উডের ডেসপ্যাচের ত্রুটিগুলি আলোচনা করো

উডের ডেসপ্যাচের ত্রুটিগুলি আলোচনা করো

উডের ডেসপ্যাচের ত্রুটিগুলি আলোচনা করো
উডের ডেসপ্যাচের ত্রুটিগুলি আলোচনা করো

উডের ডেসপ্যাচের ত্রুটিসমূহ

উডের ডেসপ্যাচ ভারতবর্ষের শিক্ষাবিস্তারের ইতিহাসে এক উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ হলেও, তা ত্রুটিমুক্ত ছিল না। এর ত্রুটিগুলি হল-

(1) এই প্রতিবেদন শিক্ষা সংক্রান্ত বিষয়ে ভারতবাসীর আশা-আকাঙ্ক্ষা ও স্বপ্নপূরণ করতে ব্যর্থ হয়।

(2) এই শিক্ষাব্যবস্থা সর্বজনীন ছিল না। দূরবর্তী গ্রামগুলিতে পাশ্চাত্য শিক্ষা প্রসারের জন্য কোনো উদ্যোগ লক্ষ করা যায়নি।

(3) জাতীয় শিক্ষাব্যবস্থা সম্পর্কে উডের ডেসপ্যাচে কোনো সুপারিশ করা হয়নি।

(4) ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বাণিজ্যিক মনোভাব এই প্রতিবেদনে স্পষ্ট হয়ে উঠেছিল। ফলে শিক্ষাগত স্বার্থ ক্ষুণ্ণ হয়েছিল।

(5) উডের ডেসপ্যাচে শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে মাতৃভাষা ও ইংরেজি এই দুই ভাষার মাধ্যমে শিক্ষাদানের কথা বলা হলেও, কার্যক্ষেত্রে মাতৃভাষাকে আবশ্যিক করা হয়নি।

(6) জাতীয় শিক্ষার উপরে গুরুত্ব প্রদান না করায় ভারতীয় শিক্ষা, প্রাচীন সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য অবহেলিত থেকে গিয়েছিল।

(7) উডের প্রতিবেদনে উচ্চশিক্ষার সুসংগঠিত ব্যবস্থার কথা বলা হলেও প্রকৃতপক্ষে এই শিক্ষা বিশেষ একশ্রেণির জন্য নির্দিষ্ট ছিল, তা সকলের জন্য ছিল না।

(8) দেশীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলির শক্তি ও সম্ভাবনার মূল্যায়নের কোনো প্রচেষ্টা এখানে করা হয়নি।

(9) ইংরেজ সরকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলিকে এমন এক সরকারি ব্যবস্থায় কেন্দ্রীভূত করেছিল যে, এদেশের শিক্ষাক্ষেত্রে আমলাতন্ত্রের রাজত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়।

(10) ডেসপ্যাচে শিক্ষার লক্ষ্য হিসেবে বলা হয়েছিল, শিক্ষার মাধ্যম দিয়ে যোগ্য, নৈতিক বুদ্ধিসম্পন্ন, বিশ্বাসী সরকারি কর্মচারী সৃষ্টি হবে। এ বক্তব্য থেকে যে সরকারি মনোভাব ফুটে উঠেছিল তা হল, কোম্পানির স্বার্থেই ডেসপ্যাচে ভারতের শিক্ষানীতি নির্ধারিত হয়েছিল।

(11) একটি বিশেষ গোষ্ঠীর সংকীর্ণ উদ্দেশ্যসাধনের জন্য শিক্ষাব্যবস্থা পরিচালিত হয়েছিল।

(12) ইংরেজ সরকার ভারতে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় প্রভৃতি বিভিন্ন পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলিকে এমন এক সরকারি ব্যবস্থায় কেন্দ্রীভূত করেছিল যে, তার ফলেই এদেশে শিক্ষার ক্ষেত্রে আমলাতন্ত্রের রাজত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়। বহুবিধ ত্রুটি থাকা সত্ত্বেও, উডের ডেসপ্যাচের বিভিন্ন ইতিবাচক দিকও ছিল গুরুত্বপূর্ণ। পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসারের ফলে ভারতবাসী জাতীয়তাবাদ, মানবতাবাদ, গণতন্ত্র প্রভৃতি আদর্শগুলির সঙ্গে পরিচিত হওয়ার সুযোগ লাভ করে। পাশ্চাত্য জ্ঞান-বিজ্ঞান, সাহিত্য প্রভৃতি সম্পর্কে শিক্ষালাভ করে ভারতীয়রা গোঁড়ামিহীন তথা কুসংস্কারমুক্ত মন নিয়ে সমাজ ও সভ্যতার প্রগতিতে নিজেদের নিয়োজিত করে। তাই এ কথা বলা যায়, ভারতের শিক্ষাব্যবস্থায় চার্লস উড-এর ডেসপ্যাচের যথেষ্ট গুরুত্ব আছে।

আরও পড়ুন – মধ্যযুগীয় ভারতের শিক্ষা প্রশ্ন উত্তর

Leave a Comment