আড্ডা প্রবন্ধের প্রশ্ন উত্তর সৈয়দ মুজতবা আলী Class 11 Second Semester

১। ‘আড্ডা’ কী জাতীয় রচনা? কার লেখা?
‘আড্ডা’ রম্যরচনার গোত্রভুক্ত। বিখ্যাত সাহিত্যিক, ভ্রমণপিপাসু মানুষ সৈয়দ মুজতবা আলীর লেখা ‘পঞ্চতন্ত্র’-এর প্রথম ভাগের অন্তর্গত।
২। লেখক আড্ডার সঙ্গে কার তুলনা করেছেন? অথবা, ‘বাঙলার বাইরে নাকি আড্ডা নেই। কথাটা ঠিকও, ভুলও। তুলনা দিয়ে নিবেদন করছি।’- কার সঙ্গে তুলনা করেছেন?
লেখক আড্ডার সঙ্গে ইলিশ মাছের তুলনা করেছেন।
৩। লেখকের মতে সর্বরসের রসরাজ কে?
লেখকের মতে সর্বরসের রসরাজ হল ভোজনরস।
৪। “ঐ বস্তুটির প্রতি আমার মারাত্মক দুর্বলতা আছে”- কার, কোন্ বিষয়ের প্রতি মারাত্মক দুর্বলতা আছে?
লেখক সৈয়দ মুজতবা আলীর নিজের ব্যক্তিগতভাবে ইলিশ মাছের প্রতি মারাত্মক দুর্বলতা আছে।
৫। “সেথায় যাবার কণামাত্র বাসনা আমার নেই”- কার, কোথায়, যাবার বিন্দুমাত্র বাসনা নেই?
লেখক সৈয়দ মুজতবা আলী, বেহেশত অর্থাৎ স্বর্গে যেতে চান না
কারণ সেখানে তাঁর সবচেয়ে প্রিয় খাদ্যবস্তু ইলিশ মাছের থাকার কোনো বর্ণনা তিনি পাননি।
৬। কাফেতে আড্ডা বসলে সুবিধা কী কী হয়?
লেখকের মতে, কাফেতে আড্ডা বসলে আড্ডা জমজমাট, নির্ভেজাল আনন্দময় হয়ে থাকে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাটানো যায়, নিজের পছন্দমতো খাওয়া যায়। প্রতিনিয়ত বাড়ির গৃহকত্রীর ভয়ে ভীত থাকতে হয় না।
৭। লেখকের মতে কাইরোবাসীর শতকরা কতভাগ মানুষ আড্ডাবাজ? তারা জীবনের কতভাগ আড্ডায় কাটায়?
লেখকের মতে, শতকরা ৯০জন কাইরোবাসী আড্ডাবাজ। এই আড্ডাবাজ কাইরোবাসীরা তাদের জীবনের অর্ধেকের বেশি সময় কাটায় আড্ডাতে।
৮। লেখকের আড্ডা কোথায় বসত? লেখকের আড্ডায় অংশগ্রহণকারী দুইজন সদস্যের নাম লেখো।
মিশরে লেখকের আড্ডা বসত ‘কাফে দ্য নীল’ বা নীলনদ কাফেতে। এই আড্ডার লেখকের দু-জন সঙ্গী হলেন রমজান বে আর সজ্জাদ এফেন্দি।
৯। কাফে দ্য নীল বা নীলনদ কাফের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দাও।
‘আড্ডা’ প্রবন্ধে লেখকের বক্তব্য অনুসারে মিশরে লেখকের আড্ডা বসত ‘কাফে দ্য নীল’ বা ‘নীলনদ কাফে’-তে। এই কাফের উত্তর-পূর্ব কোণে, কাউন্টারের গা ঘেঁসে যে টেবিল ছিল, সেখানেই লেখকদের আড্ডার টেবিল। কফির দাম ছয় পয়সা। দুধ ছাড়া কালো কফি এখানে পরিবেশন করা হয়।
১০। “হরেক জাতের চিড়িয়া সে আড্ডায় হরবকৎ মৌজুদ থাকত”।- ‘হরেক জাতের চিড়িয়া’ বলতে লেখক কী বলতে চেয়েছেন?
লেখক সৈয়দ মুজতবা আলী তাঁর রসিকতার ছলে মিশরে ‘কাফে দ্য নীল’-এ যে আড্ডা বসত, সেখানকার সদস্যদের চিড়িয়া বলেছেন। সেখানে বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন জাতির মানুষের সমাবেশ ছিল। সেখানে কেউ ছিলেন মিশরি মুসলমান, কেউ ছিলেন খ্রিস্টান, কেউ বা ফরাসি এবং লেখক নিজে একজন ভারতীয়।
১১। ‘কাফে দ্য নীল’-এর আড্ডায় কে কবিতা লিখতেন? তাঁর কবিতার বিষয় কী ছিল?
