রাজা রামমোহন রায়কে ভারতীয় নবজাগরণের জনক বা আধুনিকতার অগ্রপথিক বলা হয় কেন? বর্তমান ভারতের সকলক্ষেত্রে আমরা যে অগ্রগমন দেখতে পাচ্ছি তা রামমোহনেরই চিন্তা-ভাবনার ফসল- আলোচনা করো

রামমোহন রায় নবজাগরণের জনক বা আধুনিকতার অগ্রপথিক
ভারতীয়দের অন্ধবিশ্বাসের পরিবর্তে যুক্তিবাদ গ্রহণ, স্বাধীনতা এবং মানবত্মার মহত্ত্ব প্রতিষ্ঠায় রাজা রামমোহন রায় উল্লেখযোগ্য অবদান রেখে গেছেন। ঊনবিংশ শতাব্দীর বাংলা সমাজ, সংস্কৃতি এবং বাঙালির মনে রাজা রামমোহন রায়ের সুষ্পষ্ট প্রভাব বর্তমান। তাই তাঁকে বাংলা তথা ভারতের নবজাগরণের জনক বা আধুনিকতার অগ্রপথিক রূপে বর্ণনা করা হয়। রবীন্দ্রনাথ রামমোহন সম্পর্কে বলেন- “Rammohan Roy inaugurated the Modern Age in India.” বাস্তবে বাংলার শিক্ষা, সংস্কৃতি, সাহিত্য, ধর্ম, সমাজ সর্বক্ষেত্রেই রামমোহন রায় সংস্কারসাধন করে আধুনিকতার বীজ বপন করেন। এইজন্য শিক্ষার ইতিহাসে তাঁর অবদান চিরদিন অমলিন থাকবে।
বর্তমান ভারতের অগ্রগতি রামমোহনের চিন্তাভাবনার ফসল
ঊনবিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে রামমোহন যেভাবে সমাজসংস্কার , ধর্মসংস্কার, শিক্ষাসংস্কার সব ক্ষেত্রেই অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছিলেন তা আজকের এই দিনে বিস্ময়ের উদ্রেক করে। ঊনবিংশ শতকের শুরুতে রামমোহনের প্রবল চিন্তাভাবনা সমাজের অভ্যস্ত জড়ত্বের উপর বারবার আঘাত হেনে এক নবজীবনের চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছিল। ধর্ম, সমাজ, অর্থনীতি, রাজনীতি প্রায় সকলক্ষেত্রেই অধঃপতিত জাতিকে টেনে তোলার জন্য রামমোহন সমস্ত প্রতিকূল শক্তির বিরুদ্ধে একা দাঁড়িয়ে যে কী অসাধ্যসাধনের চেষ্টা করেছিলেন, আজকের দিনে তার ধারণা করা কঠিন। রবীন্দ্রনাথ-এর ভাষায় বলতে হয়- “তিনি (রামমোহন) কী না করিয়াছিলেন? শিক্ষা বলো, রাজনীতি বলো, বঙ্গভাষা বলো, বঙ্গসাহিত্য বলো, ধর্ম বলো, সমাজ বলো, বঙ্গসমাজের যে-কোনো বিভাগে উত্তরোত্তর যতই উন্নতি হইতেছে, সে কেবল তাঁহারই হস্তাক্ষর নতুন নতুন পৃষ্ঠায় উত্তরোত্তর পরিস্ফুটতর হইয়া উঠিতেছে মাত্র।”
আরও পড়ুন – মধ্যযুগীয় ভারতের শিক্ষা প্রশ্ন উত্তর