1813 সালের চার্টার অ্যাক্টের পটভূমি লেখো। এই অ্যাক্টের শিক্ষা বিষয়ক এবং মিশনারি সংক্রান্ত প্রস্তাবনা বা দুটি ধারা লেখো

চার্টার অ্যাক্টের (1813 সাল) পটভূমি
মুঘল সাম্রাজ্যের পতন সমগ্র ভারতবর্ষে রাজনৈতিক অরাজকতা ও অনিশ্চয়তার পরিমাণ বৃদ্ধি করে। এরপর পলাশির যুদ্ধের পর থেকে ভারতের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির আধিপত্য ও প্রভাব- প্রতিপত্তি বিশেষভাবে বৃদ্ধি পায়। সর্বোপরি 1765 সালে দেওয়ানি লাভের পর থেকে ভারতের সমাজ, সংস্কৃতি, ধর্ম, শিক্ষা সর্বত্র কোম্পানি উদার নিরপেক্ষতার নীতি অনুসরণ করতে থাকে। হিন্দু ও মুসলিম শাসকদের ঐতিহ্য অনুসরণ করে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ভারতবর্ষে দেশীয় শিক্ষাদানে উৎসাহ প্রদানকে যুক্তিযুক্ত মনে করে। মিশনারিদের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপনে বিশেষ উদ্যোগ থাকলেও শিক্ষাদানের কোনো সুনির্দিষ্ট রীতি ছিল না।
এই পরিপ্রেক্ষিতে 1810 সালে ভারতের তৎকালীন গভর্নর জেনারেল লর্ড মিন্টো এক প্রতিবেদন পেশ করে শিক্ষাক্ষেত্রে ভারতের শোচনীয় অবস্থার কথা তুলে ধরেন। শিক্ষার ক্ষেত্রে এই অবক্ষয়ের পুনরুদ্ধারের জন্য সরকারি উদ্যোগ গ্রহণ বিশেষভাবে প্রয়োজনীয় ছিল। এর পাশাপাশি তিনি শিক্ষা সংক্রান্ত বিষয়ে মিশনারিদের প্রচেষ্টাকে উৎসাহিত করার কথাও উল্লেখ করেছিলেন। এমতাবস্থায় 1813 সালে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে সনদ আইন নবীকরণের সময় মিশনারি ও শিক্ষা বিষয়ক প্রস্তাবনা পেশ হয়। এরই ফলশ্রুতি হল 1813 সালের চার্টার অ্যাক্ট বা সনদ আইন। প্রকৃতপক্ষে 1813 সালের সনদ আইনের শিক্ষাধারাকে ভারতে সরকারিভাবে শিক্ষা বিস্তারের প্রথম পদক্ষেপ বলা যেতে পারে। এর মাধ্যমেই ভারতীয় { শিক্ষার ক্ষেত্রে সর্বপ্রথম সরকারি অর্থ মঞ্জুর করা হয়।
চার্টার অ্যাক্টের শিক্ষা এবং মিশনারি সংক্রান্ত ধারা
1813 সালের সনদ আইন বা চার্টার অ্যাক্টের দুটি ধারা সম্পর্কে নিম্নে আলোচনা করা হল।
- শিক্ষা বিষয়ক ধারা: ভারতে শিক্ষাবিস্তারের প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে অ্যাক্টে উল্লিখিত 43 নং ধারা বা শিক্ষা বিষয়ক ধারার বিষয়গুলি হল- ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ভারতে সাহিত্যের পুনরুজ্জীবন, তার উন্নতিসাধন তথা শিক্ষিত পণ্ডিত ও ব্যক্তিবর্গকে উৎসাহদানের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থব্যয় করবে। ভারতবর্ষে শিক্ষাক্ষেত্রে বিজ্ঞান শিক্ষা প্রবর্তনের জন্য কোম্পানি অর্থব্যয় করবে। এক্ষেত্রে কোম্পানির বছরে মোট একলক্ষ টাকা খরচ হবে।
- মিশনারি ধারা: 1813 সালের সনদ আইনে ভারতে মিশনারিদের শিক্ষাবিস্তারের প্রচেষ্টাকে উৎসাহ দেওয়ার প্রস্তাব গৃহীত হয়। এই আইন পাশ হওয়ার আগে তাদের শিক্ষাবিস্তারের বিভিন্ন উদ্যোগে কোম্পানি বাধা দিয়েছিল। এরপর এই আইনের 13 নং ধারায় বলা হয় যে, ভারতে অবস্থিত ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের প্রজাদের স্বার্থরক্ষা, সুখস্বাচ্ছন্দ্য দেখা ও এই উদ্দেশ্যে কার্যকরী জ্ঞানের প্রচার, নৈতিক মানোন্নয়নের দায়িত্ব ইংল্যান্ডকে গ্রহণ করতে হবে। এই কাজগুলি পালন তথা শিক্ষা প্রবর্তনে আগ্রহী যে কোনো ব্যক্তি ভারতে যেতে ও থাকতে পারবে বলে উল্লেখ করা হয়।
আরও পড়ুন – মধ্যযুগীয় ভারতের শিক্ষা প্রশ্ন উত্তর