‘কাফে দ্য নীল’-এর আড্ডায় জুর্নো যিনি জাতিতে একজন ফরাসি কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে মিশরে আছেন; তিনি আরবি ভাষায় কবিতা লিখতেন।
জুর্নোর কবিতার বিষয় ছিল জুর্নো তলোয়ার চালিয়ে আড়াই ডজন বেদুইনকে ঘায়েল করে প্রিয়াকে উটের উপর তুলে মরুভূমির দিগদিগন্তে বিলীন হয়ে গেছে।
১২। কাইরো থেকে পিরামিডের দূরত্ব কত? জুর্নো জীবনে কতবার মরুভূমি ও পিরামিড দেখেছে?
সৈয়দ মুজতবা আলীর ‘আড্ডা’ রচনাতে তিনি জানিয়েছেন কাইরো থেকে পিরামিডের দূরত্ব মাত্র পাঁচ মাইল। জুর্নো মাত্র একবারই জীবনে পিরামিড দেখতে গিয়ে মরুভূমি দেখেছিল।
১৩। মার্কোস ‘কাফে দ্য নীল’-এ কী করত?
মার্কোস ‘কাফে দ্য নীল’-এ আড্ডায় আসত কিন্তু কোনো বিষয়ের আলোচনাতে কোনো তর্কাতর্কিতে অংশগ্রহণ করত না। বেশিরভাগ সময়ে কাফের চেয়ারে হেলান দিয়ে আকাশের দিকে হাঁ করে ঘুমাত। আবার কখনও খবরের কাগজ থেকে তুলোর ফটকা বাজারের দর মুখস্থ করত।
১৪। লেখক কেন ‘কাফে দ্য নীল’-এ যেতেন?
লেখক সৈয়দ মুজতবা আলী দেশভ্রমণ সূত্রে যখন মিশরে থাকতেন, তখন একেবারে বাড়ির কাছে এই ‘কাফে দ্য নীল’-এ রোজ সকাল-সন্ধে কফি খেতে যেতেন।
১৫। “এমন সময় হঠাৎ খেয়াল গেল”- কার, কোন্ দিকে খেয়াল গেল?
সৈয়দ মুজতবা আলী ‘আড্ডা’ গল্পে যে ‘কাফে দ্য নীল’-এ সকাল-সন্ধে কফি খেতে যেতেন, সেখানে এক কোণার টেবিলে কিছু মানুষের দিকে খেয়াল গেল। তারা মূলত আড্ডা দিতে সেখানে আসতেন; কফি খাওয়াটা তাদের কাছে গৌণ।
১৬। “যা যা ছোঁড়া, মেলা জ্যাঠামো করিসনে”- বক্তা কে? ‘ছোঁড়া’ বলতে কাকে বোঝানো হয়েছে?
আলোচ্য উক্তিটির বক্তা হল ‘কাফে দ্য নীল’-এর আড্ডার একজন সদস্য জুর্নো। তিনি ‘কাফে দ্য নীল’ কাফের কফি পরিবেশনকারী ছেলেটাকে ‘ছোঁড়া’ বলে সম্বোধন করেছেন।
১৭। “খাসা আরবী বলেন আপনি”- বক্তা কে? ‘আপনি’ বলতে কাকে বোঝানো হয়েছে?
সৈয়দ মুজতবা আলীর ‘আড্ডা’ গল্পে আলোচ্য উক্তিটির বক্তা হলেন ‘কাফে দ্য নীল’-এর আড্ডার সদস্য জুর্নো। জুর্ণো ‘আপনি’ বলতে লেখককে অর্থাৎ সৈয়দ মুজতবা আলীকে বুঝিয়েছেন।
১৮। লেখক কতদিন আরবি শিখেছেন? তাঁর আরবি ভাষা বলার প্রশংসা কে করেছিল?
‘আড্ডা’ গল্পে লেখক মাত্র তেরোদিন আরবি ভাষা শিখেছিলেন। লেখকের আরবি বলার প্রশংসা করেছিলেন ‘কাফে দ্য নীল’-এর একজন সদস্য জুর্নো।
১৯। ‘দীর্ঘ চোদ্দ বছর পরও যেন আমার নাকে লেগে আছে’- কার নাকে, কীসের গন্ধ লেগে আছে?
