উনিশ শতকের প্রথমার্ধে ধর্মসংস্কারে রামমোহন রায়ের ভূমিকা উল্লেখ করো

উনিশ শতকের প্রথমার্ধে ধর্মসংস্কারে রামমোহন রায়ের ভূমিকা উল্লেখ করো

উনিশ শতকের প্রথমার্ধে ধর্মসংস্কারে রামমোহন রায়ের ভূমিকা উল্লেখ করো
উনিশ শতকের প্রথমার্ধে ধর্মসংস্কারে রামমোহন রায়ের ভূমিকা উল্লেখ করো

ধর্মসংস্কার

(1) আত্মীয়সভা প্রতিষ্ঠা: 1815 সালে রামমোহন কলকাতায় আত্মীয়সভা গঠন করেন এবং বেদান্ত গ্রন্থ প্রকাশ করেন। এখানে ধর্মীয় সংগীত গাওয়া হত এবং হিন্দুশাস্ত্র পাঠ করা হত। আর সমাজের বিভিন্ন কুপ্রথা যেমন- সতীদাহপ্রথা, জাতিভেদ প্রথা, বহুবিবাহ ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা হত। এই সভার সদস্যদের মধ্যে উল্লেযোগ্য ছিলেন দ্বারকানাথ ঠাকুর, প্রসন্নকুমার ঠাকুর, নন্দকিশোর বসু, রামচন্দ্র বিদ্যাবাগীশ প্রমুখ ব্যক্তি।

(2) এ্যাকশ্বরবাদী ধর্মের পুনরুজ্জীবন : রামমোহন ধর্মীয় কুসংস্কার ও মূর্তিপুজোর ঘোর বিরোধী ছিলেন এবং তিনি বেদান্তের উপর ভিত্তি করে একেশ্বরবাদী পুনরুজ্জীবন সাধন করতে চেয়েছিলেন। 1825 সালে অদ্বৈতবাদ প্রচারের জন্য তিনি বেদান্ত কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন। 1803 সালে বহুদেববাদের বিরুদ্ধে এবং একেশ্বরবাদের সমর্থনে ফরাসি ভাষায় তিনি একটি পুস্তিকা রচনা করেন। তার নাম তুহফৎ-উল-মুয়াহিদ্দিন বা একেশ্বরবাদীদের প্রতি। কেবলমাত্র তাই নয়- তিনি বাংলা ভাষায় বেদান্তের ভাষ্য রচনা করেন এবং ঈশ, মঠ, কেন, মণ্ডুক, মাণ্ডুক্য প্রভৃতি পাঁচটি প্রধান উপনিষদের বাংলা অনুবাদ করে তিনি তাঁর মতবাদ প্রচারে ব্রতী হন।

(3) ব্রাত্মসভা প্রতিষ্ঠা: উপনিষদকে ভিত্তি করে তিনি ব্রাহ্মসমাজ নামক একটি একেশ্বরবাদী ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান প্রবর্তন করেন (আগস্ট 1828 সাল)। এটি 1830 সালে ‘ব্রাহ্মসমাজ’-এ পরিণত হয়। এর উদ্দেশ্য ছিল পৌত্তলিকতাবাদ পরিহার করে নিরাকার পরম ব্রত্মের উপাসনা করা। ব্রাহ্মসমাজে নারী-পুরুষ সমান অধিকার ভোগ করত। এখানে স্ত্রীশিক্ষা ছিল অবাধ। ধর্মীয় সংস্কারের বিষয়ে রামমোহনের উপরোক্ত বর্ণনা থেকে এটি বলা যায় যে, সাধারণ ব্রাহ্মসমাজ তিনি কেবলমাত্র যথার্থ হিন্দুধর্মের পুনঃপ্রতিষ্ঠাই করেননি, খ্রিস্টান মিশনারিদের আক্রমণের হাত থেকেও হিন্দুধর্মকে রক্ষা করেছেন। ব্রাহ্মসমাজ ছিল একটি অসাম্প্রদায়িক প্রতিষ্ঠান। হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান- সকল ধর্মের মানুষের জন্যই এর দ্বার উন্মুক্ত ছিল। এ ছাড়াও রামমোহন রায় খ্রিস্টধর্মের ত্রুটিবিচ্যুতি নিয়েও মতামত প্রকাশ করেছেন। সমস্ত প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে ধর্ম সম্পর্কে রাজা রামমোহনের সংস্কারমূলক মনোভাব আজও আমাদের চলার পথ দেখায়।

আরও পড়ুন – মধ্যযুগীয় ভারতের শিক্ষা প্রশ্ন উত্তর

Leave a Comment