জাতীয় শিক্ষা আন্দোলনের দ্বিতীয় পর্যায়ের ফলশ্রুতি কী ছিল

(1) জাতীয় শিক্ষা আন্দোলনের দ্বিতীয় পর্যায়ের ফলশ্রুতি : গান্ধিজির অসহযোগ আন্দোলনের (1920 সাল) আহ্বান থেকে 1937 সাল পর্যন্ত সময়কালকে জাতীয় শিক্ষা আন্দোলনের দ্বিতীয় পর্যায় বলে চিহ্নিত করা হয়।
জাতীয় শিক্ষা আন্দোলনের দ্বিতীয় পর্যায় ভারতে জাতীয় শিক্ষাব্যবস্থার পরবর্তী বিকাশে স্থায়ী প্রভাব রাখতে সক্ষম হয়েছে, শিক্ষাবিদগণ এই মন্তব্য করেছেন। স্বাভাবিকভাবে মনে প্রশ্ন আসে, কেন এই প্রভাব স্থায়ী হল? প্রথম ও দ্বিতীয় পর্যায়ের আন্দোলনের বৈশিষ্ট্যগুলি তুলনা করলে এর সদুত্তর পাওয়া যায়।
(1) 1921-22 খ্রিস্টাব্দে সমস্ত ভারতে 1227টি জাতীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্রসংখ্যা ছিল 78, 571 জন। ফলে সরকার অনুমোদিত স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রসংখ্যা হ্রাস পায়।
(2) জাতীয় শিক্ষার প্রকৃতি কী হবে, সে ব্যাপারে প্রথম পর্যায়ের নেতাদের মধ্যে মতবিরোধ ছিল। তার ফলে নেতৃবর্গ কোনো একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্যে সিদ্ধান্ত নিতে অসমর্থ ছিল। কিন্তু দ্বিতীয় পর্যায়ে, আন্দোলনের সময় জাতীয় শিক্ষা সংক্রান্ত ধারণা এবং লক্ষ্য সম্পর্কে নেতারা মোটামুটি একমত ছিলেন। জাতীয় শিক্ষার অর্থ, পাশ্চাত্য শিক্ষা বর্জন নয়, বরং ভারতীয় শিক্ষার আদর্শ ও ঐতিহ্যের সঙ্গে পাশ্চাত্য শিক্ষার সমন্বয়ই ছিল দ্বিতীয় পর্যায়ের আন্দোলনের প্রধান বৈশিষ্ট্য।
(3) প্রথম পর্যায়ে, বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনকে কেন্দ্র করে শিক্ষা আন্দোলন গড়ে উঠেছিল। তাই নেতারা বেশিরভাগ ছিলেন বাঙালি আর বাংলার মধ্যেই আন্দোলন সীমাবদ্ধ ছিল। দ্বিতীয় পর্যায়, গান্ধিজির অসহযোগ আন্দোলনকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছিল, তার বিস্তৃতি ছিল ভারতব্যাপী।
(4) প্রথম পর্যায়ে নেতারা মূলত ভারতীয় ঐতিহ্য ও হিন্দু সংস্কৃতিভিত্তিক শিক্ষাব্যবস্থার কথা বলেছিলেন। ফলে মুসলিম সম্প্রদায় প্রথম পর্যায়ে, জাতীয় শিক্ষা আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা গ্রহণ করেননি। কিন্তু দ্বিতীয় পর্যায়ের আন্দোলনে মুসলমান সম্প্রদায়ের একটি বড়ো অংশ আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেছিলেন। উভয় সম্প্রদায় সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছিলেন বলে, এই আন্দোলন স্থায়ী প্রভাব রাখতে সক্ষম হয়েছিল।
(5) প্রথম পর্যায়ের আন্দোলন ছিল অসংহত, বিশৃঙ্খল ও বিচ্ছিন্ন, আবেগ ও উত্তেজনাই ছিল মূল শক্তি। তাই আন্দোলন দুর্বল হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলি অচল হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু দ্বিতীয় পর্যায়ের আন্দোলন সংহত ও সুপরিকল্পিত হওয়ায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলি স্থায়িত্ব লাভ করেছিল।
(6) এই আন্দোলনের ফলে বৃত্তি ও কারিগরি শিক্ষার ব্যবস্থা করা হয়।
(7) নারীশিক্ষার জন্য পৃথক পাঠ্যসূচি রচিত হয়।
(৪) ভারতের প্রাচীন ও আধুনিক ভাষাসমূহ শিক্ষাসূচিতে স্থান লাভ করে। এই সমস্ত কারণে দ্বিতীয় পর্যায়ের জাতীয় শিক্ষা আন্দোলন জাতীয় শিক্ষা প্রচেষ্টার ইতিহাসে স্থায়ী প্রভাব বিস্তার করতে সমর্থ হয়েছিল।
আরও পড়ুন – মধ্যযুগীয় ভারতের শিক্ষা প্রশ্ন উত্তর