সৈয়দ মুজতবা আলীর লেখা ‘আড্ডা’ রচনাতে মিশরীয় হুঁকোর তামার্কের সুগন্ধ লেখককে মুগ্ধ করেছিল। সেই সুগন্ধ লেখককে এতটাই মুগ্ধ করেছিল, যে দীর্ঘ চোদ্দো বছর পরও তিনি সেই সুগন্ধের কথা মনে রেখেছেন।
২০। কাদের সিগারেটের সুগন্ধী ভুবনবিখ্যাত?
ইজিপশিয়নদের সিগারেটের সুগন্ধী ভুবনবিখ্যাত।
২১। সিগারেটের জন্য ভালো তামাক কোন্ কোন্ দেশে পাওয়া যায় বলে লেখক মনে করেন?
লেখক সৈয়দ মুজতবা আলী তাঁর ‘আড্ডা’ রচনাতে ভালো সুগন্ধী যুক্ত সিগারেটের উল্লেখ প্রসঙ্গে জানিয়েছেন যে, পৃথিবীর তিনটি জায়গায় ভালো তামাক জন্মায়। সেই তিনটি জায়গা হল- আমেরিকার ভার্জিনিয়া, গ্রিসের মেসেডোেট অঞ্চল এবং রাশিয়ার কৃষ্ণসাগর অঞ্চলে।
২২। ভারতবর্ষের মানুষ কোন্ দেশের তামাক দিয়ে সিগারেট বানায়?
‘আড্ডা’ গল্পে সৈয়দ মুজতবা আলী যে তিন দেশের তামাকের কথা বলেছেন, সেই তিন দেশের মধ্যে আমেরিকার ভার্জিনিয়াতে যে তামাক তৈরি হয়, সেই তামাক দিয়ে ভারতবর্ষে সিগারেট তৈরি হওয়ার কথা জানিয়েছেন লেখক।
২৩। ইজিপশিয়ন সিগারেট কাকে বলে?
‘আড্ডা’ রচনাতে লেখক সৈয়দ মুজতবা আলী জানিছেন যে, পৃথিবীর বিখ্যাত তামাক তৈরি হয় তিন অঞ্চলে। তাদের মধ্যে গ্রিসে যে তামাক উৎপন্ন হয় তা মিশরে আমদানি করা হয়। মিশরীয়রা রাসায়নিক পদ্ধতিতে সেই তামাকের সঙ্গে মিশরের সুগন্ধী মিশিয়ে তৈরি করেছিল যে সিগারেট, তাকে ইজিপশিয়ন সিগারেট বলা হয়।
২৪। রসায়নবিদ্যা ভারতীয়রা ভুলে গিয়েছিল কোন্ যুগে?
লেখক সৈয়দ মুজতবা আলীর মতে, রসায়নবিদ্যায় প্রাচীন যুগ থেকেই ভারতীয়, খুব উন্নত করলেও পাঠান মোগলযুগে চর্চার অভাবে ভারতীয়রা রসায়নবিদ্যা ভুলে গিয়েছিল।
২৫। “তা হলে পাপ করে নরকে যেত কোন মূর্খ?”- লেখকের এইরকম বলার কারণ কী?
আলোচ্য উক্তিটি সৈয়দ মুজতবা আলীর লেখা ‘আড্ডা’ গল্প থেকে নেওয়া হয়েছে। এখানে বক্তা হলেন স্বয়ং লেখক। লেখক রসিকতা করে জানিয়েছেন, স্বর্গে ইলিশ মাছের যেমন উল্লেখ নেই, তেমনই উল্লেখ নেই সিগারেট খাওয়ার কথা। তাই স্বর্গে যেতে তিনি একেবারেই রাজি। তাই সবাই জেনেবুঝেই পাপ করে আর নরকে যায়।
২৬। মিশরির চরম দুর্বলতা কীসে?
‘আড্ডা’ গল্পে সৈয়দ মুজতবা জ্ঞানী ‘কাফে দ্য নীল’-এর আড্ডায় বিভিন্ন দেশের মানুষের দুর্বলতা প্রসঙ্গে জানিয়েছেন যে, মিশরীয়দের দুর্বলতা তাদের জুতো-জোড়া পালিশে। তারা তাদের জুতো জোড়া পালিশ রাখতে ভালোবাসে।
২৭। কাফেতে ঢোকামাত্রই কী হয়ে থাকে?
