সরকারের বিভিন্ন রূপ প্রশ্ন উত্তর (Marks 2) | Class 11 Second Semester WBCHSE

সরকারের বিভিন্ন রূপ প্রশ্ন উত্তর

সরকারের বিভিন্ন রূপ প্রশ্ন উত্তর
সরকারের বিভিন্ন রূপ প্রশ্ন উত্তর

১। প্রাযুক্তিক কর্তৃত্ববাদ সম্পর্কে সংক্ষেপে লেখো।

প্রাযুক্তিক কর্তৃত্ববাদ

সূচিপত্র

বর্তমানে উচ্চ আধুনিক প্রযুক্তির সাহায্যে আধুনিক কর্তৃত্ববাদী শাসকগণ জনগণের উপর নিয়ন্ত্রণ কায়েম করে থাকেন। এক্ষেত্রে শাসক সোশ্যাল মিডিয়ায় নজরদারি (Surveillance) চালানো, সরকারবিরোধী যে-কোনো তথ্যকে সেন্সর করা, সরকারের বিপক্ষে যে- কোনোরকম প্রচারের উপর নিষেধাজ্ঞা (Censor) আরোপ করা, তথ্যের কারচুপি করার মতো ইত্যাদি মাধ্যমকে ব্যবহার করে থাকেন।

এ ছাড়া বেশ কিছু ক্ষেত্রে আর্থিক অগ্রগতি ও বিকাশের মডেলকে সামনে রেখে শাসকরা কর্তৃত্ববাদী নিয়ন্ত্রণের ন্যায্যতা প্রমাণের চেষ্টা করেন। উভয় ক্ষেত্রেরই প্রকৃষ্ট উদাহরণ হল গণপ্রজাতন্ত্রী চিন। একদিকে চিন যেমন তার নাগরিকদের উপর কড়া নজরদারি চালায়, তেমনি দ্রুত আর্থিক উন্নয়নের নামে একদলীয় কমিউনিস্ট দলের কর্তৃত্ব স্থাপন করে।

২। জনপ্রিয় কর্তৃত্ববাদ বলতে কী বোঝো?

জনপ্রিয় কর্তৃত্ববাদ

 জনপ্রিয় কর্তৃত্ববাদ বা ‘Populist Authoritarianism’ হল কর্তৃত্ববাদের এক নবতম সংযোজন। এ হল কর্তৃত্ববাদী নেতৃত্বের সমর্থন বৃদ্ধি করার নবতম কৌশল। কর্তৃত্ববাদী জনপ্রিয় নেতারা গণতান্ত্রিক কাঠামোয় নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসেন। ক্ষমতায় এসে সেই নেতৃত্ব আর্থিক বিকাশ ও জনগণের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নকে উপেক্ষা করেন। তবে গরিব, শ্রমজীবি মানুষের জন্য অর্থনৈতিক সুযোগসুবিধা প্রদানের মাধ্যমে জনপ্রিয়তা অর্জনের পথ প্রশস্ত করেন। জনপ্রিয় কর্তৃত্ববাদী নেতারা ক্ষমতায় এসে প্রথমেই গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলি যেমন- বিরোধী দল, স্বাধীন ও নিরপেক্ষ গণমাধ্যম, বিচারব্যবস্থা, পৌর বা নাগরিক সমাজ ইত্যাদির উপর নানান বিধিনিষেধ আরোপ করে, এদের কাজকর্মকে নিজের কর্তৃত্বের হুগো শ্যাভেজ নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসে। উদাহরণস্বরূপ, ভেনেজুয়েলার হুগো শ্যাভেজ (Hugo Chavez)-এর শাসনের কথা উল্লেখ করা যায়।

৩। কর্তৃত্ববাদের প্রধান লক্ষ্য কী? সংক্ষেপে কর্তৃত্ববাদী শাসকের প্রকৃতি উল্লেখ করো।

কর্তৃত্ববাদের লক্ষ্য

কর্তৃত্ববাদী শাসনব্যবস্থায় শক্তিশালী কেন্দ্রীভূত শাসনের মাধ্যমে জনগণকে একত্রিত করা হয়। তা করার জন্য গণমাধ্যম ও গণসংগঠনগুলিকে ব্যবহার করে ব্যক্তিস্বাধীনতা খর্ব করে জনগণকে শাসন করা হয়।

কর্তৃত্ববাদী শাসকের প্রকৃতি

কর্তৃত্ববাদী শাসক হলেন চূড়ান্ত বা চরম ক্ষমতার অধিকারী এবং তিনিই হলেন সার্বভৌম। তিনি সর্বদিকে ক্ষমতা প্রয়োগ করে সমাজকে নিয়ন্ত্রণ করে থাকেন।

