কিন্ডারগার্টেন বলতে কী বোঝায়? কিন্ডারগার্টেন বিদ্যালয়ের পাঠক্রম কীরূপ তা লেখো

কিন্ডারগার্টেন বলতে কী বোঝায়? কিন্ডারগার্টেন বিদ্যালয়ের পাঠক্রম কীরূপ তা লেখো

কিন্ডারগার্টেন

উনবিংশ শতকে বিখ্যাত দার্শনিক ফ্রয়েবেল প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষায় ‘কিন্ডারগার্টেন পদ্ধতি’ প্রবর্তন করেন। ‘কিন্ডারগার্টেন’ শব্দটি একটি জার্মান শব্দ, যার অর্থ হল ‘শিশু উদ্যান’ বা ‘বাচ্চাদের জন্য বাগান’। এই শিশু উদ্যানে শিক্ষার্থীদের চারাগাছ এবং শিক্ষকদের তিনি বাগানের মালি হিসেবে বিবেচনা করেছেন।

কিন্ডারগার্টেন বিদ্যালয়ের পাঠক্রম

(1) মাতৃভাষার ব্যবহার: প্রাক্-প্রাথমিক স্তরে মাতৃভাষার মাধ্যমে শিক্ষা অর্জন করলে সেই শিক্ষার মাধ্যমে ভাবপ্রকাশের রীতি অনেক সহজ ও সরল হয়। অন্তর্নিহিত অভিনবত্ব মাতৃভাষার মাধ্যমে সুন্দরভাবে প্রকাশ পায়। ফ্রয়েবেলের মতে, তাই শিশুকে মাতৃভাষার মাধ্যমে শিক্ষাদান করাই শ্রেয়।

(2) গণিত শিক্ষা: গণিত শিক্ষার ক্ষেত্রে সহজে গণনার জন্য এখানে ‘Abacus’ -এর মাধ্যমেও শিক্ষা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।

(3) প্রকৃতি পর্যবেক্ষণ (Nature Study): প্রকৃতি পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে শিশুর মধ্যে অন্তর্দর্শন জেগে ওঠে। প্রকৃতি পর্যবেক্ষণের মাধ্যমেই শিশু পরবর্তীকালে তার নিজের জীবনের অর্থ খুঁজে পায়।

(4) অঙ্কন: শিশুর বিচারশক্তি এবং মানসিক দক্ষতা ও ক্ষমতার বিকাশের জন্য ফ্রয়েবেল অঙ্কনের উপর গুরুত্ব দিয়েছেন। এর মাধ্যমে শিশুর সৃজনশীলতা ও সৌন্দর্যবোধের বিকাশ ঘটে। 

(5) খেলার মাধ্যমে শিক্ষাদান: খেলা হল শিশুর সহজাত প্রবৃত্তি। এর মাধ্যমে পারস্পরিক সহযোগিতা গড়ে ওঠে। ফ্রয়েবেল-এর মতে, খেলা হল মানুষের পবিত্রতম, আধ্যাত্মিক কার্যাবলি। এই কারণে ফ্রয়েবেল প্রথম খেলার মাধ্যমে শিক্ষাদানের কথা বলেছেন, যাতে শিশুরা আনন্দ সহকারে পুরো বিষয়টি সম্পর্কে শিক্ষাগ্রহণ করতে পারে।

(6) নান্দনিক বিষয়: নাচ, গান, নাটক, ছড়া, অভিনয় প্রভৃতি বিষয়ের মাধ্যমে শিশুরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে বিশ্বজগতের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করতে পারবে। 

(7)  হ্যাভর কাজের মূল্য: ফ্রয়েবেল মনে করতেন মাটি দিয়ে বস্তু গঠনের দ্বারা শিশুর আত্মসক্রিয়তা বৃদ্ধি করা যায়। তাই তিনি বিভিন্ন মাটির জিনিস তৈরিকেও পাঠক্রমের মধ্যে স্থান দিয়েছেন।

(8) পঠন: ফ্রয়েবেল লেখার থেকেও রঙিন বিষয় উপস্থাপনের মাধ্যমে পড়ার উপর বেশি গুরুত্ব আরোপ করেছেন। তাই কিন্ডারগার্টেন স্কুলগুলিতে সুর করে কবিতাপাঠ, বিভিন্ন ছন্দের কবিতা ও তার সঙ্গে হাত, পা নেড়ে বিভিন্ন ভঙ্গিমার মাধ্যমে পঠনপাঠনের ব্যবস্থা আছে ।

(9) লিখন: ফ্রয়েবেল মনে করেন পঠনের পাশাপাশি লিখনও শিশুর ক্ষেত্রে বিশেষ উপকারী। অক্ষরের আকৃতি জ্ঞান শিশুরা সেই বস্তুগুলির মাধ্যমে অর্জন করে, শেষে ওই আকৃতিগুলি তারা খাতায় লিখে অনুশীলন করলেই লিখন সম্পর্কে ধারণা গড়ে ওঠে।

(10) নৈতিক শিক্ষা: নৈতিক শিক্ষাদানের জন্য কিন্ডারগার্টেন বিদ্যালয়ে নানারকম নীতিশিক্ষা গল্পের কথা ফ্রয়েবেল বলেছেন। যেমন- জাতকের গল্পের কথা, বিখ্যাত মনীষীদের গল্প শিশুদের মানসিকতা যেমন-সুন্দরভাবে গড়ে তোলে, তেমনই চারিত্রিক দিককে দৃঢ় করে তোলে।

আরও পড়ুন – আজব শহর কলকেতা প্রশ্ন উত্তর

Leave a Comment