1813 সালের চার্টার অ্যাক্টের সময়কালে প্রাচ্যবাদী ও পাশ্চাত্যবাদীদের মতামত লেখো। সনদ আইন-এর ত্রুটিগুলি লেখো

1813 সালের চার্টার অ্যাক্টের সময়কালে প্রাচ্যবাদী ও পাশ্চাত্যবাদীদের মতামত
- প্রাচ্যবাদীদের মতামত: রক্ষণশীল সরকারি কর্মচারীগণ, দেশের প্রাচীন মনোভাবাপন্ন পণ্ডিতগণ ভারতবর্ষে প্রাচ্য শিক্ষার উদ্দেশ্যে অর্থব্যয়ের পক্ষে ছিলেন। তৎকালীন বাংলা বিভাগের সেক্রেটারি এইচ টি প্রিন্সেপ এই দলের নেতৃত্বদান করেছিলেন। প্রাচ্যবাদীদের মত বা বক্তব্যগুলি হল-
- প্রাচ্যবাদীরা মনে করেন যে, সরকারি শিক্ষানীতির মূল উদ্দেশ্য যদি ভারতের চিরাচরিত বা ঐতিহ্যপূর্ণ সাহিত্য ও বিজ্ঞানের সংরক্ষণ হয় তবেই দেশবাসীর হৃদয় জয় করা সম্ভব হবে।
- তাঁদের মতানুযায়ী শিক্ষার মাধ্যম হওয়া উচিত সংস্কৃত, আরবি ও ফারসি ভাষা। কারণ এরমাধ্যমেই প্রাচীন ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি সংরক্ষিত হবে।
- প্রাচ্যবাদীরা শিক্ষার বিষয়বস্তু হিসেবে প্রাচীন সাহিত্য, দর্শন, ধর্মতত্ত্ব অধ্যয়নের কথা বলেছিলেন।
- পাশ্চাত্যবাদীদের মতামত: বেশ কিছু মিশনারি, নতুন সরকারি কর্মচারী, ইংরেজ মনীষী ও দেশীয় নেতারা ভারতবর্ষে পাশ্চাত্য শিক্ষার উদ্দেশ্যে অর্থব্যয়ের পক্ষে ছিলেন। সি ই ট্রেভেলিয়ন এই দলের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। এদের মতগুলি হল-
- পাশ্চাত্যবাদীদের কাছে সাহিত্য বলতে কেবলমাত্র ইংরেজি সাহিত্যই প্রাধান্য পেয়েছে। তাঁরা মনে করেন যে, প্রাচীন সাহিত্য, ধর্মতত্ত্ব, দর্শন এগুলি অপ্রয়োজনীয়-এগুলির জন্য অর্থ ব্যয়ের কোনো প্রয়োজন নেই। পাশ্চাত্য শিক্ষার মাধ্যমে নৈতিক পুনরুজ্জীবন সম্ভব।
- তাঁরা শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে ইংরেজি ভাষার উপর গুরুত্ব দিয়েছিলেন।
- পাশ্চাত্যবাদীরা শিক্ষার বিষয়বস্তু হিসেবে ইংরেজি সাহিত্য, পাশ্চাত্য জ্ঞান, বিজ্ঞান, দর্শন অধ্যয়নের উপর প্রাধান্য দেন।
সনদ আইনের ত্রুটি
1813 সালের সনদ আইন ভারতবর্ষের শিক্ষাবিস্তারের ইতিহাসে নিঃসন্দেহে এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। বহুবিধ গুরুত্ব বা তাৎপর্যের পাশাপাশি এই আইনের কিছু ত্রুটি সুস্পষ্টভাবে লক্ষ করা যায়। আইনের ত্রুটিগুলি সম্পর্কে নিম্নলিখিতভাবে আলোচনা করা হল-
(1) সাহিত্য সম্পর্কে অস্পষ্ট ধারণা: সনদ আইনে সাহিত্যের পুনরুজ্জীবন ও উন্নয়ন বলতে ভারতীয় না পাশ্চাত্য সাহিত্যকে বোঝানো হয়েছে, সে সম্পর্কে কোনো স্পষ্ট উল্লেখ নেই। ফলে শিক্ষাক্ষেত্রে এটি দ্বিধাদ্বন্দ্ব ও বিতর্কের সৃষ্টি করে।
(2) বিজ্ঞান শিক্ষার প্রবর্তন সম্পর্কে ধারণার অভাব: বিজ্ঞান শিক্ষার প্রবর্তন ও প্রসারের ক্ষেত্রে প্রাচ্য বিজ্ঞান না পাশ্চাত্য বিজ্ঞানের অনুশীলন করা হবে, সেই বিষয়টিও এই আইনে অস্পষ্ট।
(3) শিক্ষার মাধ্যম সম্পর্কে সংশয়: প্রাচ্য না পাশ্চাত্য কোন্ ভাষায় শিক্ষাদান করা হবে, সে সম্পর্কেও সঠিকভাবে কিছু বলা হয়নি। 1813 সালের চার্টার অ্যাক্ট বা সনদ আইনের নানাবিধ ত্রুটিগুলি ভারতবর্ষের শিক্ষাক্ষেত্রে অনিশ্চয়তা ও বিতর্কের সৃষ্টি করে। তবুও বলা যায়, পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসারে এবং ঊনবিংশ শতকের ভারতীয় সমাজে নবজাগরণের সময়ে এই সনদ আইনের ভূমিকা ছিল বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। সমগ্র ভারতবাসীর শিক্ষাদানের জন্য ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কর্তব্য আইনগত স্বীকৃতি লাভ করে।
আরও পড়ুন – মধ্যযুগীয় ভারতের শিক্ষা প্রশ্ন উত্তর