৈতিক চাহিদাপূরণ: নৈতিক চাহিদাপূরণের জন্য পিতা-মাতা ও শিক্ষক-শিক্ষিকাদের আচরণ সংযত করতে হবে এবং বিদ্যালয়ে নীতিবোধ জাগ্রত করার জন্য উপযুক্ত বইয়েরও ব্যবহার করবেন শিক্ষক-শিক্ষিকারা।
(7) সামাজিক চাহিদাপূরণ: সামাজিক চাহিদাপূরণের জন্য বিদ্যালয়ে কিশোর-কিশোরীদের বিভিন্ন সমাজসেবামূলক কাজে অংশগ্রহণের সুযোগ করে দিতে হবে। যেমন-রক্তদান শিবির, সাক্ষরতা অভিযান ইত্যাদি।
(৪) যূথবদ্ধতার চাহিদাপূরণ: যূথবদ্ধতার চাহিদাপূরণের জন্য বাবা-মায়েরাও ছেলেমেয়েদের তার বন্ধুদের সঙ্গে মেলামেশার সুযোগ করে দেবেন। বিদ্যালয়েও শিক্ষার্থীরা যাতে দলবদ্ধভাবে খেলতে পারে ও কাজ করতে পারে তার ব্যবস্থা করবেন শিক্ষক-শিক্ষিকারা।
(9) জীবনাদর্শের চাহিদাপূরণ: জীবনাদর্শের চাহিদাপূরণের জন্য বিদ্যালয়ে শিক্ষক-শিক্ষিকারা ছাত্রছাত্রীদের বিভিন্ন মহাপুরুষের জীবনী পাঠ করতে দিতে পারেন।
(10) বয়ঃসন্ধিকালে শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন পরিবর্তন সম্পার্ক সচেতন করা : বয়ঃসন্ধিকালের যৌন পরিবর্তন, মানসিক পরিবর্তন ইত্যাদি বিষয়গুলি সম্পর্কে বাবা-মা ও শিক্ষক-শিক্ষিকারা ছেলেমেয়েদের সচেতন করবেন।