সংস্কৃত কলেজের সংস্কারসাধনের জন্য বিদ্যাসাগর কীরূপ ভূমিকা পালন করেন বিস্তারিত লেখো। বিদ্যাসাগর রচিত দুটি পুস্তকের নাম লেখো

সংস্কৃত কলেজের সংস্কারসাধনে বিদ্যাসাগরের ভূমিকা
1846 সালে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর সংস্কৃত কলেজের সহকারী সচিব পদে নিযুক্ত হন। সংস্কৃত কলেজের উন্নতিকল্পে তিনি পাঠক্রম ও শিক্ষাব্যবস্থায় বেশ কিছু রদবদল করতে চেয়ে ওটি প্রতিবেদন পেশ করেন, যা সংস্কৃত কলেজের তৎকালীন কর্তৃপক্ষের অনেকেরই পছন্দ হয়নি। ঐক্যমত না হওয়ায় তিনি সহকারী সচিব পদ থেকে পদত্যাগ করেন। কিন্তু বিদ্যাসাগরের শিক্ষানীতি, দৃঢ় সংকল্প, সাহস চরিত্রের এই গুণগুলি তাকে 1850 সালে পুনরায় সংস্কৃত কলেজের অধ্যাপক হিসেবে ফিরিয়ে আনে। 1851 সালে তিনি ওই কলেজের অধ্যক্ষ হন। এইসময় তিনি সংস্কৃত ভাষার পাশাপাশি ইংরেজি ও বাংলা ভাষা শেখার ব্যবস্থা করে ইউরোপীয় ও ভারতীয় ধারণা সমভাবে শিক্ষার্থীদের অনুধাবন করাতে চান। ধর্ম সম্পর্কে ভারতীয়দের মনের ভুল ধারণা, অন্ধ কুসংস্কার যেমন দূর করতে চেয়েছিলেন, তেমনই ইউরোপীয় জ্ঞান-বিজ্ঞানের ভালো দিকগুলি গ্রহণ করতে চেয়েছিলেন। এইসময় তিনি বাংলা ভাষায় দুটি ব্যাকরণ গ্রন্থ রচনা করেন যথা- উপক্রমণিকা ও ব্যাকরণ কৌমুদী। সংস্কৃত কলেজের অধ্যক্ষ থাকাকালীন তাঁর উপরি সাফল্য হল- ব্রাহ্মণ ব্যতীত অন্যান্য ধর্মের শিক্ষক ও শিক্ষার্থী এই কলেজে প্রবেশের অনুমতি পেল। তিনি কলেজে ভরতির ফি ও শিক্ষানবিশ ফিও চালু করেন। বাঙালি শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের জন্য নর্মাল স্কুল চালু করেন। এভাবেই তিনি মধ্যযুগীয় ধর্মান্ধতা থেকে শাস্ত্রীয় শিক্ষাকে মুক্ত করেন এবং তার সঙ্গে সংস্কৃত কলেজের সংস্কারসাধনেও সক্ষম হন।
এইভাবে সংস্কৃত কলেজের মধ্য দিয়ে তিনি সমগ্র শিক্ষাব্যবস্থার সংস্কারে উদ্যোগী হন। এ ছাড়া তিনি সংস্কৃত কলেজে বেতন প্রথা ও গ্রীষ্মকালীন অবকাশ ইত্যাদি প্রবর্তনেরও ব্যবস্থা করেন। বিদ্যাসাগর রচিত দুটি পুস্তক হল- বেতাল পঞ্চবিংশতি, বোধোদয়।
আরও পড়ুন – মধ্যযুগীয় ভারতের শিক্ষা প্রশ্ন উত্তর