ভাষার বিকাশে রাজা রামমোহন রায়-এর অবদান আলোচনা করো

ভাষার বিকাশে রাজা রামমোহন রায়-এর অবদান আলোচনা করো

ভাষার বিকাশে রাজা রামমোহন রায়-এর অবদান আলোচনা করো।
ভাষার বিকাশে রাজা রামমোহন রায়-এর অবদান আলোচনা করো।

ভাষার বিকাশে রাজা রামমোহন রায়ের অবদান 

রাজা রামমোহন রায়ের বহুমুখী প্রতিভার মধ্যে সাহিত্যচর্চা ছিল অন্যতম। যার মধ্য দিয়ে তাঁর ভাষাবিকাশের বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে ওঠে। এই ভাষাবিকাশের ক্ষেত্রে রাজা রামমোহন রায়ের অবদানগুলি হল-

(1) বাংলা সাহিত্যচর্চার অবদান : রাজা রামমোহন রায় সাহিত্যচর্চায় ব্রতী হয়েছিলেন কারণ তাঁর সমাজসংস্কার, ধর্মসংস্কার ও প্রগতিমূলক চিন্তাভাবনাকে তিনি ভাষার রূপ দিতে চেয়েছিলেন। যদিও রামমোহন রায়ের গদ্য তেমন শ্রুতিমধুর না হলেও লেখক হিসেবে তিনি সাহিত্য জগতে শক্তিধর প্রতিভার পরিচয় দেন।  এই প্রসঙ্গে শ্রীকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় রাজা রামমোহন রায় প্রসঙ্গে বলেছিলেন- “বাংলা সাহিত্যে তিনিই (রামমোহন) সর্বপ্রথম লেখক যিনি আধুনিক অনুশীলিত মন লইয়া গদ্য রচনায় আত্মনিয়োগ করিয়াছেন, তাঁহার গদ্য ললিতমধুর না হইলেও মননদীপ্ত ও ভাবের সমুন্নতিতে মর্যাদাময়।” তিনি ধর্ম সম্বন্ধে বিভিন্ন পুস্তক, শাস্ত্রবিচার, বিবাদমূলক রচনা, ব্যাকরণ ইত্যাদি সৃষ্টির মাধ্যমে বাংলা গদ্য ও সাহিত্য জগতে যথেষ্ট কৃতিত্বের দাবি রাখেন। 1815 সালে তাঁর প্রথম গদ্যগ্রন্থ বেদান্ত গ্রন্থ প্রকাশ পায়। এ ছাড়া 1833 সালে গৌড়ীয় ব্যাকরণ নামে ব্যাকরণ বইটি প্রকাশিত হয়।

(2) বাংলা প্রবন্ধ রচনায় অবদান : বাংলা প্রবন্ধ রচনার ক্ষেত্রেও রাজা রামমোহন রায় যথেষ্ট ভূমিকা পালন করেছিলেন। গুরুগম্ভীর বিষয় নিয়ে বাংলা প্রবন্ধ রচনার একজন অন্যতম প্রবর্তক হিসেবে পরিচিতি পান তিনি। তিনি বহু তর্ক ও বিচারমূলক পুস্তক রচনা করছিলেন।

(3) অনুবাদকরূপে রামামাহানর অবদান : রাজা রামমোহন রায় সংস্কৃত শাস্ত্রগ্রন্থ বাংলা ভাষায় অনুবাদ করে প্রকাশ করেন যা তাঁর শব্দ সম্পদের বৃদ্ধিকে ত্বরান্বিত করে। এ ছাড়াও তিনি বেদ, বেদান্ত এবং উপনিষদ প্রভৃতি গ্রন্থের অনুবাদও করেন। কারণ তিনি চেয়েছিলেন এই অমূল্য সম্পদকে সর্বজনীন করে তুলতে।

(4) ভাষাচর্চায় রামমোহনের অবদান: রাজা রামমোহন রায় ভাষা নিয়ে বহু পরীক্ষানিরীক্ষা করেছেন এবং এর পরিপ্রেক্ষিতেই বাংলা ভাষায় সহজভাবে জটিল বিষয়ের উপস্থাপনের উপর তিনি বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন। সর্বোপরি রাজা রামমোহন রায় মাতৃভাষায় শিক্ষাগ্রহণের প্রতি সবথেকে বেশি গুরুত্ব প্রদান করেছেন। সবশেষে বলা যায় ভারত পথিক রাজা রামমোহন রায় স্টাইলের দিকে নজর না দিয়ে বক্তব্যের দিকেই বেশি দৃষ্টিপাত করেছেন। তাই তাঁর হাতে বাংলা গদ্যসাহিত্যের যে রূপ পরিস্ফুট হয়েছিল তাতে মাধুর্য না থাকলেও, স্পষ্টতা ছিল।

আরও পড়ুন – মধ্যযুগীয় ভারতের শিক্ষা প্রশ্ন উত্তর

Leave a Comment