উড-এর ডেসপ্যাচের পটভূমি আলোচনা করো

উডের ডেসপ্যাচের পটভূমি
(1) 1813 সালের সনদ আইন: 1813 সালের সনদ আইন বা চার্টার অ্যাক্টের মাধ্যমে ভারতে সরকারিভাবে শিক্ষাবিস্তারের নীতি গৃহীত হয়। বার্ষিক এক লক্ষ টাকা সরকারি অর্থ এইসময় থেকে শিক্ষাখাতে ব্যয় করার সিদ্ধান্ত ঘোষিত হয়। ভারতের শিক্ষাকে আরও সম্প্রসারিত করার উদ্দেশ্যে সরকারি-বেসরকারি, মিশনারিদের সক্রিয় উদ্যোগে শিক্ষাবিস্তারের কাজ শুরু হয়। 1823 সালে প্রতিষ্ঠিত GCPI বা জনশিক্ষা কমিটি এই শিক্ষাবিস্তারের প্রক্রিয়াকে আরও সুসংহত রূপ দেয়।
(2) মেকলের প্রতিবেদন: ভারতের শিক্ষাখাতে বরাদ্দ অর্থ প্রাচ্য না পাশ্চাত্য এই দুইয়ের মধ্যে কোল্টির জন্য ব্যয় করা হবে, তা নিয়ে ক্রমাগত দ্বন্দ্ব চলতে থাকে। এই দ্বন্দ্বের অবসান ঘটাতে 1835 সালের 2 ফেব্রুয়ারি লর্ড উইলিয়াম বেন্টিষ্কের আইন পরিষদের সদস্য মেকলে তাঁর বিখ্যাত প্রতিবেদন বা মিনিট পেশ করেন। মেকলে তাঁর প্রতিবেদনে দেশীয় শিক্ষাকে উপেক্ষা করে পাশ্চাত্য সাহিত্য, জ্ঞান-বিজ্ঞান, ইংরেজি ভাষা শিক্ষাকে সর্বাপেক্ষা উৎকৃষ্ট বলে উল্লেখ করেন। এই প্রস্তাব অনুযায়ী ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষাবিস্তারের জন্য সরকারি অর্থ বরাদ্দ করা হবে বলে স্থির করা হয়।
(3) পার্লামেন্টারি এলাকায়্যারি কমিটি গঠন: প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য দ্বন্দ্ব ও তার পরবর্তী পর্যায়ে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণের পর ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সদস্যরা ভারতে তাদের রাজনৈতিক ক্ষমতা বিস্তারের প্রয়োজনে একটি সুসংগঠিত শিক্ষাব্যবস্থা গঠনের বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করে। ইতিমধ্যে 1853 সালে সনদ আইনের নবীকরণের সঙ্গে সঙ্গে ভারতবর্ষের শিক্ষানীতির ভিত্তি রচনা ও শিক্ষা প্রসারের উদ্দেশ্যে বেশ কয়েকজন অভিজ্ঞ ব্রিটিশ কর্মীদের নিয়ে একটি পার্লামেন্টারি এনকোয়্যারি কমিটি গঠন করা হয়।
(4) উড-এর ডেসপ্যাচের রচনা: পার্লামেন্টারি এনকোয়্যারি কমিটির ভিত্তিতে 1854 সালে বোর্ড অফ কন্ট্রোলের সভাপতি স্যার চার্লস উডের নির্দেশে ভারতবর্ষের শিক্ষা সংক্রান্ত যে দলিল প্রকাশিত হয়, তা ইতিহাসে উডের ডেসপ্যাচ বা উডের প্রতিবেদন নামে পরিচিত হয়। পরিশেষে বলা যায়, ভারতের শিক্ষাসংস্কারের ইতিহাসে উডের ডেসপ্যাচ-ই একটি সুসংগঠিত ও সুবিন্যস্ত শিক্ষা কাঠামোর ভিত্তি রচনা করেছিল। কলকাতা, বোম্বাই ও মাদ্রাজ অর্থাৎ ভারতের তিনটি প্রেসিডেন্সি – শহরে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের সুপারিশ এবং উড-এর প্রতিবেদনের অন্যান্য সুপারিশগুলি ভারতের শিক্ষার ইতিহাসে এক নবযুগের সূচনা করে।
আরও পড়ুন – মধ্যযুগীয় ভারতের শিক্ষা প্রশ্ন উত্তর