মিশরের কাফেতে ঢোকা মাত্রই মিশরীয় দুর্বলতা অনুসারে বুট পালিশের লোক এসে হাজির হয়। কাফের লোকেরা তাকে চেনে, তাই হাসিমুখে তার কাছে বুট পালিশ করিয়ে নেয়।
২৮। “এতক্ষণে একটা মুখরোচক আলোচনার বিষয়বস্তু উপস্থিত হল”।-মুখরোচক আলোচনার বিষয়বস্তুটি কী ছিল?
‘আড্ডা’ গল্পে সৈয়দ মুজতবা আলী কাফেতে প্রেমপত্র লেখা প্রসঙ্গে এই আলোচ্য উক্তিটি করেছেন। লেখকের প্রেমপত্র লেখা প্রসঙ্গক্রমে আড্ডার বিষয় হয় প্রেমপত্র। প্রেমপত্র লেখার সময়-অসময়, মোকা-বে-মোকা, কায়দা-কেতা সম্বন্ধে আড্ডায় আলোচনা শুরু হয়। এই প্রেমপত্র বিষয়ে আলোচনাকেই মুখরোচক আলোচনা বলা হয়েছে।
২৯। আড্ডার সবচেয়ে বড়ো শত্রু কোন্টি?
আড্ডার সবচেয়ে বড়ো শত্রু হল বক্তৃতা। কোনো ব্যক্তি যদি সবজান্তা ভাব নিয়ে একাই বলে চলে, তাহলে আড্ডার মেজাজ ও পরিবেশ নষ্ট হয়ে যায়। সেখানকার অন্যান্য সদস্য নীরব দর্শকের ভূমিকা নেয়। আড্ডার অনাবিল আনন্দ একেবারেই চলে যায়।
৩০। কাইরোতে বছরে কত বৃষ্টি হয়? এখানকার শীতকালীন আবহাওয়া কেমন?
কাইরোতে বছরে আড়াই ফোঁটা বৃষ্টি হয়ে থাকে।
কাইরোর শীতকালীন আবহাওয়া খুব আরামদায়ক। এখানে শীতকালে না খুব ঠান্ডা, না খুব গরম। ফলে আবহাওয়া খুব মনোরম হয়।
৩১। “কাইরো ট্যুরিস্টজমের ভূস্বর্গ এবং ট্যুরিস্টাদেরও বটে”- কোন্ সময়, কেন কাইরো টুরিস্টদের কাছে ভূস্বর্গ?
‘আড্ডা’ গল্প অনুসারে শীতকালে কাইরোর আবহাওয়া খুবই আরামদায়ক ও মনোরম হয় কারণ এখানে এই সময় না খুব ঠান্ডা পড়ে না খুব গরম থাকে। এই মনোরম পরিবেশ থাকার দরুন শীতকালে টুরিস্টদের কাছে কাইরো ভূস্বর্গ।
১। “উপর্যুক্ত সর্ব মৎস্য একই বস্তু- দেশভেদে ভিন্ন নাম”- কার কথা বলা হয়েছে? ভিন্ন দেশে ভিন্ন নামগুলি লেখো।
এখানে ইলিশ মাছের কথা বলা হয়েছে। ইলিশ মাছের ভিন্ন দেশে ভিন্ন নাম আছে; যেমন সিন্ধু নদীতে এর নাম ‘পাল্লা’; ভরোচ শহরের নর্মদা নদীতে এর নাম ‘মদার’; গঙ্গা আর পদ্মায় ‘ইলিশ’ আর খোট্টাদের দেশে এর নাম ‘হিল্সা’ মাছ।
২। কাইরো শহরের কোনো আড্ডা কোনো বন্ধুর বাড়িতে বসে না কেন?
