স্যাডলার কমিশনের পটভূমি লেখো। মাধ্যমিক শিক্ষা সংক্রান্ত বিষয়ে স্যাডলার কমিশনের সুপারিশগুলি আলোচনা করো

স্যাডলার কমিশনের পটভূমি
লর্ড কার্জন কর্তৃক ভারতবর্ষের শিক্ষা বিষয়ক সংস্কারের প্রায় দশ বছরের মধ্যে ভারতের শিক্ষা কাঠামোর পুনর্বিন্যাসের বিশেষ প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। এমতাবস্থায় আশুতোষ মুখোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাব্যবস্থার এক নবরূপ গড়ে ওঠে। কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই দ্রুত প্রসারের ফলেই ক্রমশ বিভিন্ন নতুন নতুন প্রশ্ন ও সমস্যার উদ্ভব হয়। এরপর 1914 সাল নাগাদ লর্ড হলডেনের নেতৃত্বে ভারতীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলির পুনর্বিন্যাস তথা সংস্কারসাধনের উদ্দেশ্যে একটি কমিশন গঠনের প্রস্তাব করা হয়, যদিও এসময় লর্ড হলডেন ভারতে আসতে অস্বীকার করায় সেই প্রস্তাব সাময়িকভাবে স্থগিত রাখা হয়। 1917 সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের অবস্থা কিছুটা অনুকূলে আসায় ব্রিটিশ সরকার ভারতের শিক্ষাসংস্কারের দিকে গভীর দৃষ্টিনিক্ষেপ করে। 1917 সালেই ব্রিটিশ সরকার কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমস্যাসমাধানের জন্য একটি কমিশন গঠন করে।
এমতাবস্থায় লিঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য স্যার মাইকেল স্যাডলারকে সভাপতি করে গঠিত হয় ‘কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কমিশন’, যা স্যাডলার কমিশন নামে সমধিক পরিচিত। এই কমিশনের স্বনামধন্য সদস্যদের মধ্যে ছিলেন, স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায়, ড. জিয়াউদ্দিন আহমেদ, ড. গ্রেগরি, স্যার ফিলিপ হার্টগ, অধ্যাপক র্যামজে মূর প্রমুখ। স্যাডলার কমিশন শিক্ষা বিষয়ক পর্যালোচনার পর 1919 সালে তার রিপোর্ট পেশ করে।
মাধ্যমিক শিক্ষার সুপারিশ
(1) এই কমিশনের সুপারিশে মাধ্যমিক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাকে সম্পূর্ণভাবে পৃথক করার কথা বলা হয়।
(2) মাধ্যমিক শিক্ষা দুটি পর্যায়ে সম্পন্ন করার কথা বলা হয়। দশম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার স্তর অর্থাৎ ম্যাট্রিকুলেশন এবং দু-বছরের শিক্ষার স্তর হবে ইন্টারমিডিয়েট। এ ছাড়া কলেজে প্রবেশের মাপকাঠি হিসেবে ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষার উপর গুরুত্ব দেওয়া হয়।
(3) স্যাডলার কমিশনের সুপারিশে আরও বলা হয় যে, দশম শ্রেণির শিক্ষা সমাপ্ত হওয়ার পর দু-বছরের ইন্টারমিডিয়েট কোর্সে চিকিৎসাশাস্ত্র, কারিগরিবিদ্যা, কৃষি, বাণিজ্য, কলা, বিজ্ঞান শিক্ষার ব্যবস্থা থাকবে।
(4) বিশ্ববিদ্যালয়ের হাতে ইন্টারমিডিয়েট শ্রেণিতে শিক্ষার কোনো দায়িত্ব থাকবে না বলে উল্লেখ করা হয়। এর জন্য ইন্টারমিডিয়েট কলেজ স্থাপনের সুপারিশ করা হয়।
(5) মাধ্যমিক ও ইন্টারমিডিয়েট স্তরের শিক্ষাব্যবস্থা সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য পৃথক বোর্ড গঠনের সুপারিশ করা হয় স্যাডলার কমিশনে। এই বোর্ডে সরকার, বিশ্ববিদ্যালয় ও ইন্টারমিডিয়েট কলেজের প্রতিনিধিরা থাকবেন।
(6) মাধ্যমিক শিক্ষার সম্প্রসারণের জন্য স্যাডলার কমিশনে সরকারি তহবিল থেকে বার্ষিক অতিরিক্ত চল্লিশ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করার কথাও বলা হয়।
(7) এ ছাড়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলির শিক্ষক-শিক্ষিকাদের উপযুক্ত প্রশিক্ষণ প্রদানের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে পৃথক ‘শিক্ষক-শিক্ষণ বিভাগ’ প্রবর্তনের সুপারিশ করা হয়।
আরও পড়ুন – মধ্যযুগীয় ভারতের শিক্ষা প্রশ্ন উত্তর