সার্জেন্ট পরিকল্পনার মূল্যায়ন করো

সার্জেন্ট পরিকল্পনার মূল্যায়ন
সার্জেন্ট পরিকল্পনা ভারতের শিক্ষা সংক্রান্ত এক মূল্যবান দলিল। এই পরিকল্পনাটি যেমন একাধারে সমালোচনার ঊর্ধ্বে নয় তেমনই এর অবদানকেও কোনোভাবেই অস্বীকার করা যায় না।
(1) সার্জেন্ট পরিকল্পনার ত্রুটিসমূহ :
(1) সার্জেন্ট পরিকল্পনাটি রূপায়ণের সময়কাল হিসেবে প্রায় 40 বছর সময়ের কথা বলা হয়েছে, যা ছিল অতি দীর্ঘ।
(2) ভারতবর্ষের মতো এক দরিদ্র্য দেশে শিক্ষাক্ষেত্রে বিপুল পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করা ছিল নিতান্ত অসম্ভব একটি বিষয়।
(3) সার্জেন্ট পরিকল্পনায় লক্ষ্য বা আদর্শ সুনির্দিষ্টভাবে থাকলেও কিন্তু তা বাস্তবায়িত করার মতো কোনো বিস্তৃত কর্মসূচি ছিল না, ফলে এটি সমালোচনার সম্মুখীন হয়।
(4) এই পরিকল্পনার সুপারিশগুলি ব্যক্তিগত মালিকানার ভিত্তিতে গঠিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলির সংখ্যা কমিয়ে আনলেও এগুলিকে সম্পূর্ণভাবে বাতিল করতে পারেনি।
(5) সার্জেন্ট রিপোর্টে বলা হয়েছে যে, বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ব্যক্তি ছাড়া অন্য কোনো ব্যক্তি শিক্ষকতা গ্রহণ করতে পারবে না। তৎকালীন সময়ে এই প্রস্তাব ছিল একেবারেই অসম্ভব। বলাবাহুল্য এখনও পাবলিক সার্ভিস কমিশন (PSC) অপ্রশিক্ষিত শিক্ষকদের নিয়োগ করে থাকে। তাই তৎকালীন সময়ে এই সুপারিশ অবাস্তবই ছিল।
(6) ৪ বছরের বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা প্রবর্তনের পরিকল্পনাটিও ছিল অবাস্তব।
এই পরিকল্পনার আরেকটি অন্যতম ত্রুটি হল উচ্চশিক্ষার প্রতিষ্ঠানে ভরতির ক্ষেত্রে গণতান্ত্রিকতার অভাব লক্ষ করা যায়।
(2) সার্জেন্ট পরিকল্পনার অবদান : কঠোরভাবে সমালোচিত হলেও সার্জেন্ট পরিকল্পনা ভারতের শিক্ষা সংক্রান্ত একটি মূল্যবান দলিল। ভারতবর্ষের জাতীয় শিক্ষাব্যবস্থার ইতিহাসে এর অবদান অনস্বীকার্য।
(1) ভারতবর্ষের জাতীয় চিন্তা ও চেতনার উন্মেষের পাশাপাশি সার্জেন্ট পরিকল্পনার রিপোর্টে শিক্ষার প্রতিটি স্তরে সকল মানুষকে সমান সুযোগসুবিধা প্রদানের কথা বলা হয়।
(2) এই পরিকল্পনায় পুঁথিকেন্দ্রিক শিক্ষার পরিবর্তে জীবনভিত্তিক শিক্ষার কথা বলা হয়েছিল।
(3) শিক্ষার্থীদের শিক্ষাদানের পাশাপাশি তাদের স্বাস্থ্য চিন্তা, উপযুক্ত চিকিৎসা প্রদান প্রভৃতির ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশও ছিল বিশেষ উল্লেখযোগ্য।
(4) শিক্ষার গুণগত মান বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন উন্নয়নমূলক চিন্তাধারার বাস্তবায়ন ঘটানোর ব্যাপারেও গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে।
(5) বয়স্কশিক্ষা, স্ত্রীশিক্ষা, প্রতিবন্ধীদের শিক্ষা, সমাজসেবা, স্বাস্থ্যশিক্ষা, বৃত্তিমূলক শিক্ষা, শিল্প ও বাণিজ্য শিক্ষা প্রভৃতি বিষয় সম্পর্কে যথাযথ সুপারিশ করায় সামাজিক বিচারে সার্জেন্ট রিপোর্টটি জাতীয় শিক্ষার ইতিহাসে অমূল্য দলিল হিসেবে গৃহীত।
আরও পড়ুন – মধ্যযুগীয় ভারতের শিক্ষা প্রশ্ন উত্তর