লেখক বলেছেন, কাইরোরা দারুণ আড্ডাবাজ। প্রধানত দুটি কারণে তারা কোনো বন্ধুর বাড়িতে আড্ডা বসায় না সেগুলি হল- এতে আড্ডার নিরপেক্ষতা এবং গণতন্ত্র লোপ পায়। বাড়ির গিন্নিদের অসন্তোষ অন্যতম প্রধান কারণ।
৩। ‘কাফে দ্য নীল’-এ লেখকের আড্ডার সদস্যদের পরিচয় দাও।
লেখক সৈয়দ মুজতবা আলী মিশরের ‘কাফে দ্য নীল’-এ আড্ডা দিতেন ও সেখানকার কয়েকজন সদস্যের কথা উল্লেখ করেছেন। তারা হলেন- রমজান বে, সজ্জাদ এফেন্দি, ওয়াহহাব আতিয়া, জুর্নো এবং মার্কোস। রমজান বে এবং সজ্জাম এফেন্দি জাতিতে মুসলমান, ওয়াহহাব আতিয়া একজন খাঁটি মিশরি খ্রিস্টান, জুর্নো একজন ফরাসি এবং মার্কোস হলেন গ্রিক।
৪। “দিব্যি ফর্শী হুঁকো এল”- ‘কাফে দ্য নীল’-এ হুঁকোর বর্ণনা দাও।
‘আড্ডা’ গল্পে সৈয়দ মুজতবা আলী মিশরের ‘কাফে দ্য নীল’-এ আড্ডা দেওয়ার সময় আড্ডা প্রসঙ্গে সেখানকার মানুষের তামাক অর্থাৎ সিগারেট খাওয়ার প্রসঙ্গ এনেছেন। সেখানে আগত হুঁকোকে দেখে তিনি একটু অবাক হয়েছিলেন এবং সহাস্য রসিকতায় তিনি ভারতীয় হুঁকোর সঙ্গে কাইরোর হুঁকোর তুলনা করেছেন। কাইরোর হুঁকোর ল্যাজ ছোটো, আমাদের দেশের হুঁকোর বাঁদরের ল্যাজের মতো লম্বা নয়। তবে তামাক রাখার ছিলিমটা ছিল অনেক বড়ো, যাতে অনেকটা তামাক রাখা যায়। এই হুঁকো দিয়ে কাফেতে সুগন্ধিযুক্ত তামাক খাওয়া হয়।
৫। লেখকের বক্তব্য অনুসারে মিশরীয়রা এত ভলো সুগন্ধীযুক্ত সিগারেট বানাতে শিখল কীভাবে?
মিশরীয়দের সুগন্ধিযুক্ত সিগারেট তৈরির পেছনে গূঢ়তর রহস্য আছে বলে মনে করেন লেখক সৈয়দ মুজতবা আলী। মিশরীয়দের সুগন্ধ-তত্ত্ব বিশ্ববিখ্যাত। তারা গ্রিক দেশের তামাকের স্বাদ ও ঝাঁঝকে অক্ষুণ্ণ রেখে বিশেষ এক রাসায়নিক পদ্ধতিতে তামাকের খামে সুগন্ধ যুক্ত করত। এই সুগন্ধীযুক্ত তামাক বিশ্বের অন্যত্র দুর্লভ।
৬। কোন্ কাজ লেখকের মতে ‘অতীব কঠিন কাজ’? কেন এই কাজকে কঠিন বলা হয়েছে?
‘আড্ডা’ গল্পে সৈয়দ মুজতবা আলী মিশরীয়দের তামাকের স্বাদকে অক্ষুণ্ণ রেখে মিশরীয় গন্ধ যুক্ত করাকে ‘অতীব কঠিন কাজ’ বলেছেন। এই কথা বলার কারণ হল তামাক অতি সংবেদনশীল বস্তু। তামাকের সঙ্গে অন্য কোনো ঝাঁঝালো কিছু থাকলেই তার স্বাদ ও গন্ধ নষ্ট হয়ে যায়। সেখানে মিশরীয়রা এক অদ্ভুত রাসায়নিক পদ্ধতিকে কাজে লাগিয়ে তামাকের স্বাদ বিন্দুমাত্র নষ্ট না করে মিশরীয় সুগন্ধি মিশিয়ে থাকে।
৭। “সে তত্ত্বগুলো মাথা খুঁড়েও বের করতে পারিনি”- কোন্ তত্ত্বগুলির কথা বলা হয়েছে?
‘আড্ডা’ গল্পে সৈয়দ মুজতবা আলী কয়েকটি গূঢ়তত্ত্বের কথা বলেছেন, যার রহস্য আজও মানুষের কাছে অধরা। সেগুলি হল- অজন্তা গুহার দেয়াল এবং সেখানকার ছবির রং কোন্ কোন্ মশলা দিয়ে বানানো হয়েছে?পাঠানযুগে পাহাড়ে পাহাড়ে জোড়া দেওয়ার জন্য কী জিনিস ব্যবহার করা হয়েছে? কী রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহার করে মিশরীয়রা মৃতদেহকে মমিরূপে রেখে দিত কোনো পচন না ধরিয়ে?
৮। ‘আড্ডা’ গল্পে কে, কেন খুদাতালার তারিফ না করে থাকতে পারে না বলে লেখক জানিয়েছেন?
