প্রাথমিক শিক্ষার পাঠক্রমের রূপরেখা দাও

প্রাথমিক শিক্ষার পাঠক্রমের রূপরেখা দাও

প্রথাগত শিক্ষার দ্বিতীয় স্তর হল প্রাথমিক শিক্ষা। শিক্ষার্থীর যখন 5-12 বছর বয়স হয়, তখন প্রাথমিক শিক্ষা অর্জন করে। প্রাথমিক শিক্ষার ব্যাপারে DPEP (District Primary Education Programme) নামক একটি সংস্থাও তৈরি হয়েছে।

প্রাথমিক শিক্ষার পাঠক্রম : কোঠারি কমিশন (1964-66 সাল) প্রাথমিক শিক্ষার পাঠক্রমকে দুটি ভাগে ভাগ করেছে। সেগুলি উল্লেখ করা হল-

(1) নিম্নপ্রাথমিক স্তরের পাঠক্রম (I-IV/V):

  • ভাষা শিক্ষা: এক্ষেত্রে বলা হয়েছে বাধ্যতামূলকভাবে মাতৃভাষা শিখতেই হবে। কোনো বিদেশি ভাষা পাঠক্রমে অন্তর্ভুক্ত করার কথা বলা হয়নি।
  • গণিত শিক্ষা: গণিত শিক্ষার মধ্যে যোগ, বিয়োগ, গুণ, ভাগ ইত্যাদির উপর জোর দেওয়া হয়েছে। কারণ বিভিন্ন কাজে গণিতের জ্ঞান অবশ্য প্রয়োজনীয়।
  • বিজ্ঞান ও পরিবেশ পরিচিতি: বিজ্ঞান ও পরিবেশ পরিচিতি সম্বন্ধিত স্বাস্থ্যাভ্যাস, গাছপালা, প্রকৃতি, নদনদী সম্বন্ধে জ্ঞান আহরণের ব্যবস্থা থাকবে।
  • সমাজবিজ্ঞান: সমাজবিজ্ঞানের মধ্যে আছে ইতিহাস ও ভূগোল। সমাজের রীতিনীতি, আচার-অনুষ্ঠান ইত্যাদি সম্পর্কে জানার জন্য এই জ্ঞান প্রয়োজন বলে কমিশন মনে করেছে।
  •  সৃজনাত্মক ও উৎপাদনমূলক কাজ: সৃজনাত্মক ও উৎপাদনমূলক কাজ যেমন-মাটি দিয়ে মডেল তৈরি, চিত্রাঙ্কন, কাগজের ফুল তৈরি ইত্যাদি কাজের উপর জোর দেওয়া হয়েছে এ ছাড়াও নাটক অভিনয়, তর্কবিতর্ক, আলোচনা সভা ইত্যাদি বিষয়কেও পাঠক্রমে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
  • খেলাধুলা ও শরীরচর্চা: খেলাধুলা ও শরীরচর্চার মাধ্যমে শিশু শিক্ষার্থীকে সুস্বাস্থ্যের অধিকারী করে তোলা।

(2) উচ্চপ্রাথমিক স্তরের পাঠক্রম (IV/ V-VII/VIII):

  • দুটি ভাষা হবে আবশ্যিক: দুটি ভাষা- মাতৃভাষা, হিন্দি বা ইংরেজি সম্পর্কে শিক্ষার্থীরা শিক্ষা অর্জন করবে। এ ছাড়াও তৃতীয় একটি ভাষাকে ঐচ্ছিক ভাষা হিসেবে নেওয়া যাবে-এ কথাও কমিশন বলে।
  • গণিত: প্রাথমিক স্তরে গণিতের মধ্যে পাটিগণিত, বীজগণিত ও জ্যামিতি শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে।
  • বিজ্ঞান: পঞ্চম শ্রেণিতে পদার্থবিদ্যা, ভূবিদ্যা, জীবনবিজ্ঞান, ষষ্ঠ শ্রেণির পাঠক্রমে পদার্থবিদ্যা, রসায়ন, জীবনবিজ্ঞান এবং সপ্তম শ্রেণিতে পদার্থবিদ্যা, জীবনবিজ্ঞান, রসায়ন এবং জ্যোতির্বিজ্ঞান থাকবে।
  • সমাজবিজ্ঞান: সমাজবিজ্ঞানের মধ্যে থাকবে ইতিহাস, ভূগোল এবং পৌরবিজ্ঞান।
  • শারীরশিক্ষা: এই স্তরে শিক্ষার্থীদের রুচি ও আগ্রহ অনুসারে খেলাধুলার ব্যবস্থা থাকবে।
  • নৈতিক ও আধ্যাত্মিক শিক্ষা: সপ্তাহে একটি বা দুটি পিরিয়ড নৈতিক ও আধ্যাত্মিক শিক্ষার জন্য নির্দিষ্ট থাকবে।

বৃত্তিগত শিক্ষার ব্যবস্থা: উচ্চপ্রাথমিক স্তরেও কর্ম-অভিজ্ঞতা ও সমাজসেবা থাকবে। এ ছাড়া আংশিক সময়ের জন্য বৃত্তিগত শিক্ষা বা বিকল্প শিক্ষার ব্যবস্থা পাঠক্রমে রাখার কথা বলা হয়েছে। উচ্চপ্রাথমিক স্তরে অভ্যন্তরীণ পরীক্ষার কথা বলা হয়েছে। প্রত্যেক শ্রেণির শেষে বাৎসরিক পরীক্ষা না নিয়ে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিকে একটি চক্র হিসেবে মনে করা হয়েছে এবং এই দুটো বছরের শেষে একটি পরীক্ষার সুপারিশ করা হয়েছে।

আরও পড়ুন – আজব শহর কলকেতা প্রশ্ন উত্তর

Leave a Comment