৪। কর্তৃত্ববাদী শাসনব্যবস্থায় গণমাধ্যমের ভূমিকা ব্যাখ্যা করো।

কর্তৃত্বমূলক শাসনব্যবস্থায় গণমাধ্যমের ভূমিকা

কর্তৃত্ববাদী শাসনব্যবস্থায় গণমাধ্যম বা মিডিয়ার উপর সরকারি নিয়ন্ত্রণ থাকে। এখানে গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক ব্যবস্থার মতো সংবাদপত্রের স্বাধীনতা থাকে না। জনমত গঠন, শাসনের বিষয়সূচি প্রচার ও ভিন্নমতের সমালোচনার উদ্দেশ্যে রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত গণমাধ্যম এবং প্রচারণাকে ব্যবহার করে। এক্ষেত্রে কর্তৃত্ববাদী নেতারা প্রায়শই সেন্সরশিপ, ভুল তথ্য এবং বিভ্রান্তমূলক প্রচারণাকে মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করেন।

৫। কর্তৃত্ববাদের বিভিন্ন রূপ বা প্রকারভেদ সম্পর্কে লেখো।

কর্তৃত্ববাদের প্রকারভেদ

কর্তৃত্ববাদি সরকার বা শাসনব্যবস্থার একটি রূপ হিসেবে আলোচিত হলেও এই শাসনব্যবস্থার বিভিন্ন রূপ বর্তমান। কর্তৃত্ববাদী শাসনব্যবস্থার রূপগুলি হল- সামরিক স্বৈরতন্ত্র, 12 একদলীয় শাসনতন্ত্র, ও ব্যক্তিতান্ত্রিক কর্তৃত্ববাদ, 4 রাজতন্ত্র, 5) মিশ্র কর্তৃত্ববাদ, 6 গোষ্ঠীতান্ত্রিক শাসন এবং 7 পরোক্ষ সামরিক শাসন।

৬। সামরিক স্বৈরতন্ত্র কাকে বলে? উদাহরণ দাও।

সামরিক স্বৈরতন্ত্র

সামরিক স্বৈরতন্ত্র হল কর্তৃত্ববাদের একটি ধরন। সামরিক স্বৈরতান্ত্রিক সরকার মূলত সামরিক বাহিনীর নেতা বা উচ্চপর্যায়ের কয়েকজন সামরিক পদাধিকারী ব্যক্তিদের নেতৃত্বে পরিচালিত হয়। সামরিক নেতারা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই অভ্যুত্থানের মাধ্যমে অসামরিক কর্তৃপক্ষের অপসারণ ঘটিয়ে ক্ষমতা দখল করেন এবং সামরিক জেনারেল বা উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা রাষ্ট্র তথা সরকারের প্রধান হিসেবে কাজ করে।

উদাহরণ

সামরিক কর্তৃত্ববাদের কয়েকটি উদাহরণ হল- মায়ানমারের সামরিক শাসন (১৯৬২-২০১১ সাল), (২০১১-২০২১ সাল), (২০২১ সাল-বর্তমান), চিলিতে জেনারেল অগাস্ট পিনোচ-এর নেতৃত্বাধীন সামরিক অভ্যুত্থান (১৯৭৩ খ্রি.)।

৭। সামরিক স্বৈরতন্ত্রের দুটি বৈশিষ্ট্য লেখো।

সামরিক স্বৈরতন্ত্রের দুটি বৈশিষ্ট্য হল-

① সামরিক নেতৃত্বের উপস্থিতি

এরূপ শাসনব্যবস্থায় সম্পূর্ণভাবে সামরিক কর্তৃপক্ষের আধিপত্য দেখা যায়। বিশেষত সামরিক জেনারেল বা উচ্চপদস্থ সামরিক নেতৃত্বের দ্বারা সরকার পরিচালিত হয়।

② বলপ্রয়োগের ব্যবহার

সামরিক শাসনব্যবস্থা সার্বিকভাবে বলপ্রয়োগের উপর নির্ভরশীল। এই ব্যবস্থায় রাষ্ট্র ও সমাজের উপর নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখার জন্য শাসক বলপ্রয়োগের উপর নির্ভর করে। পাশাপাশি বিরোধী কণ্ঠস্বর, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে দমনের উদ্দেশ্যে হিংসার প্রয়োগ করে থাকে।

৮। একদলীয় শাসনব্যবস্থা কাকে বলে? উদাহরণ দাও।

একদলীয় শাসনব্যবস্থা

প্রভাবশালী দলীয় শাসন হল কর্তৃত্ববাদী শাসনব্যবস্থার একটি রূপ, যেখানে একটি একক রাজনৈতিক দল সমগ্র ভূখণ্ডে আধিপত্য বিস্তার করে। এরূপ ব্যবস্থায় অপর কোনো রাজনৈতিক দলের অস্তিত্ব ও রাজনৈতিক প্রতিযোগিতাকে স্বীকার করা হয় না। তবে একদলীয় ব্যবস্থাতেও নিয়মিত নির্বাচন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে গণতন্ত্রের চেহারা তুলে ধরতে চায় ঠিকই, কিন্তু প্রভাবশালী দলই বিভিন্ন উপায়ে রাজনীতি-সহ সমাজ ও অর্থনীতিতে তার নিয়ন্ত্রণ অব্যাহত রাখে।