‘আড্ডা’ গল্পে লেখক সৈয়দ মুজতবা আলী অসাধারণ বৈঠকি মেজাজে যে বক্তব্যের অবতারণা করেছেন, তাতে জানা যায় মিশরির সুগন্ধীযুক্ত তামাকের কথা। মিশরীয়রা তামাকের স্বাদ, গুণ নষ্ট না করে অসাধারণ কৌশলে তার সঙ্গে যুক্ত করেছে সুগন্ধী। সেই সুগন্ধীযুক্ত তামাক যখন ‘কাফে দ্য নীল’-এ বসে কোনো ব্যক্তি সেবন করত, তখন তার থেকে যে সুগন্ধ বের হত তা যে-কোনো সিগারেট সেবনকারী ব্যক্তিকে মুগ্ধ করত। আলোচ্য অংশে সেই ধরনের সিগারেট সেবনকারী মানুষেরই কথা বলা হয়েছে। তারা শুধুমাত্র তামাকের সঙ্গে এই সুগন্ধী অনুভব করেই ভগবানের অশেষ ক্ষমতাকে ধন্যবাদ জানাত।
৯। “কোন্ দেশের রমণী সবচেয়ে সুন্দরী হয়।”-এই প্রশ্ন সবাই কাকে, কেন করে থাকে?
‘আড্ডা’ গল্পে আড্ডার নানারকম আলোচনার মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় আলোচনা ছিল সুন্দরী রমণীদের নিয়ে। কোন্ দেশের রমণীরা সবচেয়ে সুন্দর-এই নিয়ে বৈঠকি আড্ডা জমত ভালোই। লেখক ভ্রমণপিপাসু মানুষ; পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ভ্রমণের অভিজ্ঞতা তাঁর আছে। তাই এই অভিজ্ঞতালব্ধ জ্ঞান থেকে আড্ডা দলের অন্যান্য সদস্যদের লেখকের কাছে জানার কৌতূহল ছিল বিশ্বের কোন্ দেশের রমণীরা সবচেয়ে সুন্দর।
১০। “মিশরী আড্ডাবাজরা দৈবাৎ একই আড্ডায় জীবন কাটান”।- এ কথা বলার কারণ কী?
‘আড্ডা’ গল্পে লেখক সৈয়দ মুজতবা আলীর বক্তব্য অনুসারে, বাঙালিদের মতো মিশরের মানুষরাও খুব আড্ডাপ্রিয়। তাই তারা জীবনের বেশিরভাগটাই আড্ডা দিয়ে কাটায়। আড্ডার একঘেয়েমি কাটানোর জন্য সম্ভবত তারা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন জায়গার আড্ডাতে যোগদান করে। লেখক নিজেও কাইরো-তে অবস্থানকালে তিনটি কাফেতে একসঙ্গে যাতায়াত করতেন। সপ্তাহের বেশিরভাগ সময়ে যেতেন ‘কাফে দ্য নীল’-এ। আবার সপ্তাহে একদিন শহর থেকে মাইল তিনেক দূরের এক কাফেতে যেতেন। মিশরের মানুষরা কখনও একটি আড্ডায় নিজেদের সীমাবদ্ধ রাখতে পারে না।
১১। সেমিরামিস কাফের বর্ণনা দাও।
‘আড্ডা’ গল্পে লেখক সৈয়দ মুজতবা আলী আড্ডাপ্রিয় মিশরবাসীর বর্ণনা দিয়েছেন অসাধারণ সরস অথচ বাবৈদ্যপূর্ণ ভাষায়। তথ্যসমৃদ্ধ এই রচনা থেকে জানা যায়, মিশরের মানুষ আড্ডা দিতে ভালোবাসে। জীবনের বেশিরভাগ সময় তারা আড্ডা দিয়ে কাটায়। তাই মিশরের বহু কাফেতে বসে আড্ডার আসর। লেখক নিজেও খুব আড্ডাপ্রিয় মানুষ। তাই মিশরে তিনটি কাফেতে তিনি ধারাবাহিকভাবে যাতায়াত করতেন। সপ্তাহে একদিন বা দুইদিন তিনি বাড়ির পাশে সেমিরামিস কাফেতে যেতেন।
এই কাফের দক্ষিণ-পশ্চিম কোণের আড্ডার আসরে তিনি যোগদান করতেন। এই আড্ডার সদস্যরা ‘কাফে দ্য নীল’-এর আড্ডার সদস্য নয়। সম্পূর্ণ আলাদা সদস্য। এই সদস্যদের মধ্যে কেউ চ্যাংড়া, কেউ বা কলেজে পড়ে, কেউ কেরানিগিরি করে, কেউ বেকার। এদের আলোচনার বিষয় কখনও রাজনীতি, সাহিত্য কখনও বা প্রেম ও পরকীয়া। এই আড্ডার সদস্যরা আড্ডা জমায় অসাধারণভাবে। তারা সবজান্তা এবং তাদের ভাব দেখে লেখকও অবাক হত এই ভেবে যে, এদের ছাড়া পৃথিবীর বৃহৎ দেশগুলি কীভাবে চলছে।
১২। “হায় দুনিয়া, তুমি জানছো না তুমি কি হারাচ্ছ’- এ কথা বলার কারণ কী?
