কৈশোরকালের প্রাক্ষোভিক ও সামাজিক বিকাশ সম্পর্কে লেখো

কৈশোরকালের প্রাক্ষোভিক ও সামাজিক বিকাশ সম্পর্কে লেখো

কৈশোরের প্রাক্ষোভিক বিকাশ

কৈশোরকালের প্রাক্ষোভিক বিকাশমূলক বৈশিষ্ট্যগুলি হল-

(1) সামঞ্জস্যের অভাব: প্রাক্ষোভিক প্রতিক্রিয়ায় সামঞ্জস্যের অভাবের দরুন কোনো পরিস্থিতিতে প্রক্ষোভমূলক আচরণ তীব্র আকার ধারণ করে আবার কোনো সময় প্রক্ষোভমূলক আচরণ একেবারেই দেখা যায় না।

(2) যৌন আচরণ : বিভিন্ন ধরনের যৌন আচরণের পরিপ্রেক্ষিতে লজ্জাবোধ, অপরাধবোধ, ভয় ইত্যাদি অনুভূতিগুলি নতুন মাত্রা লাভ করে।

(3) সেন্টিমেন্ট গঠন: কৈশোরকালের শেষ দিকে বিভিন্ন বিমূর্ত ধারণাকে কেন্দ্র করে ছেলেমেয়েদের মধ্যে নৈতিক সেন্টিমেন্ট গড়ে ওঠে। যেমন- বিদ্যালয়ের প্রতি সেন্টিমেন্ট।

(4) আচরণের প্রাধান্য: আশঙ্কাযুক্ত আচরণ, আক্রমণাত্মক মনোভাব ইত্যাদির প্রতি প্রাবল্য এই বয়সস্তরে দেখা যায়।

(5) বৈচিত্র্য: প্রাক্ষোভিক বৈশিষ্ট্যগুলির মধ্যে বৈচিত্র্য দেখা যায়। কৈশোরের বিভিন্ন প্রক্ষোভজাত বৈশিষ্ট্য কৈশোরকালে পরবর্তী জীবনবিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

(6) রাগ: বিভিন্ন ধরনের মানসিক চাহিদা পরিতৃপ্তি না হলে এই বয়সের ছেলেমেয়েদের বাবা-মা, আত্মীয়স্বজন প্রভৃতি বয়স্ক মানুষজনের উপর রাগ সৃষ্টি হয়। এই রাগের ফলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের অস্বাভাবিক আচরণ লক্ষ করা যায়।

কৈশোরের সামাজিক বিকাশ

কৈশোরের সামাজিক বিকাশমূলক বৈশিষ্ট্যগুলি হল-

(1) বৈচিত্র্য: সামাজিক বিকাশের মধ্যে বৈচিত্র্য লক্ষ করা যায়।

(2) মেলামেশা: এই স্তরের প্রথম পর্যায়ে ছেলেমেয়েরা পরস্পরের সঙ্গে মেলামেশা পছন্দ করে না। ছেলেমেয়েরা হঠাৎ দৈহিক পরিবর্তনের দরুন তাদের মধ্যে অস্বস্তিকর মানসিক অবস্থার সৃষ্টি হয় এবং সেই কারণে তারা নিজেদেরকে আড়াল করার চেষ্টা করে। তবে কিছুদিনের মধ্যেই এই ভাব কেটে যায়।

(3) কল্যাণমূলক কাজের প্রবণতা: এই বয়সে ছেলেমেয়েদের মধ্যে কল্যাণমূলক কাজের প্রবণতা লক্ষ করা যায়। সমাজের বিভিন্ন কাজে এগিয়ে আসে।

(4) সামাজিক নিয়ম লঙ্ঘন করার প্রবণতা : এই বয়স স্তরে সামাজিক অনুশাসন ভঙ্গ করে নিজের মতো করে নতুন নিয়ম তৈরি করার প্রবণতা দেখা যায়।

(5) নেতৃত্বদানের ক্ষমতা : এই বয়সে ছেলেমেয়েরা নেতৃত্বদানের জন্য বিভিন্ন দুঃসাহসিক কাজে অংশগ্রহণ করতে ইচ্ছুক হয়।

(6) মূল্যাবোধ: এই বয়সে ছেলেমেয়েদের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের মূল্যবোধ তৈরি হয়। যেমন-শ্রদ্ধা, ভালোবাসা ইত্যাদি গঠিত হয়। তবে তাদের নৈতিক মান দলের মতামত দ্বারা নির্ধারিত হয়। এই কারণে কিছু কিছু সময় তাদের আচরণ নৈতিক মানসম্পন্ন মনে হয়, আবার কোনো কোনো সময় মনে হয় তাদের মধ্যে নৈতিক মূল্যবোধ গড়ে ওঠেনি।

(7) সামাজিক দায়িত্বাবান: বয়স্কদের দ্বারা আরোপিত কোনো সামাজিক দায়িত্বপূর্ণ কাজ এই বয়সের ছেলেমেয়েরা দায়িত্বের সঙ্গে পালন করে।

(৪) ব্যক্তিপূজার প্রবণতা: এই বয়সে ছেলেমেয়েদের ব্যক্তিপূজার প্রবণতা দেখা দেয়।

(9) দলবদ্ধতা: বয়ঃসন্ধিকালে ছেলেমেয়েদের দলবদ্ধ হয়ে থাকার প্রবণতা দেখা যায়। প্রথমদিকে দলের প্রতি আকর্ষণ কম থাকলেও শেষের দিকে এই আকর্ষণ বেড়ে যায়। ওই দলের প্রতি অনেকে এত বেশি নিজেকে সমর্পণ করে, যে সেই দলে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করতে চায়। এইসময় তাদের মধ্যে দুঃসাহসিক কাজের প্রবণতা আসে। এদের মধ্যে কয়েকজন দলে নেতৃত্বদানে আগ্রহী হয়ে পড়ে। এর ফলে অনেক ক্ষেত্রে দ্বন্দ্ব তৈরি হয়। বিভিন্ন মনোবিদ ও শিক্ষাবিদগণ মনে করেন জীবনের এই স্তরের বিকাশের বিভিন্ন দিকগুলির মধ্যে সামাজিক বিকাশ ব্যক্তিজীবনের দিক থেকে বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

আরও পড়ুন – মনোবিজ্ঞানে অনুসন্ধানের পদ্ধতিসমূহ প্রশ্ন উত্তর

Leave a Comment