নারীশিক্ষা ও উচ্চশিক্ষা বিষয়ে হান্টার কমিশনের সুপারিশগুলি লেখো এবং উচ্চশিক্ষা সম্পর্কিত সুপারিশগুলির মূল্যায়ন করো

নারীশিক্ষা সংক্রান্ত বিষয়ে হান্টার কমিশনের সুপারিশসমূহ
নারীশিক্ষা বিষয়ে হান্টার কমিশনের সুপারিশগুলি হল-
(1) হান্টার কমিশনে নারীসমাজের মধ্যে শিক্ষাবিস্তারের জন্য পৃথক বালিকা বিদ্যালয় স্থাপনের সুপারিশ করা হয়।
(2) দেশের বিপুল অংশের নারীরা যাতে শিক্ষার প্রতি আকর্ষণ বোধ করতে পারে, তার জন্য এবং নারীশিক্ষা প্রসারে উৎসাহ দিতে বিদ্যালয়গুলির বেতন হার সম্পর্কে সুবিধাদানের কথাও বলা হয়।
(3) নারীশিক্ষার বিস্তার ঘটানোর জন্য পাঠক্রমের উপরও হান্টার কমিশনে বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করা হয়। তাদের জন্য পৃথক পাঠক্রম রচনার কথাও বলা হয়।
(4) মেয়েদের নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাবহারিক জীবনের উপযোগী পাঠক্রম রচনার প্রতিও বিশেষ দৃষ্টি দেওয়ার কথা হান্টার কমিশনে বলা হয়।
(5) মেয়েদের জন্য স্থাপিত বিদ্যালয়গুলিতে যেসকল শিক্ষিকারা শিক্ষাদান করবেন, তাদের জন্য বিশেষ ট্রেনিং-এর ব্যবস্থা করা এবং যাতে তারা গ্রামাঞ্চলে গিয়ে কাজ করতে পারে সে বিষয়ে উৎসাহ দিতে হবে বলে উল্লেখ করা হয়।
(6) আবাসিক বালিকা বিদ্যালয়গুলির জন্য বিশেষ আর্থিক সাহায্য দানের ব্যবস্থা করার সুপারিশ করা হয়।
(7) বালিকা বিদ্যালয়গুলির শিক্ষিকাদের প্রশিক্ষণের জন্য পৃথকভাবে ‘ন্যাল স্কুল’ প্রতিষ্ঠা করারও সুপারিশ করা হয় হান্টার কমিশনে।
(৪) মেয়েদের জন্য পৃথকভাবে স্থাপিত বিদ্যালয় তথা নারী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলিতে পরিদর্শনের জন্য মহিলা পরিদর্শক নিয়োগ করার সুপারিশ করা হয়।
(9) শিক্ষার সুযোগ যাতে অনুন্নত অঞ্চলের মেয়েদের মধ্যেও প্রসারিত হয়, তার জন্য অনুন্নত অঞ্চলগুলিতে বেশ কিছু বালিকা বিদ্যালয় গড়ে তুলতে হবে-এ কথাও হান্টার কমিশনের সুপারিশে উল্লেখ করা হয়।
(10) নিরক্ষর মহিলাদের মধ্যে শিক্ষার বিস্তার ঘটানোর জন্য কমিশন বিশেষভাবে ‘নারী নৈশ বিদ্যলয়’ স্থাপনের পরামর্শ দেয়।
উচ্চশিক্ষার বিষয়ে হান্টার কমিশনের সুপারিশসমূহ
উচ্চশিক্ষা সম্পর্কে হান্টার কমিশনের সুপারিশগুলি হল-
(1) সরকারি নিয়ন্ত্রণ প্রত্যাহার: কলেজের শিক্ষার ক্ষেত্র থেকে অর্থাৎ উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে সাধারণভাবে সরকারি প্রচেষ্টা বন্ধ করার কথা বলা হয় হান্টার কমিশনে।
(2) বেসরকারি শিক্ষাপ্রচেষ্টাকে উৎসাহদান: এই কমিশনের সুপারিশে আরও বলা হয় যে, উচ্চশিক্ষায় বেসরকারি প্রচেষ্টাকে উদারভাবে অর্থ সাহায্য করতে হবে। দেশে বেসরকারি উদ্যোগে যাতে কলেজ গড়ে ওঠে সে বিষয়ে সরকার উৎসাহ প্রদান করবে বলে উল্লেখ করা হয়।
(3) বিদেশে শিক্ষার ব্যবস্থা: উচ্চশিক্ষা সমাপ্ত করে আরও উচ্চতর শিক্ষালাভের জন্য মেধাবী ছাত্ররা যাতে বিদেশযাত্রা করতে পারে, তার জন্য সরকার যাতে সক্রিয় উদ্যোগ গ্রহণ করে, সে বিষয়ে হান্টার কমিশনে বিশেষ সুপারিশ করা হয়।
(4) পাঠক্রমে ঐচ্ছিক বিষয় সংযোজন : শিক্ষার্থীদের ক্ষমতা ও পছন্দ অনুযায়ী, শিক্ষাগ্রহণের উদ্দেশ্যে কমিশন বড়ো বড়ো কলেজ ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলির পাঠক্রমে ঐচ্ছিক বিষয় সংযোজনের জন্য সুপারিশ করেছিল।
(5) বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন হান্টার কমিশনে দেশে উচ্চশিক্ষার : প্রয়োজনীয়তার কথা বিবেচনা করে উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশে একটি নতুন বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের সুপারিশ করা হয়।
(6) মডেল কলেজ স্খাপনের সুপারিশ: এই কমিশনের অন্যতম সুপারিশ হিসেবে কতকগুলি মডেল কলেজ স্থাপনের কথা বলা হয়। সরকার পরিচালিত এই আদর্শ কলেজগুলি বেসরকারি কলেজগুলির কাছে মডেল হিসেবে কাজ করবে বলে উল্লেখ করা হয়।
(7) অবৈতনিক শিক্ষার সুযোগ : নির্দিষ্ট সংখ্যক দুঃস্থ ও মেধাবী ছাত্রদের জন্য অবৈতনিক শিক্ষা ও বিশেষ বৃত্তি প্রদানের কথাও বলা হয়।
(৪) কলেজগুলির সরকারি সাহায্য পাওয়ার শর্ত: হান্টার কমিশনের সুপারিশে কলেজগুলিকে সাহায্য করার ক্ষেত্রে অধ্যাপক, পরিচালনার ব্যয়, কলেজে শিক্ষার মান, স্থানীয় উপযোগিতা, গ্রন্থাগার, ছাত্রসংখ্যা প্রভৃতি বিচার করা হবে।
মূল্যায়ন: উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে হান্টার কমিশনের সুপারিশগুলির বিভিন্ন নেতিবাচক দিকও ছিল, যা সমালোচনার ঊর্ধ্বে নয়।
(1) উডের ডেসপ্যাচের কার্যকারিতা সম্পর্কে অনুসন্ধানের জন্য হান্টার কমিশন গঠিত হয়েছিল, উচ্চশিক্ষা সম্পর্কে পর্যালোচনার জন্য নয়। ফলে উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থাকে বাস্তবায়িত করার প্রয়োজনীয় উদ্যোগ সরকার গ্রহণ করেনি।
(2) তবে সমালোচনা সত্ত্বেও বলা যায় যে, এই সুপারিশের কিছু ইতিবাচক দিক অবশ্যই আছে, যা পরবর্তীকালে স্যাডলার কমিশনে প্রতিফলিত হয়েছিল।
আরও পড়ুন – মধ্যযুগীয় ভারতের শিক্ষা প্রশ্ন উত্তর