শৈশবকালের বিভিন্ন চাহিদাগুলি আলোচনা করো
শৈশবকালের চাহিদা
শৈশবকালের বিকাশগত বৈশিষ্ট্যকে কেন্দ্র করে যেসকল চাহিদা পরিলক্ষিত হয়, সেগুলি হল-
(1) দৈহিক বা জৈবিক চাহিদা:
- খাদ্যের চাহিদা: শৈশবকালে খাদ্যের চাহিদা প্রকট হয়। কারণ এই বয়সে ছেলেমেয়েদের দৈহিক বিকাশ অত্যন্ত দ্রুত হয়। দেহের সামগ্রিক আয়তন বৃদ্ধির জন্য দেহের যে শক্তির প্রয়োজন হয় খাদ্যের মাধ্যমে সেই শক্তি সংগৃহীত হয়।
- চলনের চাহিদা : শৈশবে স্নায়ু এবং পেশিগুলির ক্ষমতা বৃদ্ধির কারণে শিশু চলনের ক্ষমতা অর্জন করে এবং তার মধ্যে চলনের চাহিদা সৃষ্টি হয়। এই চাহিদার দরুন শিশুরা সর্বদা কিছু-না-কিছু করতে চায়।
- সক্রিয়তার চাহিদা: শৈশবে সক্রিয়তার চাহিদা প্রবল থাকে। এইসময় আত্মসচেতনতা বিকাশের ফলে শিশু যা দ্যাখে তাই-ই করতে চায় এবং জীবন পরিস্থিতি থেকে নতুন নতুন অভিজ্ঞতা অর্জন করতে শেখে।
- ঘুমের চাহিদা : শৈশবকালের প্রথম পর্যায়ে শিশু সর্বদা ঘুমোতে চায়, ঘুমের মাধ্যমে শিশুর অভ্যন্তরীণ ক্রিয়া সু-সম্পন্ন হয়।
- মলত্যাগের চাহিদা : ঘুমের মতো শিশুর একটি গুরুত্বপূর্ণ চাহিদা হল মলত্যাগের চাহিদা, মলত্যাগের মাধ্যমে শিশু জৈবিক তৃপ্তি পায়।
- পুনরাবৃত্তির চাহিদা: এই বয়সে শিশু একটি কাজ বারবার করে মানসিক তৃপ্তি পায়। শিশু দেহের সক্রিয়তাকে আরও কার্যকর করার উদ্দেশ্যে কিছু কিছু আনন্দদায়ক আচরণের পুনরাবৃত্তি করে।
(2) মানসিক চাহিদা :
- নিরাপত্তার চাহিদা : শৈশবকালের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ চাহিদা হল নিরাপত্তার চাহিদা। শিশুরা সবসময় বয়স্কদের কাছ থেকে নিরাপত্তা আশা করে।
- আয়ত্তে আনার চাহিদা: শিশুরা সবকিছুকে নিজেদের আয়ত্তে আনতে চায়। যা কিছু দ্যাখে তাই-ই নিতে চায়। নিজের জিনিস অন্য কাউকে দিতে চায় না।
- অনুকরণের চাহিদা: শিশুদের অনুকরণ করার প্রবৃত্তি অত্যন্ত প্রবল, এই প্রবৃত্তির তাড়নায় শিশুরা খুব সহজেই বড়োদের আচরণ অনুকরণের মাধ্যমে আয়ত্ত করে। তাই বয়স্কদের আচরণ আদর্শস্থানীয় বা অনুকরণযোগ্য হওয়া উচিত।
- জ্ঞানের চাহিদা : শিশুদের মধ্যে সবকিছু জানার প্রবল চাহিদা লক্ষ করা যায়। কী, কেন, কোথায় ইত্যাদি সব প্রশ্নের উত্তর সে পেতে চায়, এই ধরনের অনুসন্ধিৎসু মনোভাব থেকে অনেকসময় শিশুরা খেলনার আলো এবং শব্দের উৎস অনুসন্ধান করতে গিয়ে খেলনাকে ভেঙে দেয়।
- কল্পনার চাহিদা : শিশুরা স্বভাবতই কল্পনাপ্রবণ হয়, এরা রূপকথার গল্প কল্পনার জগতে বিচরণ করে আনন্দ পায়।
- ভালোবাসার চাহিদা : এই বয়সি ছেলেমেয়েদের মধ্যে ভালোবাসার চাহিদা প্রবলভাবে দেখা যায় এবং সবসময় পরিবারের বয়স্কদের কাছ থেকে ভালোবাসার প্রত্যাশা করে।
- কৌতূহলের চাহিদা : ]র মধ্যে কৌতূহলের চাহিদা দেখা যায়। যেমন-কোনো শিশু নতুন খেলনা বা পুতুল পেলে সেটি ভেঙে দেখতে চায় যে তার মধ্যে কী আছে।
(3) সামাজিক চাহিদা : শৈশবকালের সামাজিক চাহিদাগুলি হল-
- দলগঠনের চাহিদা: কোনো শিশু একা থাকতে চায় না, সে তার বন্ধুদের সঙ্গে দল বেঁধে থাকাটাই পছন্দ করে।
- সহযোগিতার চাহিদা: শিশুরা সর্বদা বয়স্কদের কাছ থেকে সহযোগিতা আশা করে এবং সমবয়সি বন্ধুদের সাহায্য করতে পছন্দ করে।
- সমবেদনার চাহিদা: শিশুরা সমবয়সি শিশুদের প্রতি সমবেদনা জানায়। যেমন-কোনো শিশু কাঁদলে তার চোখের জল মুছিয়ে দেয়, আবার নিজে অসুস্থ হলে বয়স্কদের কাছ থেকে সমবেদনা পেতে চায়।
- প্রতিদ্বন্দ্বিতার চাহিদা : শিশুরা তাদের অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছোনোর জন্য সমবয়সিদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়। এই প্রতিযোগিতা অনেকসময় প্রতিদ্বন্দ্বিতার স্তরে পৌঁছোয়।
(4) প্রাক্ষোভিক চাহিদা: প্রাক্ষোভিক বিকাশের সঙ্গে যুক্ত চাহিদাগুলি হল প্রাক্ষোভিক চাহিদা। এগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল-
- ভালোবাসার চাহিদা: শৈশবকালে প্রতিটি শিশু বাবা-মা-আত্মীয়স্বজনের কাছ থেকে স্নেহ, ভালোবাসা প্রত্যাশা করে।
আরামের চাহিদা: প্রতিটি শিশুই চায় আরাম, তারা সহজে কষ্ট করতে চায় না। প্রত্যেক শিশুর মধ্যে আরামের চাহিদা আছে, যা তাদের আনন্দ দেয়।