রসিক লেখক সৈয়দ মুজতবা আলী তাঁর ‘আড্ডা’ গল্পে অসাধারণ সরসতার পরিচয় দিয়েছেন। প্রসঙ্গত বাড়ির পাশে অবস্থিত সেমিরামিস কাফেতে আড্ডা দেওয়ার সময় তিনি লক্ষ করেছেন এখানকার সদস্যরা সবজান্তা। পৃথিবীর সব বিষয়ে এদের সবজান্তা আলোচনার ভাব দেখলে মনে হবে, প্রতিনিয়ত বিশ্বের বৃহৎ দেশগুলি থেকে এদের কাছে খবর আসছে। তাদের ছাড়া পৃথিবীর দেশগুলি চলছে কীভাবে- এই ভেবে লেখক খুব অবাক হয়েছেন এবং এটাই ভেবেছেন এদের যদি বিশ্বের বড়োদেশগুলির বড়ো কর্তা বানিয়ে দেওয়া যেত, তাহলে সমস্যার সমাধান তারা করে ফেলত এক নিমেষে। এই ব্যঙ্গ চটুল বক্তব্যকে প্রকাশ করে লেখক লিখেছেন- হায় পৃথিবী, তুমি নিজেও জানছ না তুমি কাদের হারাচ্ছ।
১৩। “আপনি এখানে আসেন কালেভদ্রে”- কোথায় আসার কথা বলা হয়েছে? এখানে আসলে কীরকম অভ্যর্থনা পাওয়া যায়? কেন?
আলোচ্য উক্তিটি সৈয়দ মুজতবা আলীর লেখা ‘আড্ডা’ গল্পের অন্তর্গত। এখানে লেখক মাসে একদিন শহর থেকে মাইল তিনেক দূরে একটি কাফেতে যাওয়ার কথা বলেছেন।
লেখক কাইরো শহরের বিভিন্ন জায়গার আড্ডাদলের সদস্য ছিলেন। সপ্তাহে বিভিন্ন আড্ডায় তিনি অংশগ্রহণ করলেও শহর থেকে মাইল তিনেক দূরে কাফেতেও তিনি যেতেন খুব কম, মাসে হয়তো একবার। এই কাফেতে লেখকের কোনো এক বন্ধু লেখককে নিয়ে এসেছিলেন, সেদিন থেকেই লেখক এই কাফের আড্ডাদলের সদস্য। দূরত্ব বেশি থাকায় এখানে লেখক আসতেন খুব কম। কিন্তু যখনই আসতেন তখনই কাফের অন্যান্য সদস্যদের কাছ থেকে উন্ন, আন্তরিক ও আনন্দময় অভ্যর্থনা পেতেন। লেখকের ভাষায় এই কাফেতে খুব কম আসার ফলে এখানকার চর্বিত চর্বন আলোচনার বিষয়গুলি লেখকের কাছে আবার নতুন করে নতুনভাবে উপস্থাপনা করা যায়।
১৪। ‘আড্ডা’ গল্পে লেখক ভারতীয় হুঁকো ও কাইরোর হুঁকোর মধ্যে যে সাদৃশ্য ও বৈসাদৃশ্য তুলে ধরেছেন, তা নিজের ভাষায় লেখো।
‘আড্ডা’ গল্পে সৈয়দ মুজতবা আলী আড্ডার মেজাজে ‘কাফে দ্য – নীল’-এ অবস্থানকালে সেখানকার হুঁকো দেখে অবাক হয়েছিলেন এবং এই প্রসঙ্গে তিনি ভারতীয় হুঁকো ও কাইরোর হুঁকোর মধ্যে সাদৃশ্য ও বৈসাদৃশ্য আমাদের সামনে তুলে ধরেছেন। কাইরোর হুঁকোর নলটি লম্বায় ছোটো, অন্যদিকে ভারতীয় হুঁকোর নল লেখকের ভাষায় হনুমানের ল্যাজের মতো সাড়ে তিন গজ লম্বা। আমাদের দেশের হুঁকো জরির কাজ করা বেশ সুন্দর দেখতে হয়ে থাকে। কিন্তু কাইরোর হুঁকোর তেমন কোনো বাহ্যিক সৌন্দর্য নেই, কেমন যেন ভোঁতা ভোঁতা। অর্থাৎ কাইরোর হুঁকো একটু সাদামাটা, সৌন্দর্যের দিক থেকে পিছিয়ে পড়া। আর ভারতীয় হুঁকো রাজ দরবারের উপযোগী কারুকাজ বিশিষ্ট। তবে কাইরোর হুঁকোর চিলিমটা অনেক বড়ো, এক পো তামাক সেখানে অনায়াসে রাখা যায়। ভারতীয় হুঁকোর চিলিমটা অবশ্য আকারে অনেক ছোটো।
