হান্টার কমিশনের সুপারিশের সীমাবদ্ধতাগুলি লেখো

হান্টার কমিশনের সুপারিশের সীমাবদ্ধতাগুলি লেখো

হান্টার কমিশনের সুপারিশের সীমাবদ্ধতাগুলি লেখো
হান্টার কমিশনের সুপারিশের সীমাবদ্ধতাগুলি লেখো

হান্টার কমিশনের সুপারিশের সীমাবদ্ধতা

(1) বাস্তব প্রয়োগের অভাব: হান্টার কমিশনের সুপারিশগুলি শিক্ষাক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ হলেও এগুলি কার্যকর করার কোনো সুনির্দিষ্ট পদ্ধতি সম্পর্কে কমিশন কিছু নির্দেশ করেনি।

(2) সর্বজনীন অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক শিক্ষার অনুপস্থিতি : প্রাথমিক শিক্ষার প্রতি সরকারিভাবে বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করা হলেও এই শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক, অবৈতনিক, সর্বজনীন করার ব্যাপারে হান্টার কমিশন চিন্তা করেনি।

(3) সাম্প্রদায়িক শিক্ষায় উৎসাহদান: হান্টার কমিশনে মুসলিম শিক্ষার্থীদের জন্য শিক্ষার বিশেষ সুপারিশ করা হয়। তাদের জন্য পৃথক পাঠ্যসূচি ও প্রাথমিক, মাধ্যমিক বিদ্যালয় স্থাপন পরোক্ষভাবে শিক্ষায় সাম্প্রদায়িকতাকে উৎসাহিত করেছিল।

(4) মাতৃভাষায় শিক্ষালাভের অভাব: মাধ্যমিক স্তরের ভাষার প্রশ্নে কমিশন সুস্পষ্ট দিশা প্রদান করতে অসমর্থ হয়। এর ফলে এই স্তরে ভাষার মাধ্যম হিসেবে ইংরেজি স্বীকৃতি লাভ করে। মূলত এই কারণে মাতৃভাষার মাধ্যমে শিক্ষালাভের সুযোগ থেকে শিক্ষার্থীরা বঞ্চিত হয়েছিল।

(5) কাগজে কলমে সীমাবদ্ধতা: হান্টার কমিশনে দেশজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বা বিদ্যালয়গুলির উন্নতির দিকে আগ্রহ প্রকাশ করা হলেও তা মূলত কাগজে কলমের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। প্রকৃত সরকারি সক্রিয় উদ্যোগ এক্ষেত্রে দৃষ্টিগোচর হয়নি।

(6) ব্যাবহারিক শিক্ষার ক্ষোভ জনপ্রিয়তার অভাব: হান্টার কমিশনের শিক্ষা সংক্রান্ত সুপারিশে ‘বি’ কোর্সের ব্যাবহারিক শিক্ষার কথা বলা হলেও যন্ত্রশিক্ষার উপযোগিতা ও ব্যবহারের উপর যথাযথ গুরুত্ব আরোপ করা হয়নি। এর ফলে ‘বি’ কোর্স জনপ্রিয় হয়নি।

(7) আর্থিক অব্যবস্থা: হান্টার কমিশনের সুপারিশে প্রাথমিক শিক্ষার জন্য অর্থসংস্থান সম্পর্কে অস্পষ্টতা ছিল। ফলে প্রাথমিক শিক্ষার প্রসার

(৪) পরীক্ষাভিত্তিক শিক্ষাব্যবস্থা: হান্টার কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী ব্যাহত হয়। আর্থিক এই অব্যবস্থা শিক্ষাপ্রসারে সীমাবদ্ধতা সৃষ্টি করেছিল। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলিতে পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে সরকারি অনুদান দেওয়ার নীতি গ্রহণের ফলে শিক্ষাব্যবস্থা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই পরীক্ষানির্ভর হয়ে পড়ে।

(9) বাস্তবিক প্রায়াগের অভাব: কমিশন তার সুপারিশের মধ্যে দিয়ে শিক্ষানীতি সম্পর্কে নানা গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাব দান করলেও সেগুলিকে বাস্তবে কীভাবে কার্যকরী করা হবে, সে সম্পর্কে বিশেষ কিছুই বলেনি।

(10) দ্বিমুখী শিক্ষার অভাব: মাধ্যমিক শিক্ষাস্তরের ক্ষেত্রে কমিশন যে দ্বিমুখী শিক্ষার কথা বলেছিল তা বাস্তবক্ষেত্রে তেমন কার্যকর হয়নি।

(11)  অবহেলিত মাধ্যমিক শিল্ডা: হান্টার কমিশনের সুপারিশে মাধ্যমিক শিক্ষাকে সেইরূপ গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। এর ফলে কমিশনকে অত্যধিক সমালোচনার মধ্যে পড়তে হয়েছিল।

(12) বৃত্তিমুখীকরণে ব্যর্থভা: মাধ্যমিক শিক্ষাকে বৃত্তিমুখী করার সুপারিশ হান্টার কমিশন করেছিল, কিন্তু তা আলোচনার অভাবে ব্যর্থ হয়ে যায়।

(13) যোগ্য শিক্ষাকর অভাব : হান্টার কমিশনে মাধ্যমিক শিক্ষার ক্ষেত্রে শিক্ষক-শিক্ষণ সম্পর্কীয় সুপারিশের মধ্যে প্রাণ ছিল না এবং তা বাস্তবায়িত করা হয়নি। এর ফলে সেইসময় প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত যোগ্য শিক্ষকের ঘাটতি দেখা যায়।

আরও পড়ুন – মধ্যযুগীয় ভারতের শিক্ষা প্রশ্ন উত্তর

Leave a Comment