1813 সালের সনদ আইনের মূল সুপারিশগুলি ব্যক্ত করো

ভারতের গভর্নর জেনারেলদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন লর্ড মিন্টো। তিনি ভারতবর্ষে শিক্ষাব্যবস্থার প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করেছিলেন। কোম্পানির সনদ আইন প্রতি 20 বছর অন্তর পুনর্নবীকরণ আইন প্রচলিত ছিল। 1833 সালে কোম্পানির সনদ আইন নবীকরণ করা হয়। এই আইনের 43 নং ধারায় ভারতে শিক্ষাবিস্তারের ক্ষেত্রে একটি শর্ত লিপিবদ্ধ করা হয়। এই ধারার 2টি অংশ ছিল। যথা-
প্রথমত
ব্রিটিশ ভারতে সাহিত্যের পুনরুজ্জীবন, উন্নতিবিধান ও পণ্ডিতদের উৎসাহদান।
দ্বিতীয়ত
দেশবাসীর মধ্যে বিজ্ঞান শিক্ষার প্রবর্তনের উদ্দেশ্যে কোম্পানি বার্ষিক 1 লক্ষ টাকা ব্যয় করবে।
এই আইন প্রবর্তনের ফলে ভারতীয় শিক্ষার ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায় সংযোজিত হয়। এই আইনের সুপারিশগুলি হল নিম্নরূপ-
(1) মিশনারিদের ধর্মপ্রচার ও শিক্ষাবিস্তারে স্বাধীনতা দেওয়া হয়।
(2) ভারতবাসীর শিক্ষার দায়িত্ব রাষ্ট্রের অর্থাৎ তৎকালীন ভারত-শাসক ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিকে দেওয়া হয়।
(3) 43 নং ধারায় ভারতে জনশিক্ষার জন্য বার্ষিক 1 লক্ষ টাকা ব্যয় সম্পর্কে এমন দ্ব্যর্থব্যঞ্জক ভাষা ব্যবহার করা হয়, যার ফলে এক জটিলতার সৃষ্টি হয়।
(4) এই আইন ভারতীয় শিক্ষার ইতিহাসে এক যুগের অবসান ঘটিয়ে নতুন এক যুগের উত্থান বলে ধরা হয়ে থাকে।
(5) এই আইনের প্রভাবে পাশ্চাত্য শিক্ষাবিস্তারের পথ অনেকখানি সুগম হয়ে ওঠে।
(6) এই আইন ছিল আধুনিক ভারতীয় শিক্ষার ভিত্তিপ্রস্তর।
(7) এই আইনে ধর্মনিরপেক্ষতা বজায় রাখার কথা বলা হয়।
(৪) এই আইনে পরোক্ষভাবে বেসরকারি উদ্যোগকেই স্বীকৃতি প্রদান করার কথা বলা হয়।
সনদ আইন শিক্ষাক্ষেত্রে এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হলেও এখানে যেমন বিজ্ঞানের উন্নতি ও বিস্তারের কথা বলা হয়। তেমনই বিজ্ঞান বলতে প্রাচ্য না পাশ্চাত্য সে বিষয়ে কোনো স্পষ্ট ধারণা ব্যক্ত করেনি। 1813 সালের সনদ আইনের প্রভাবেই 1824 সালে পুনেতে একটি সংস্কৃত কলেজ এবং 1822 সালে কলিকাতায় একটি মেডিক্যাল স্কুল গড়ে ওঠে।
আরও পড়ুন – মধ্যযুগীয় ভারতের শিক্ষা প্রশ্ন উত্তর