স্যাডলার কমিশনের মূল্যায়ন করো

স্যাডলার কমিশনের মূল্যায়ন
স্যাডলার কমিশন মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা উভয় স্তর সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য প্রদান করেছিল। এই কমিশনের মূল্যায়ন করতে গেলে এর ইতিবাচক ও নেতিবাচক উভয় দিক সম্পর্কেই আলোচনা করা প্রয়োজন।
(1) অবদান বা গুরুত্ব :
(a) কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী 1937 সালের মধ্যে লখনউ (1920 সাল), আলিগড় (1920 সাল), দিল্লি (1922 সাল), ত্রিবাঙ্কুর (1937 সাল) বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে ওঠে।
(b) আন্তঃকলেজ তথা আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা কার্যক্রমের সূচনা হয়।
(c) স্যাডলার কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী পাঞ্জাব, উত্তরপ্রদেশ, বিহার প্রভৃতি স্থানে শিক্ষাবোর্ড স্থাপিত হয় যা ছিল খুবই উল্লেখযোগ্য।
(d) ভারতে প্রচলিত মাধ্যমিক ও ইন্টারমিডিয়েট শিক্ষা বিষয়ে কমিশন কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ প্রদান করে।
(e) মাধ্যমিক শিক্ষাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতা থেকে বের করে আনার বিষয়টিও ছিল গুরুত্বপূর্ণ।
(f) স্যাডলার কমিশনের পর্যালোচনা অনুযায়ী মাধ্যমিক ও ইন্টারমিডিয়েট শিক্ষা পরিচালনার জন্য পৃথক পর্ষদ গঠিত হয়।
(g) তিন বছরের ডিগ্রি কোর্স প্রবর্তন, ‘এডুকেশন’কে শিক্ষার বিষয় হিসেবে অন্তর্ভুক্তিকরণ, বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে স্বশাসিতভাবে গড়ে তোলা, বৃত্তিশিক্ষা প্রবর্তন প্রভৃতি আধুনিককালে শিক্ষাসংস্কারের চেষ্টাকে বিশেষভাবে প্রভাবিত করেছিল।
(h) ছাত্রদের জন্য সহপাঠক্রমিক কার্যাবলি গঠন, ছাত্রদের কল্যাণের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ প্রভৃতিও ছিল স্যাডলার কমিশনের শিক্ষাসংস্কারের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রচেষ্টা।
(2) ত্রুটিসমূহ :
(a) তিন বছরের ডিগ্রি কোর্স প্রবর্তনের বিষয়টি বহুক্ষেত্রেই সমস্যা সৃষ্টি করে।
(b) সর্বোপরি ভারতবর্ষের মতো একটি দারিদ্র্য দেশের পক্ষে আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয়ের খরচ চালানো ছিল খুবই কষ্টসাধ্য বিষয়।
(c) স্যাডলার কমিশনে শিক্ষাব্যবস্থার কাঠামো পরিবর্তন সংক্রান্ত বিষয়কে কেন্দ্র করে মতবিরোধ দেখা দেয়।
(d) এই কমিশনের মাধ্যমে নতুনভাবে যে কলেজ তৈরি হয়েছিল তার উপযোগিতা সম্পর্কেও অনেকের আপত্তি ছিল।
(e) মাধ্যমিক ও ইন্টারমিডিয়েট শিক্ষার জন্য পৃথক বোর্ড গঠন সম্পর্কে সরকারের সঙ্গে তাদের সম্পর্ককে কেন্দ্র করেও সমস্যা সৃষ্টি হয়। নানা ত্রুটি সমালোচনা সত্ত্বেও ভারতের শিক্ষাক্ষেত্রে স্যাডলার কমিশনের সুদূরপ্রসারী প্রভাবকে অস্বীকার করা যায় না।
আরও পড়ুন – মধ্যযুগীয় ভারতের শিক্ষা প্রশ্ন উত্তর