শৈশবকালের মানসিক এবং ভাষাগত বিকাশগত বৈশিষ্ট্যগুলি সম্পর্কে আলোচনা করো
মানসিক বিকাশ
শৈশবকালে মানসিক বিকাশ 2 বছর বয়স থেকে দ্রুত বৃদ্ধি পায়। এই সময় থেকে শিশু সমাজ পরিবেশের সঙ্গে প্রতিক্রিয়া করে ও নতুন অভিজ্ঞতা অর্জন করে।
(1) প্রাকৃতিক ও সামাজিক বাস্তবতা: এই সময় প্রাকৃতিক ও সামাজিক বাস্তবতার ধারণা গড়ে ওঠে।
(2) আত্মসচেতনতা: 5-6 বছর বয়সে আত্মসচেতনতার বিকাশ হয়। শিশু নিজের জিনিস সম্বন্ধে সচেতন হয়।
(3) স্মৃতিশক্তি: স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি পায় এবং মুখস্থের মাধ্যমে শিশু শেখে, এই সময়ে অনেক ছড়া শেখে। ছড়াগুলিকে গড় গড় করে বলতে পারে।
(4) অর্থপূর্ণ ধারণা: 5-6 বছর বয়সে শিশু প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার বস্তুকে কেন্দ্র করে অর্থপূর্ণ ধারণা গঠন করতে পারে। বস্তুর আকার, গঠন, রং, সময়, দূরত্ব সম্পর্কে ধারণা তৈরি হয়।
(5) কৌতূহল ও কল্পনাশক্তির বিকাশ: 5-6 বছর বয়সে পরিবেশের বিভিন্ন বস্তু সম্পর্কে কৌতূহল সৃষ্টি হয় এবং তাদের মধ্যে কল্পনাশক্তির বিকাশ শুরু হয়।
(6) বুদ্ধি: 5-6 বছর বয়স পর্যন্ত শিশুর বুদ্ধির খুব দ্রুত বিকাশ হয়।
(7) অনুকরণ প্রবণতা: 5-6 বছর বয়সে শিশুদের মধ্যে অনুকরণ প্রবণতা দেখা যায়।
(8) সেন্টিমেন্ট: 5-6 বছর বয়সে শিশুদের মধ্যে সেন্টিমেন্টের বিকাশ শুরু হয়। যেমন- পরিবারের আত্মীয়স্বজনের প্রতি সেন্টিমেন্ট।
(9) মূর্ত বিষয় ও সৃজনশীলতা: শৈশবের শেষদিকে সৃজনশীলতার বিকাশ, কল্পনা করার ক্ষমতার বিকাশ ঘটতে শুরু করে। যেমন- ছবি আঁকার চেষ্টা করে, মূর্ত বিষয়ভিত্তিক চিন্তা ও বিচার করার ক্ষমতার বিকাশ ঘটতে শুরু করে।
(10) মানাযোগের পরিসর : এই বয়সের শেষে মনোযোগের পরিসর বৃদ্ধি। পায় এবং পরিবেশকে জানার প্রতি কৌতূহল বাড়ে।
(11) নৈতিকতা বোধের বিকাশ: 5-6 বছর বয়স থেকে নৈতিকতা বোধের বিকাশ শুরু হয়। শিশু খাবার জিনিস ভাগ করে খেতে শেখে।
(12) সমস্যাসমাধালের ঊমতা: ছোটো ছোটো সমস্যাসমাধানের ক্ষমতার বিকাশ শুরু হয়। যেমন- সংখ্যা গণনা, যোগ, বিয়োগ ইত্যাদি সমস্যাসমাধান করতে পারে।
(13) পরিবেশ: পরিবেশ সম্পর্কিত বিভিন্ন ধারণা জন্মায় এবং শিশু নানা ধরনের প্রশ্ন করে।
ভাষাগত বিকাশ
বর্তমান শিক্ষাবিদগণ শিশুর ভাষার বিকাশকে জীবনবিকাশের গুরুত্বপূর্ণ দিক হিসেবে বিবেচনা করেছেন। শিশুর ভাষা বিকাশ সম্পর্কে বিভিন্ন মনোবিদের বক্তব্য-
(1) রোজ্যোল: শিশুর ভাষার বিকাশ ঘটে, তবে অর্থনৈতিক অবস্থা অনুসারে। উন্নত আর্থ-সামাজিক পরিবেশে মানসিক বিকাশের মতন ভাষার বিকাশও দ্রুত ঘটে।
(2) বুডাকক ও আরউইন : ভাষার অন্তর্নিহিত ভাবকে বোঝার ক্ষমতা নির্ভর করে ভাষাচর্চার উপর। শিশুরা বাড়িতে বড়োদের সঙ্গে মেলামেশা করে, বিভিন্ন ভাষা আদানপ্রদান করতে দ্যাখে, ফলে তারাও ভাষা শিখতে পারে, কঠিন শব্দের অর্থ বুঝতে পারে এবং ব্যবহার করতে পারে। ভাষা বিকাশের ফলে শব্দভাণ্ডার বৃদ্ধি পায়। বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে শব্দভাণ্ডার বৃদ্ধির সম্ভাব্য তালিকা দেওয়া হল। তবে বিভিন্ন মনোবিদের মত অনুসারে এই সংখ্যার কিছুটা পরিবর্তন হতে পারে। তবে স্মিথ, থম্পসন, লিপসিট-এর মত অনুসারে, বয়স অনুযায়ী শব্দভান্ডারের তালিকা দেওয়া হল-
- ভাষা বিকাশের আর-একটি দিক হল বাক্য প্রকাশের ক্ষমতার বিকাশ।
- মনের ভাবকে ভাষায় প্রকাশ করার ক্ষমতা 5-6 বছরের মধ্যে বিকশিত হয়।
- এই বয়সে শিশুরা মোটামুটিভাবে সবরকম বাক্যই বলতে পারে।
- শব্দ উচ্চারণ ক্ষমতার বিকাশও এই বয়সের মধ্যে হয়।
- এই দুই ধরনের ক্ষমতা শিশুর পড়ার ক্ষমতা বিকাশে পরোক্ষভাবে সাহায্য করে।
- ভাষা বিকাশের হার কয়েকটি বিষয়ের উপর নির্ভরশীল। যথা- শিশুর সামাজিক ও অর্থনৈতিক পরিবেশের উপর, ভাষার বিকাশে মেয়েরা ছেলেদের থেকে এগিয়ে থাকে, ভাষা বিকাশে শিক্ষার প্রয়োজন, পড়তে শেখার আগে কথা বলার ক্ষমতার বিকাশ হয়।