1905 সালের জাতীয় শিক্ষা আন্দোলনের গুরুত্ব আলোচনা করো

জাতীয় শিক্ষা আন্দোলনের প্রভাব বা গুরুত্ব
প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থায় এই আন্দোলনের প্রভাব ছিল সুদূরপ্রসারী। বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থার বুনিয়াদ জাতীয় শিক্ষা আন্দোলনের ফল এবং সুদূরপ্রসারী প্রভাবগুলি হল-
(1) পরামর্শ: ভারতে প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থার দোষ-ত্রুটি ছিল প্রথম পরামর্শ।
(2) সংস্কার: প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থার সংস্কার নিয়ে ত্রুটি ছিল প্রথম আন্দোলনে যার ফলে ইংরেজ সরকার বুঝেছিল এই শিক্ষার পুনর্গঠন প্রয়োজন।
(3) স্কুল-কলেজ : আন্দোলনের ফলশ্রুতি হিসেবে ভারতের বিভিন্ন স্থানে অনেকগুলি স্কুল ও কলেজ স্থাপিত হয়, যার মধ্যে অনেকগুলি বন্ধ হয়ে গেলেও আজও আন্দোলনের স্মৃতি হিসেবে বেঁচে আছে। যেমন- যাদবপুর কারিগরি ও ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, শান্তিনিকেতনের ব্রহ্মচর্যাশ্রম, হরিদ্বারে গুরুকুল বিদ্যালয়, বৃন্দাবন বিদ্যালয়।
(4) সাচতনতা বৃদ্ধি : জাতীয় শিক্ষা আন্দোলনে ভারতীয়দের নানা দিক থেকে সচেতন করে তোলে, যা পরবর্তীকালে ইংরেজ বিরোধিতাকে শক্তিশালী করেছিল।
(5) মাতৃভাষার প্রসার: জাতীয় শিক্ষা আন্দোলনের ফলে মাতৃভাষার প্রচার এবং প্রসার দেখা যায়, যা সাহিত্যচর্চার নতুন প্রেরণা সৃষ্টি করেছিল।
(6) জাতীয় সংস্কৃতির প্রতি দৃষ্টিপাত: জাতীয় শিক্ষা আন্দোলন জাতীয় সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের প্রতি শিক্ষিত মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে, যা পরবর্তী কালে ভারত সম্পর্কে ভাবতে সাহায্য করেছিল।
(7) গণশিক্ষা: এই আন্দোলন গণশিক্ষার প্রয়োজনীয়তাকে সাধারণের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে সাহায্য করেছিল।
(৪) নারীশিক্ষা: এই আন্দোলনের ফলে প্রাদেশিক আইন সভায় নারীশিক্ষা সম্পর্কে আলোচনা করা হয় এবং এর প্রচার ও প্রসার ঘটে।
(9) প্রাদেশিক শিক্ষা : 1918-1922 সালের মধ্যে প্রাদেশিক আইন সভায় প্রাথমিক শিক্ষা আইন পাশ করা হয়। প্রাথমিক শিক্ষাকে ত্বরান্বিত করে।
(10) বুনিয়াদি শিক্ষা পরিকল্পনা: এই শিক্ষা পরিকল্পনা জাতীয় আন্দোলনের ফসল। তখন বুনিয়াদি শিক্ষাব্যবস্থা ছিল জাতীয় শিক্ষাব্যবস্থার ভিত্তি।
(11) ভারতীয় কারণ: শিক্ষা আন্দোলনের আগে সমগ্র শিক্ষাব্যবস্থায় ছিল ইংল্যান্ডের সুস্পষ্ট ছায়া। কিন্তু শিক্ষা আন্দোলনের পর শিক্ষার সর্বত্র দেশাত্ববোধের পরিবেশ ও আবহাওয়া সৃষ্টি হয়।
(12) বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবনা: জাতীয় শিক্ষা আন্দোলনের ফলে দেশে নতুন নতুন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পরিবেশ তৈরি হয়। কারণ যে স্বাধীনচিন্তার আবহাওয়া তৈরি হয়েছিল, তা বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও গবেষণার পথকে প্রশস্ত করেছিল। জাতীয় শিক্ষা আন্দোলন শিক্ষার যে নতুন চিন্তা ও চেতনার উর্বর পলিমাটি সৃষ্টি করেছিল, তার উপর দাঁড়িয়ে ভবিষ্যতের জাতীয় শিক্ষা প্রবর্তনের কর্মপন্থা রচিত হয়েছিল।
আরও পড়ুন – মধ্যযুগীয় ভারতের শিক্ষা প্রশ্ন উত্তর