নারীশিক্ষা প্রসারের উদ্দেশ্য কী ছিল? ‘নারীশিক্ষা ভান্ডার’ কে গঠন করেন এবং কেন

নারীশিক্ষা প্রসারের উদ্দেশ্য কী ছিল? ‘নারীশিক্ষা ভান্ডার’ কে গঠন করেন এবং কেন

অথবা, ‘নারীশিক্ষা ভান্ডার’ গঠনে বিদ্যাসাগরের ভূমিকা আলোচনা করো

নারীশিক্ষা প্রসারের উদ্দেশ্য কী ছিল? 'নারীশিক্ষা ভান্ডার' কে গঠন করেন এবং কেন
নারীশিক্ষা প্রসারের উদ্দেশ্য কী ছিল? ‘নারীশিক্ষা ভান্ডার’ কে গঠন করেন এবং কেন

নারীশিক্ষা প্রসারের উদ্দেশ্য

(1) নারীমুক্তি: বিদ্যাসাগর দেখেছিলেন, বাংলার সমাজে নারীরা পুরুষের তুলনায় অনেক পিছিয়ে পড়েছে। নারীরা সমাজে বিভিন্নভাবে অত্যাচারিত হয়। তিনি বুঝেছিলেন নারীদের মধ্যে শিক্ষাবিস্তারের মাধ্যমেই একমাত্র নারীমুক্তি সম্ভব।

(2) সমাজসংস্কার : বিদ্যাসাগর ছিলেন একজন সমাজসংস্কারক। তিনি বাল্যবিবাহের বিরুদ্ধে ও হিন্দু বিধবাদের পুনর্বিবাহের পক্ষে আন্দোলন করেছিলেন। তিনি উপলব্ধি করেন যে, নারীদের মধ্যে শিক্ষার প্রসার ঘটাতে না পারলে সমাজসংস্কার অসম্পূর্ণ থাকবে। গ্রামাঞ্চলে বালিকা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় তাঁর অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল কুসংস্কারমুক্ত সমাজ গড়ে তোলা।

নারীশিক্ষা ভাঙার গঠনের উদ্দেশ্য ও বিদ্যাসাগরের ভূমিকা 

স্ত্রীশিক্ষাবিস্তারে বিদ্যাসাগরের অবদান অসামান্য। তিনি মনে করতেন শিক্ষক ব্যতীত নারীদের উন্নয়ন অসম্ভব। মূলত তিনিই উদ্যোগ নিয়ে 1849 সালের মে মাসে ‘হিন্দু ফিমেল স্কুল’ স্থাপন করেন। বর্তমানে এই বিদ্যালয় বেথুন স্কুল এবং বেথুন কলেজ নামে পরিচিত। বিদ্যাসাগর শহরের সঙ্গে সঙ্গে গ্রাম বাংলাতেও নারীশিক্ষার প্রসার ঘটানোর প্রচেষ্টা করেছিলেন। 1857 সালে তিনি প্রথম বর্ধমানের জৌগ্রামে মেয়েদের শিক্ষার জন্য একটি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। 1858 সালের মে মাসের মধ্যে হুগলি, বর্ধমান, মেদিনীপুর এবং নদিয়াতে মোট 16টি স্কুল তৈরি করতে সক্ষম হন। মোট ছাত্রী সংখ্যা ছিল তিন হাজার পাঁচশো জন।

বিদ্যাসাগর আশা করেছিলেন যে বিদ্যালয়গুলি ভারত সরকারের আর্থিক সহায়তা পাবে। কিন্তু পরে জানতে পারেন যে ভারত সরকার আর্থিক সহায়তা নিয়ে এগিয়ে আসতে অনিচ্ছুক। ভারত সরকার জানিয়ে দেয় বিদ্যাসাগরের প্রতিষ্ঠিত বালিকা বিদ্যালয়গুলির জন্য কোনো স্থায়ী অর্থসাহায্য দিতে পারবে না। এই কারণে বিদ্যাসাগর বিদ্যালয়গুলির আর্থিক সমস্যার সমাধানের জন্য নিজেই জনসাধারণের কাছ থেকে অর্থসাহায্য নিয়ে তাঁর প্রতিষ্ঠিত বিদ্যালয়গুলি চালানোর চেষ্টা করেন। একেই বলা হয় নারীশিক্ষা ভান্ডার, যা দিয়ে এই বিদ্যালয়ের ব্যয়ভার চালানো হত। এই সমস্ত বিদ্যালয়ে যেসব মেয়েরা শিক্ষাগ্রহণ করত তারা গণিত, পদার্থবিদ্যা, ভূগোল, সূচিকর্ম ইত্যাদি সমস্ত বিষয়ে শিক্ষা পেত। তাঁর এই অপরাজেয় মনোভাব এদেশে নারীশিক্ষার ক্ষেত্রে অগ্রগতি ঘটিয়েছে।

আরও পড়ুন – মধ্যযুগীয় ভারতের শিক্ষা প্রশ্ন উত্তর

Leave a Comment