১৫। ভারতের দরবারি হুঁকোর নলের দৈর্ঘ্য কত? দরবারি হুঁকোর চেহারার বর্ণনা দাও।
‘আড্ডা’ গল্পে সৈয়দ মুজতবা আলীর বর্ণনা অনুসারে ভারতীয় দরবারি হুঁকোর নলের দৈর্ঘ্য সাড়ে তিন গজ। দরবারি হুঁকোর চেহারা বেশ রাজকীয়। হনুমানের ল্যাজের মতো দরবারি হুঁকোর নলটা অনেক লম্বা হয়, প্রায় সাড়ে তিন গজ। জরির কাজ করা থাকে। লেখকের ভাষায় “জরির কাজ করা আমাদের ফর্শী কেমন যেন একটু ‘নাজুক’, মোলায়েম হয়”। চিলিমটা কিন্তু আকারে খুব একটা বড়ো হয় না।
১৬। “রাবড়ির মত ঘন, কিন্তু দুধ চাইলেই চিত্তির”।- কার সম্বন্ধে এ কথা বলা হয়েছে? আলোচ্য অংশটির ব্যাখ্যা করো।
আলোচ্য উক্তিটিতে সৈয়দ মুজতবা আলীর লেখা ‘আড্ডা’ গল্পের অন্তর্গত মিশরের ‘কাফে দ্য নীল’-এ ছয় পয়সা দামের ঘন কালো কফির কথা বলা হয়েছে।
‘কাফে দ্য নীল’-এর কফির প্রশংসা করতে গিয়ে লেখক এ কথা বলেছেন। লেখক সকাল-বিকাল এই কাফেতে কফি খেতে যেতেন। মিশরের কাইরো শহরে দুধ দিয়ে কফি তৈরি হয় না। সাধারণত গাঢ় সুস্বাদু কফি দুধ ছাড়া কালো হয়ে থাকে। কালো কফি ঘন রাবড়ির মতো কিন্তু তাতে দুধ নেই। ভারতীয় মানসিকতায় লেখক লিখেছেন, যদি দুধ চাওয়া হয় কফির জন্য তাহলে এখানকার লোক অবাক হবে বা আশ্চর্য হবে।
১৭। “স্বপ্ন নু মায়া নু মতিভ্রম নু’- উক্তিটি প্রকৃত কোন্ রচনার অংশ? কার লেখা? লেখক তাঁর ‘আড্ডা’ গল্পে কোন্ বিষয়ে আলোচ্য উক্তিটি ব্যবহার করেছে?
আলোচ্য উক্তিটি বিখ্যাত সংস্কৃত নাট্যকার কালিদাসের লেখা ‘অভিজ্ঞান শকুন্তলম্’ নাটকের অংশ। শকুন্তলার সঙ্গে রাজা দুষ্মন্তের একান্ত মিলনকে রাজার মনে হয়েছে স্বপ্নের মতো, মায়ার মতো, মনের ভ্রান্ত ধারণার মতো। আলোচ্য উক্তিটি সংস্কৃত শ্লোক।
‘কাফে দ্য নীল’-এ আড্ডার সদস্য হওয়ার পর লেখক জানতে পেরেছিলেন, এই কাফেতে তামাক পাওয়া যায় এবং হুঁকোতে সুগন্ধি তামাক পরিবেশন করা হয়। এই কথা শুনে অর্থাৎ সুদূর মিশরের কাইরো শহরে সুগন্ধি তামাকের কথা শুনে লেখকের এটি আলোচ্য সংস্কৃত শ্লোকটির কথা মনে হয়েছে। এটা লেখকের কাছে স্বপ্নের মতো, মায়ার মতো, মনের ভ্রান্ত ধারণার মতো অবাস্তব, অসম্ভব মনে হয়েছে।
আরও পড়ুন – আগুন নাটকের প্রশ্ন উত্তর