উদাহরণ

মূলত কমিউনিস্ট দেশগুলিতে এধরনের কর্তৃত্ববাদ দেখা যায়। গণপ্রজাতন্ত্রী চিনের কমিউনিস্ট দলের শাসন (১৯৪৯-বর্তমান পর্যন্ত)। রাশিয়ার ভ্লাদিমির পুতিনের শাসনকাল।

৯। একদলীয় শাসনব্যবস্থার দুটি বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করো।

এই শাসনব্যবস্থার মূল বৈশিষ্ট্যগুলি হল-

একক দলের প্রাধান্য

এই শাসনব্যবস্থার প্রধানতম বৈশিষ্ট্য হল জাতীয় রাজনীতিতে একটিমাত্র রাজনৈতিক দলের প্রাধান্য বিস্তার। রাজনৈতিক ক্ষেত্রে একটি দলই ধারাবাহিকভাবে সরকার গঠন এবং সরকারি ক্ষমতা ভোগদখল করে থাকে। বিরোধী দলের উপস্থিতি থাকলেও তা নামমাত্র। ফলে প্রাধান্যকারী দল বৃহৎ ব্যবধানে নির্বাচনে জয়লাভ সুনিশ্চিত করতে পারে।

রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের উপর নিয়ন্ত্রণ

প্রভাবশালী রাজনৈতিক দল রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান যথা- বিচার বিভাগ, সামরিক বাহিনী, পুলিশ, মিডিয়ার উপর উল্লেখযোগ্যভাবে নিয়ন্ত্রণ কায়েম করে এবং নিয়ন্ত্রণ কায়েমের মাধ্যমে নিজেদের স্বার্থরক্ষাকে সুনিশ্চিত করে।

.১০। ব্যক্তিকেন্দ্রিক কর্তৃত্ববাদের সংজ্ঞা দাও। এই ব্যবস্থার উদাহরণ দাও।

ব্যক্তিকেন্দ্রিক কর্তৃত্ববাদ

ব্যক্তিকেন্দ্রিক শাসন হল এমন এক ধরনের কর্তৃত্ববাদী শাসনব্যবস্থা, যেখানে যাবতীয় রাজনৈতিক ক্ষমতা একজন নেতার হাতে কেন্দ্রীভূত থাকে। এই শাসনব্যবস্থায় প্রায়শই শাসন, সমাজ, অর্থনীতি সকল দিকের উপর নেতার একাধিপত্য স্থাপিত হয় এবং ব্যক্তিকেন্দ্রিক সংস্কৃতি গড়ে ওঠে বলেই এই শাসনব্যবস্থাকে ব্যক্তিকেন্দ্রিক কর্তৃত্ববাদ বলা হয়। অন্য ভাষায় বলা যায়, এরূপ শাসনব্যবস্থায় যাবতীয় ক্ষমতা সরাসরি একজন ব্যক্তির কাছ থেকে প্রবাহিত হয় এবং প্রাথমিকভাবে ব্যক্তিগত ক্ষমতার উপর নির্ভর করে। একে অনেকে Patrimonialism বলেও অভিহিত করেছেন।

উদাহরণ

ব্যক্তিকেন্দ্রিক শাসনব্যবস্থার প্রকৃষ্ট উদাহরণ হল উত্তর কোরিয়ার শাসক কিম জং উন, যিনি যাবতীয় ক্ষমতার উপর নিরঙ্কুশ আধিপত্য বজায় রেখেছেন। এ ছাড়া ইরাকের সাদ্দাম হোসেন-এর চরম শাসন বা লিবিয়ায় গাদ্দাফি-র লৌহ মুষ্ঠির শাসনও উল্লেখযোগ্য।

১১। ব্যক্তিকেন্দ্রিক কর্তৃত্ববাদের দুটি বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করো।

ব্যক্তিকেন্দ্রিক শাসন তথা স্বৈরতন্ত্রকে কতকগুলি বৈশিষ্ট্য দ্বারা ব্যাখ্যা করা যায়। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য দুটি বৈশিষ্ট্য হল-

ক্ষমতার কেন্দ্রীকরণ

এরূপ শাসনব্যবস্থায় একজন ব্যক্তির হাতেই যাবতীয় ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত হয়। ব্যক্তিকেন্দ্রিক শাসনব্যবস্থায় সরকারের বিভিন্ন শাখা, রাজনৈতিক দল এবং অন্যান্য রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলি শাসকের শাসনকে বৈধতা প্রদানে সচেষ্ট থাকে।

