জাতীয় শিক্ষা আন্দোলনের তৃতীয় পর্যায়ের বিবরণ দাও। বুনিয়াদি শিক্ষার মধ্য দিয়ে জাতীয় শিক্ষা আন্দোলন কীভাবে সংহত রূপ লাভ করেছিল

জাতীয় শিক্ষা আন্দোলনের তৃতীয় পর্যায়ের সময়কাল হল- 1937 সাল থেকে পরবর্তী সময়কাল পর্যন্ত। আন্দোলনের দুটি পর্যায়ের অভিজ্ঞতা থেকে জাতীয় নেতারা উপলব্ধি করেছিলেন যে, পরাধীন অবস্থায় থেকে জাতীয় শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে তোলা সম্ভব নয়। তাই তাঁরা প্রত্যক্ষ আন্দোলনের পথ ত্যাগ করলেন। তার মানে এই নয় যে, আন্দোলনের ধারা সমাপ্ত হয়েছিল। আসলে নেতারা কৌশল পরিবর্তন করেছিলেন। নেতারা সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি করার নীতি গ্রহণ করেন। এই স্তরে স্কুল-কলেজ প্রতিষ্ঠার আন্দোলন হয়নি, বরং ভবিষ্যতে জাতীয় শিক্ষার রূপ নির্ণয়ের প্রয়াস হয়েছে।
সমাজের অস্পৃশ্যতা ও কুসংস্কার দূর করার জন্য বিভিন্ন ধরনের শিক্ষামূলক কর্মসূচি গ্রহণ করা যায়। 1935 খ্রিস্টাব্দে ভারত শাসন আইন পাশ হবার পর কংগ্রেস ভারতের 7টি প্রদেশে মন্ত্রীসভা গঠন করতে সমর্থ হয়। কংগ্রেস শাসিত প্রদেশে জাতীয় শিক্ষাব্যবস্থা প্রবর্তনের জন্য জাতীয় পরিকল্পনা রচনার প্রয়োজন অনুভূত হয়। কংগ্রেস প্রথম থেকেই ঘোষণা করেছিল যে, শাসনব্যবস্থা তাদের হাতে এলে প্রাথমিক শিক্ষাকে অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক করা হবে। কিন্তু এর জন্য যে বিপুল অর্থের প্রয়োজন, তা দারিদ্র্য, শোষিত দেশের পক্ষে সম্ভব নয়।
বুনিয়াদি শিক্ষার মধ্য দিয়ে জাতীয় শিক্ষা আন্দোলনের সংহত রূপ
কংগ্রেস মন্ত্রিসভা যখন চরম সমস্যার সম্মুখীন, তখন মহাত্মা গান্ধি এগিয়ে এলেন তাঁর নতুন শিক্ষা পরিকল্পনা নিয়ে। দারিদ্র্য দেশের উপযোগী শিক্ষার ব্যবস্থা করা নিয়ে যখন কংগ্রেস দিশেহারা সেইসময় 1937 খ্রিস্টাব্দে ‘হরিজন’ পত্রিকায় গান্ধিজি এক নতুন শিক্ষা পরিকল্পনার কথা উল্লেখ করলেন। গান্ধিজির প্রস্তাব অনুসরণ করে জাকির হোসেনের সভাপতিত্বে এক কমিটি এই শিক্ষাব্যবস্থার কার্যকরী রূপরেখা তৈরি করলেন। জন্ম নিল এক নতুন শিক্ষা পরিকল্পনা বুনিয়াদি শিক্ষা। বুনিয়াদি শিক্ষাকে কার্যকরী করার জন্য প্রতিষ্ঠিত হল ‘হিন্দুস্থান তালিমি সংঘ’ কেন্দ্রীয় শিক্ষা উপদেষ্টা পর্ষদ (Central Advisory Board of Education, বা CABE) এই শিক্ষাব্যবস্থাকে জাতীয় শিক্ষাব্যবস্থারূপে স্বীকৃতি দিলেন।
1945 সালে গান্ধিজি তাঁর প্রবর্তিত শিক্ষাব্যবস্থায় কিছু পরিবর্তন করেন, নাম দিলেন ‘নঈ-তালিম’। জাতীয় শিক্ষা আন্দোলন সংহত রূপ লাভ করে ‘নঈ তালিম’ শিক্ষার মধ্য দিয়ে। জাতীয় শিক্ষাব্যবস্থার এটিই মূল ভিত্তি হয়ে ওঠে। সর্বজনীন অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষাকে অর্থের জন্য পিছিয়ে দেওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই, শিক্ষা হবে শিল্পকেন্দ্রিক এবং স্বনির্ভর। 1944 সালে সার্জেন্ট রিপোর্ট-এ বুনিয়াদি শিক্ষাকে জাতীয় শিক্ষা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। তাই এই তৃতীয় পর্যায়ের আন্দোলন উত্তেজনাপূর্ণ না হলেও ভারতবাসীকে উপযোগী এবং কার্যকরী একটি জাতীয় শিক্ষাব্যবস্থা উপহার দিতে সমর্থ হয়েছিল।
আরও পড়ুন – মধ্যযুগীয় ভারতের শিক্ষা প্রশ্ন উত্তর