1813 সালে চার্টার অ্যাক্টে উল্লিখিত শিক্ষা বিষয়ক এবং মিশনারি সংক্রান্ত ধারা দুটি কতটা কার্যকরী হয়েছিল, তা লেখো। 1813 সালে চার্টার অ্যাক্টের বিষয়বস্তু আলোচনায় প্রাচ্যবাদী ও পাশ্চাত্যবাদী মতামত লেখো

শিক্ষা বিষয়ক ও মিশনারি বিষয়ক ধারা দুটির কার্যকারিতা
(1) শিক্ষা বিষয়ক ধারাটিকে নিঃসন্দেহে সরকারিভাবে ভারতে শিক্ষাবিস্তারের প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে উল্লেখ করা যেতে পারে। এই ধারায় শিক্ষাবিস্তার, শিক্ষানীতি নির্ধারণ ও শিক্ষার জন্য রাজকোশ থেকে অর্থব্যয়-এগুলির দায়িত্ব শাসক কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে প্রথম স্বীকৃতি লাভ করে।
(2) সনদ আইনের 13 নং মিশনারি সংক্রান্ত ধারাটিতে প্রত্যক্ষভাবে মিশনারিদের কোনো উল্লেখ ছিল না। তবে, এই ধারায় তাদের উপর কোম্পানি কর্তৃক আরোপিত বিধিনিষেধ প্রত্যাহৃত হয়। তারা ভারতে বসবাসের এবং স্বাধীনভাবে ধর্মপ্রচার ও শিক্ষাবিস্তারের অধিকার লাভ করে। তাই এ কথা নিঃসন্দেহে বলা যায়, কিছু ত্রুটিবিচ্যুতি থাকলেও ভারতের শিক্ষাব্যবস্থার এক সুনির্দিষ্ট কাঠামো রচিত হয় 1813 সালের সনদ আইনের মাধ্যমে।
ভারতবর্ষে বাণিজ্য বিস্তারের উদ্দেশ্যে ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির আগমন ঘটলেও পরবর্তীকালে ভারতের সমাজ, অর্থনীতি ও রাজনীতিতে তারা প্রাধান্য প্রতিষ্ঠায় অগ্রসর হয়। প্রাথমিক পর্বে কেবলমাত্র অর্থনৈতিক ও প্রশাসনিক ক্ষেত্রে কোম্পানি মনোনিবেশ করলেও শিক্ষাবিস্তারের বিষয়ে খুব একটা উৎসাহ প্রদর্শন করেনি। এমতাবস্থায় তৎকালীন গর্ভনর জেনারেল লর্ড মিন্টো 1810 সালে এক প্রতিবেদন পেশ করে ভারতে শিক্ষার ক্ষেত্রে শোচনীয়তার কথা তুলে ধরেন, এই প্রতিবেদনের উপর ভিত্তি করে 1813 সালে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে মিশনারি ও শিক্ষা বিষয়ক এক প্রস্তাবনা উত্থাপিত হয়। এরই ফলশ্রুতিস্বরূপ 1813 সালের চার্টার অ্যাক্টের সূচনা হয়।
1813 খ্রিস্টাব্দের চার্টার অ্যাক্টের বিষয়বস্তু আলোচনায় প্রাচ্যবাদী ও পাশ্চাত্যবাদী মতামত
- প্রাচ্যবাদীদের মতামত: রক্ষণশীল সরকারি কর্মচারীগণ, দেশের প্রাচীন মনোভাবাপন্ন পণ্ডিতগণ ভারতবর্ষে প্রাচ্য শিক্ষার উদ্দেশ্যে অর্থব্যয়ের পক্ষে ছিলেন। তৎকালীন বাংলা বিভাগের সেক্রেটারি এইচ টি প্রিন্সেপ এই দলের নেতৃত্বদান করেছিলেন। প্রাচ্যবাদীদের মত বা বক্তব্যগুলি হল-
- প্রাচ্যবাদীরা মনে করেন যে, সরকারি শিক্ষানীতির মূল উদ্দেশ্য যদি ভারতের চিরাচরিত বা ঐতিহ্যপূর্ণ সাহিত্য ও বিজ্ঞানের সংরক্ষণ হয় তবেই দেশবাসীর হৃদয় জয় করা সম্ভব হবে।
- তাঁদের মতানুযায়ী শিক্ষার মাধ্যম হওয়া উচিত সংস্কৃত, আরবি ও ফারসি ভাষা। কারণ এর মাধ্যমেই প্রাচীন ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি সংরক্ষিত হবে।
- প্রাচ্যবাদীরা শিক্ষার বিষয়বস্তু হিসেবে প্রাচীন সাহিত্য, দর্শন, ধর্মতত্ত্ব অধ্যয়নের কথা বলেছিলেন।
- পাশ্চাত্যবাদীদের মতামত: বেশ কিছু মিশনারি, নতুন সরকারি কর্মচারী, ইংরেজ মনীষী ও দেশীয় নেতারা ভারতবর্ষে পাশ্চাত্য শিক্ষার উদ্দেশ্যে অর্থব্যয়ের পক্ষে ছিলেন। সি ই ট্রেভেলিয়ন এই দলের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। এদের মতগুলি হল-
- পাশ্চাত্যবাদীদের কাছে সাহিত্য বলতে কেবলমাত্র ইংরেজি সাহিত্যই প্রাধান্য পেয়েছে। তাঁরা মনে করেন যে, প্রাচীন সাহিত্য, ধর্মতত্ত্ব, দর্শন এগুলি অপ্রয়োজনীয়-এগুলির জন্য অর্থ ব্যয়ের কোনো প্রয়োজন নেই। পাশ্চাত্য শিক্ষার মাধ্যমে নৈতিক পুনরুজ্জীবন সম্ভব।
- তাঁরা শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে ইংরেজি ভাষার উপর গুরুত্ব দিয়েছিলেন।
- পাশ্চাত্যবাদীরা শিক্ষার বিষয়বস্তু হিসেবে ইংরেজি সাহিত্য, পাশ্চাত্য জ্ঞান, বিজ্ঞান, দর্শন অধ্যয়নের উপর প্রাধান্য দেন।
আরও পড়ুন – মধ্যযুগীয় ভারতের শিক্ষা প্রশ্ন উত্তর