ব্যক্তিকেন্দ্রিক সংস্কৃতির উদ্ভব

শাসনব্যবস্থার নামকরণ থেকেই স্পষ্ট প্রতীয়মান হয় যে, এই রূপ শাসনব্যবস্থা একজন ব্যক্তিকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে। তবে এক্ষেত্রে নেতাকে অবশ্যই সম্মোহনীমূলক ব্যক্তিত্বের অধিকারী হতে হয়। এই সরকারের নেতৃত্বকে অতিমানবীয় (Superhuman) হিসেবে মহিমান্বিত করা হয় এবং নেতার প্রতি প্রশ্নহীন আনুগত্যের উপর সর্বাধিক জোর দেওয়া হয়।

১২। রাজতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা বলতে কী বোঝো? এই ব্যবস্থার উদাহরণ দাও।

রাজতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা

 যখন রাজনৈতিক ক্ষমতা এক প্রজন্ম থেকে পরবর্তী প্রজন্মে উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত হয়, তখন তাকে রাজতান্ত্রিক কর্তৃত্ববাদ বলে। এরূপ ব্যবস্থায় যাবতীয় ক্ষমতা রাজার হাতে কেন্দ্রীভূত থাকে। সর্বোপরি, এই শাসনব্যবস্থায় শাসক কেবল একটি নির্দিষ্ট পরিবার (রাজ পরিবার) থেকেই বংশানুক্রমিকভাবে নিযুক্ত হন।

উদাহরণ

বর্তমানে সৌদি আরব, বুনেই, ওমান প্রভৃতি দেশে রাজতান্ত্রিক কর্তৃত্ববাদের অস্তিত্ব পরিলক্ষিত হয়। ১৯৩২ খ্রিস্টাব্দে সৌদি আরবে রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। বর্তমানে রাজা সালমন বিন আব্দুল্লাহজিজ দেশের উপর উল্লেখযোগ্য নিয়ন্ত্রণ কায়েম করেছেন। সুলতান তৃতীয় হাসানাল বলকিয়াহ্ ইবনি ওমর আলি সাইফুদ্দিন শাসন বিভাগীয় সকল শাখার উপর একচ্ছত্র আধিপত্য স্থাপন করেছেন।

১৩। রাজতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার দুটি বৈশিষ্ট্য লেখো।

উত্তর রাজতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার দুটি বৈশিষ্ট্য নিম্নরূপ-

বংশানুক্রমিক ব্যবস্থা

রাজতন্ত্রের সর্বপ্রধান বৈশিষ্ট্য হল বংশানুক্রমিকভাবে শাসকপদে অভিষিক্ত হওয়া। অর্থাৎ, ঐতিহ্যগতভাবে রাজপরিবারের সদস্যদের মধ্যে থেকে একজন বংশগত উত্তরাধিকারসূত্রে রাজা হিসেবে নিযুক্ত হন। সাধারণ পরিবার থেকে কেউ রাজা পদে নিযুক্ত হতে পারে না।

সীমিত রাজনৈতিক অংশগ্রহণ

রাজতান্ত্রিক ব্যবস্থায় যেহেতু শাসক নির্বাচনের কোনো ব্যাপার নেই, সেহেতু পৃথকভাবে নাগরিকদের রাজনৈতিক অধিকার স্বীকৃত হয় না। রাজার বিরোধিতা করার অধিকারও প্রায় নেই বললেই চলে। সুতরাং, এরূপ ব্যবস্থায় সাধারণত জনগণের রাজনৈতিক অংশগ্রহণের সীমিত সুযোগ পরিলক্ষিত হয়।

১৪। মিশ্র কর্তৃত্ববাদ কী? এই ব্যবস্থার উদাহরণ উল্লেখ করো।

মিশ্র কর্তৃত্ববাদ

মিশ্র কর্তৃত্ববাদ হল এমন এক রাজনৈতিক ব্যবস্থা, যা গণতন্ত্রের বৈশিষ্ট্যগুলির সঙ্গে কর্তৃত্ববাদের বৈশিষ্ট্যগুলির সংমিশ্রণ ঘটায়। এই ব্যবস্থা প্রতিযোগিতামূলক কর্তৃত্ববাদী শাসন নামেও পরিচিত। এরূপ শাসনব্যবস্থায় একদিকে গণতান্ত্রিক উপায়ে নির্বাচন, বহুদলীয় বা দ্বিদলীয় ব্যবস্থার উপস্থিতি পরিলক্ষিত হয়। অন্যদিকে, নির্বাচিত শাসকের কর্তৃত্ববাদী শাসন ও নিয়ন্ত্রণ বিদ্যমান থাকে।

উদাহরণ

প্লাদিমির পুতিনের নেতৃত্বাধীন রাশিয়া এবং হুগো শ্যাভেজের নেতৃত্বাধীন ভেনিজুয়েলা এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ।

১৫। মিশ্র কর্তৃত্ববাদী শাসনব্যস্থার দুটি বৈশিষ্ট্য লেখো।

মিশ্র কর্তৃত্ববাদী শাসনব্যবস্থার বৈশিষ্ট্য দুটি হল-

① নিয়মিত নির্বাচন: মিশ্র কর্তৃত্ববাদে নিয়মিত নির্বাচন প্রক্রিয়া অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে একাধিক রাজনৈতিক দল অংশগ্রহণ ও প্রতিযোগিতা করতে পারে। তবে নির্বাচন ব্যবস্থা অবাধ ও স্বাধীনভাবে পরিচালিত হয় না। ক্ষমতাসীন দল বা নেতা নিজেদের জয়কে সুনিশ্চিত করতে ভোটারদের ভীতি প্রদর্শন, মিডিয়া নিয়ন্ত্রণ, নির্বাচনি জালিয়াতি ইত্যাদি উপায় অবলম্বন করে থাকে।

② সীমিত রাজনৈতিক প্রতিযোগিতা: বিরোধী দল এবং প্রার্থীদের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার অনুমতি থাকলেও তারা বাধার সম্মুখীন হয়। যেমন- তাদের উপর আইনি বিধিনিষেধ আরোপিত হয়, ভীতি প্রদর্শন করা হয়, যা তাদের রাজনৈতিক স্বাধীনতা ও আচরণকে চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন করে তোলে।

১৬। গোষ্ঠীকেন্দ্রিক রাজনৈতিক ব্যবস্থা কী? এই ব্যবস্থার উদাহরণ দাও।

গোষ্ঠীকেন্দ্রিক রাজনৈতিক ব্যবস্থা

গোষ্ঠীকেন্দ্রিক বা অলিগার্কিক রাজনৈতিক ব্যবস্থা বলতে বোঝায়, যেখানে একটি ক্ষুদ্র অভিজাত গোষ্ঠীর ব্যক্তি, পরিবার অথবা সংস্থার হাতে যাবতীয় ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত থাকে। এইরূপ শাসনব্যবস্থা সম্পদ, সামরিক শক্তি, রাজনৈতিক প্রভাব বা সামাজিক মর্যাদা, রাষ্ট্র এবং রাষ্ট্রীয় সম্পদ ইত্যাদি একটি ছোটো গোষ্ঠীকে নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা প্রদান করে।

উদাহরণ: প্রাচীন গ্রিসের নগররাষ্ট্র স্পার্টায় এরূপ শাসনব্যবস্থার অস্তিত্ব ছিল।

১৭। গোষ্ঠীকেন্দ্রিক শাসনব্যবস্থার দুটি বৈশিষ্ট্য লেখো।

এই শাসনব্যবস্থার মূল দুটি বৈশিষ্ট্য হল-

ক্ষমতার কেন্দ্রীকরণ

গোষ্ঠীকেন্দ্রিক শাসনব্যবস্থায় রাষ্ট্রের যাবতীয় সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষমতা ব্যক্তিগোষ্ঠী বা কোনো অভিজাত পরিবারের হাতে কুক্ষিগত থাকে। ফলস্বরূপ, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই জাতীয় রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক সিদ্ধান্তগ্রহণ প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করা থেকে দেশের বৃহত্তম অংশ তথা জনগণকে বঞ্চিত করে রাখে।

সম্পদ ও প্রভাবের গুরুত্ব

অর্থনৈতিক সম্পদ এবং সামাজিক প্রভাবের কারণেই অভিজাতগোষ্ঠী ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে বা ধরে রাখতে সক্ষম হয়। সমাজে তাদের প্রভাব-প্রতিপত্তিই কর্তৃত্বের উৎস হিসেবে ভূমিকা পালন করে এবং জনগণকে অনুগত করে রাখতে সাহায্য করে।

১৮। পরোক্ষ সামরিক শাসনব্যবস্থা বলতে কী বোঝায়? এই শাসনব্যবস্থার উদাহরণ দাও।

পরোক্ষ সামরিক শাসন

পরোক্ষ সামরিক শাসন হল এক ধরনের কর্তৃত্ববাদী সরকার, যেখানে সামরিক বাহিনী আনুষ্ঠানিকভাবে শাসনকারী – কর্তৃপক্ষ না হলেও রাষ্ট্রের উপর উল্লেখযোগ্য প্রভাব বিস্তার করে। এই শাসনব্যবস্থায় সামরিক নেতারা বেসামরিক রাজনৈতিক নেতা এবং প্রতিষ্ঠানগুলিকে নিয়ন্ত্রণ করে এবং দৃঢ়ভাবে প্রভাবিত করে, পাশাপাশি সামরিক বাহিনী তাদের স্বার্থের নিরাপত্তাকেও সুনিশ্চিত করে।

উদাহরণ

পরোক্ষ সামরিক কর্তৃত্ববাদী শাসনের সর্বাপেক্ষা প্রকৃষ্ট উদাহরণ হল পাকিস্তান। পাকিস্তানে নিয়মিত নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলেও দেশের রাজনীতি সামরিক বাহিনীর অঙ্গুলিহেলনেই পরিচালিত হয়ে থাকে। এ ছাড়া থাইল্যান্ড, তুরস্কের মতো দেশেও এরূপ সামরিক প্রভাব পরিলক্ষিত হয়েছে।

১৯। পরোক্ষ সামরিক শাসনের দুটি বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করো।

পরোক্ষ সামরিক শাসনের প্রধান দুটি বৈশিষ্ট্য হল-

আনুষ্ঠানিক বেসামরিক সরকার

আনুষ্ঠানিকভাবে বেসামরিক সরকার যাবতীয় ক্ষমতা ভোগ করলেও বাস্তবে সকল রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান ও ক্ষমতা সামরিক বাহিনীর হাতে কুক্ষিগত থাকে, যে-কোনো জাতীয় নীতি সামরিক বাহিনীর স্বার্থের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হওয়া আবশ্যক। এমনকি সামরিক স্বার্থকে সুরক্ষিত করতে পারে এমন সব বেসামরিক রাজনৈতিক নেতৃত্বকে ক্ষমতায় নিয়োগ করা হয়ে থাকে।

জাতীয় নীতিতে সামরিক প্রভাব

জাতীয় নীতির উপর সামরিক বাহিনীর প্রভাব পরোক্ষ সামরিক শাসনব্যবস্থার অন্যতম বৈশিষ্ট্য। বিশেষত, জাতীয় নিরাপত্তা, প্রতিরক্ষা, অভ্যন্তরীণ স্থিতিশীলতা এবং কূটনৈতিক বা বৈদেশিক নীতি প্রণয়নের ক্ষেত্রে সামরিক বাহিনী সর্বাধিক প্রভাব বিস্তার করে থাকেন। এ ছাড়া জাতীয় অর্থনীতিতেও সামরিক বাহিনীর প্রভাব পরিলক্ষিত হয়।

২০। ডিজিটাল কর্তৃত্ববাদ বলতে কী বোঝো? ব্যাখ্যা দাও।

ডিজিটাল কর্তৃত্ববাদ

ডিজিটাল কর্তৃত্ববাদ হল একুশ শতকের কর্তৃত্ববাদের সর্বাধুনিক সংযোজন। আধুনিক তথ্য প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করে কর্তৃত্ববাদী শাসনকে টিকিয়ে রাখার এক নয়া কৌশল। দৃষ্টান্ত স্বরূপ শি জিনপিং (Xi Jinping)-এর চিনের কথা বলা যায়। খুব কম দেশই চিনের মতো প্রযুক্তিগতভাবে উন্নত। ফলে খুব কম সংখ্যক দেশ ডিজিটাল কর্তৃত্ববাদী ব্যবস্থা বজায় রাখতে সক্ষম হয়। ২০০২ সালের শুরুতে চিন ডিজিটাল কর্তৃত্ববাদকে কাজে লাগিয়ে নাগরিকদের তথ্য অ্যাক্সেস করার স্বাধীনতার উপরে নিয়ন্ত্রণ আরোপ করে। একে চিনের গ্রেট ফায়ারওয়াল (Great Firewall) বলা হয়। চিনের গ্রেট ফায়ারওয়াল-এর মাধ্যমে চিন সরকার ইন্টারনেটে সেন্সরশিপ ও নজরদারির ব্যবস্থা করে। এর মাধ্যমে রাজনৈতিকভাবে সংবেদনশীল বা ক্ষতিকারক বলে বিবেচিত কিছু বিদেশি ওয়েবসাইট, সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এবং অনলাইন তথ্য অ্যাক্সেসকে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়।

২১। কর্তৃত্ববাদের দুটি সুবিধা বা গুণ লেখো।

কর্তৃত্ববাদী সরকার একচেটিয়া ও নিরঙ্কুশ আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করার জন্য বহুল সমালোচিত হলেও শাসনের একটি রূপ হিসেবে কর্তৃত্ববাদী সরকারের বেশ কিছু সুবিধা রয়েছে, যেগুলিকে অস্বীকার করা যায় না। এই সুবিধাগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য দুটি সুবিধা হল নিম্নরূপ-

① দ্রুত সিদ্ধান্তগ্রহণের সক্ষমতা

জরুরি বিষয়ে সিদ্ধান্তগ্রহণের ক্ষেত্রে গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা অপেক্ষা কর্তৃত্ববাদী শাসনব্যবস্থায় দ্রুত সিদ্ধান্তগ্রহণ করা সম্ভব। কারণ, কর্তৃত্ববাদী শাসনে দীর্ঘ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার প্রয়োজন হয় না। দেশে কোনোরকম আপৎকালীন অবস্থা, প্রাকৃতিক বিপর্যয় বা সংকট পরিস্থিতি উপস্থিত হলে তা মোকাবিলা করার জন্য কর্তৃত্ববাদী প্রশাসন দ্রুত সিদ্ধান্তগ্রহণ করতে সক্ষম।

② রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা

কর্তৃত্ববাদে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বা স্থায়িত্ব অধিক পরিলক্ষিত হয়। এ ধরনের রাজনৈতিক ব্যবস্থায় যেহেতু বিরোধী মতের অস্তিত্ব থাকে না, নিয়মিত নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় না, সেহেতু দ্রুত এবং ঘনঘন সরকার পরিবর্তনের সুযোগ থাকে না, পরিবর্তে কর্তৃত্ববাদী শাসনব্যবস্থায় একটি স্থায়ী সরকার গড়ে ওঠে। এ কারণেই এখানে রাজনৈতিক অস্থিরতা পরিলক্ষিত হয় না।

২২। কর্তৃত্ববাদী শাসনব্যবস্থার দুটি অসুবিধা বা ত্রুটি লেখো।

কর্তৃত্ববাদী শাসনব্যবস্থার একাধিক ত্রুটি বিদ্যমান। এর মধ্যে দুটি ত্রুটি হল-

① স্বাধীনতার অভাব

কর্তৃত্ববাদী ব্যবস্থায় জনগণ খুবই সীমিত পৌর ও রাজনৈতিক স্বাধীনতার অধিকার ভোগ করে। মতামত প্রকাশের স্বাধীনতা, সমবেত হওয়ার অধিকার ইত্যাদি নাগরিকদের প্রায় থাকে না বললেই চলে। কেবল সীমিত স্বাধীনতা ভোগ করা নয়, এরূপ শাসনব্যবস্থায় ব্যাপক পরিমাণ নাগরিকদের মানবাধিকারও লঙ্ঘিত হয়। বিশেষত, বিরোধী নেতৃবর্গ, সাংবাদিক, রাজনৈতিক প্রতিবাদীরা বিভিন্ন প্রকার হয়রানি ও ভীতির সম্মুখীন হয়, যা ব্যক্তির জীবনের অধিকারকে (Right to Life) লঙ্ঘন করে।

② দুর্নীতি

কর্তৃত্ববাদে ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণের কোনোরূপ স্থান নেই। একজন শাসক বা কতিপয় শাসকবর্গের হাতে ক্ষমতার কেন্দ্রীকরণ হওয়ায় এবং শাসন সংক্রান্ত কাজকর্মের জন্য জনগণের প্রতি দায়বদ্ধতার অভাবে কর্তৃত্ববাদী প্রশাসনে দুর্নীতি পরিলক্ষিত হয়। এইরূপ শাসনব্যবস্থায় শাসকই যেহেতু সর্বেসর্বা, সেহেতু শাসকপক্ষকে তাদের কোনো কাজের জন্যই জনগণের কাছে জবাবদিহি করতে হয় না, যা দুর্নীতির সুযোগকে বহুগুণ বৃদ্ধি করে। এই দুর্নীতি জনজীবনকে কলুষিত করে এবং জাতীয় অগ্রগতিকে ব্যাহত করে।

২৩। সর্বগ্রাসীবাদের সংজ্ঞা দাও।

সর্বগ্রাসীবাদ

সর্বগ্রাসীবাদ হল এমন এক রাজনৈতিক ব্যবস্থা, যেখানে রাষ্ট্র সাধারণত একটি একক দল বা স্বৈরশাসকের নেতৃত্বে সমাজের সমস্ত দিকের উপর সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রয়োগ করে। এই নিয়ন্ত্রণ সামাজিক, সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক এমনকি ব্যক্তিগত ক্ষেত্রগুলিকেও অন্তর্ভুক্ত করে। সর্বনিয়ন্ত্রণবাদী শাসনব্যবস্থা জনগণের উপর একটি অভিন্ন মতাদর্শ বা আদর্শকে বলপূর্বক আরোপ করে সামঞ্জস্যবিধানের চেষ্টা করে, যার একমাত্র উদ্দেশ্য হল বিরোধী রাজনৈতিক দল ও ভিন্নমতকে দমন করে রাজনৈতিক ক্ষেত্রে নিরঙ্কুশ প্রাধান্য স্থাপন করা। পাশাপাশি দেশের মানুষদের জীবন ও স্বাধীনতাকে নিয়ন্ত্রণে রাখা। এনসাইক্লোপেডিয়া ব্রিটানিকার সংজ্ঞা অনুসারে, সর্বগ্রাসীবাদ সরকারের এমন একটি রূপ, যা দেশের নাগরিকদের জীবনের উপরে সর্বাত্মক নিয়ন্ত্রণ কায়েম করতে চায়।

২৪। সর্বাত্মকবাদ বা সর্বগ্রাসীবাদের দৃষ্টান্ত উল্লেখ করো।

সর্বগ্রাসীবাদের দৃষ্টান্ত

দৃষ্টান্তস্বরূপ বলা যায়- নাৎসি জার্মানির কথা (১৯৩৩-১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দ)। অ্যাডলফ হিটলার (Adolf Hitler) নাৎসি জার্মানিতে জাতিগত মতাদর্শ, রাজনৈতিক বিরোধিতা দমন, মিডিয়া ও শিক্ষার রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে সর্বগ্রাসীবাদী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। ১৯২৪-১৯৫৩ খ্রিস্টাব্দে সোভিয়েত ইউনিয়নে জোসেফ স্তালিন (Joseph Stalin) ব্যাপক শুদ্ধিকরণ, রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত অর্থনীতি, জোরপূর্বক কৃষির সমষ্টিকরণ এবং কমিউনিস্ট পার্টির একচেটিয়া প্রাধান্য স্থাপনের মাধ্যমে সর্বনিয়ন্ত্রণবাদী রাষ্ট্র গড়ে তুলেছিলেন। চিনে ১৯৪৯-১৯৭৬ খ্রিস্টাব্দে মাও জে দং (Mao Zedong)-এর শাসনকালে সাংস্কৃতিক বিপ্লবের মাধ্যমে সর্বাত্মক রাষ্ট্র স্থাপনের পথকে প্রশস্ত করেছিলেন, ইতালিতে বেনিটো মুসোলিনিও (Benito Mussolini) ফ্যাসিবাদী আদর্শের মাধ্যমে এরূপ শাসনব্যবস্থা গড়ে তুলেছিলেন। এ ছাড়া নে উইন (Ne Win)-এর বার্মাও সর্বাত্মক শাসনের অন্যতম উদাহরণ। বর্তমানে সর্বগ্রাসীবাদের একটি প্রকৃষ্ট উদাহরণ হল কিম জং উন (Kim Jong Un)-এর উত্তর কোরিয়ার রাজনৈতিক ব্যবস্থা।

২৫। সর্বগ্রাসীবাদের উদ্ভবের পশ্চাতে দুটি কারণ ব্যাখ্যা করো।

সর্বগ্রাসী শাসনের উদ্ভবের পশ্চাতে দুটি কারণ হল-

রাজনৈতিক অস্থায়িত্ব

দেশের মধ্যে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতাই প্রধানত সর্বাত্মকবাদী শাসনব্যবস্থার জন্ম দেয়। দেশের অভ্যন্তরে যুদ্ধ পরিস্থিতি বা রাজনৈতিক উত্তেজনা, অর্থনৈতিক মন্দা, দুর্বল গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানের উপস্থিতি, দুর্নীতি, আইনের অনুশাসনের অভাব জনমনে গণতন্ত্রের প্রতি বিরাগ সৃষ্টি করে, যা সর্বগ্রাসী নেতার উত্থানের পথ প্রশস্ত করে। এইরূপ রাজনৈতিক অস্থিরতার পরিবেশে উগ্র মতাদর্শ বা সর্বাত্মকবাদী নেতারা কেন্দ্রীভূত নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে পরিস্থিতির মোকাবিলা করার প্রতিশ্রুতি প্রদান করে জনগণকে আকর্ষণ করেন এবং জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। যেমন- প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর অপমানজনক ভার্সাই সন্ধি (১৯১৯ খ্রিস্টাব্দ)-র প্রতিক্রিয়াস্বরূপ জার্মানিতে হিটলারের উৎপত্তি হয়েছিল।

রাজনৈতিক মেরুকরণ

সমাজে মতাদর্শ, জাতিসত্তা, ধর্ম বা শ্রেণিভিত্তিক বৈষম্যের উপর ভিত্তি করে যে বিভাজন গড়ে ওঠে, সর্বগ্রাসী শাসক নিজের ক্ষমতাকে কেন্দ্রীভূত করার স্বার্থে এবং যাবতীয় বিরোধী কণ্ঠস্বর ও ভিন্নমতকে দমন করার উদ্দেশ্যে বিভাজনগুলির বৃদ্ধি ঘটিয়ে রাজনৈতিক মেরুকরণ ঘটান, যা সর্বাত্মকবাদী রাষ্ট্রের উত্থানে সাহায্য করে।

আরও পড়ুন – মধ্যযুগীয় ভারতের শিক্ষা প্রশ্ন উত্তর

Leave a Comment