শিশুর সুষম বিকাশে প্রাথমিক শিক্ষার ভূমিকা কী
অথবা, ‘প্রাথমিক শিক্ষার মজবুত ভিতের উপর গড়ে উঠতে পারে পরবর্তী শিক্ষার ইমারত’- ব্যাখ্যা করো
শিক্ষার্থীর বিভিন্ন বিষয়ে প্রাথমিক ধারণা গঠনের মাধ্যমে সামাজিক মূল্যবোধ গঠন, নীতিবোধের বিকাশ ইত্যাদি সম্পর্কে ভিত তৈরি হয় নিয়ন্ত্রিত শিক্ষার দ্বিতীয় স্তর প্রাথমিক শিক্ষার স্তরে। এই শিক্ষার উপরই শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ জীবন নির্ভর করে। এই কারণেই বলা হয় যে প্রাথমিক শিক্ষার মজবুত ভিতের উপর গড়ে উঠতে পারে পরবর্তী শিক্ষার ইমারত। এই বিষয়টি আরও পরিষ্কার হবে শিশুর সুষম বিকাশে প্রাথমিক শিক্ষার ভূমিকাটি আলোচনা করলে।
শিশুর সুষম জীবনবিকাশে প্রাথমিক শিক্ষার ভূমিকা
(1) দৈহিক বিকাশ: দৈহিক বিকাশে প্রাথমিক শিক্ষা বিশেষভাবে সাহায্য করে। কারণ প্রাথমিক শিক্ষার পাঠক্রমে এমন বিষয় বা শরীরচর্চামূলক কাজ আছে, যা শিক্ষার্থীর দৈহিক বিকাশকে বিশেষভাবে সাহায্য করে।
(2) মানসিক বিকাশ: প্রাথমিক শিক্ষা শিশুর মানসিক বিকাশে বিশেষভাবে সাহায্য করে, কারণ প্রাথমিক শিক্ষায় শিশুর চিন্তন ক্ষমতা, বিচার ক্ষমতা, যুক্তি ক্ষমতার বিকাশ ঘটে-এমন সব বিষয় অন্তর্ভুক্ত আছে। তাই মানসিক বিকাশে প্রাথমিক শিক্ষা অপরিহার্য।
(3) সামাজিক বিকাশ: সামাজিক বিকাশে সাহায্য করায় প্রাথমিক শিক্ষার আর-একটি গুরুত্ব আছে। প্রাথমিক শিক্ষায় দলগতভাবে খেলার মাধ্যমে, একইসঙ্গে খেলাধুলার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মধ্যে সামাজিক বিকাশ ঘটে।
(4) নৈতিক বিকাশ: শিক্ষার্থীর নৈতিক বিকাশে প্রাথমিক শিক্ষার গুরুত্ব সর্বাধিক। প্রাথমিক শিক্ষার মাধ্যমে শিশু ভালোমন্দ, ন্যায়-অন্যায়, উচিত- অনুচিত প্রভৃতি সম্পর্কে সচেতন হয়। ফলে তার মধ্যে নৈতিক চরিত্রের বিকাশ সম্ভব হয়।
(5) সু-অভ্যাস গঠন: প্রাথমিক শিক্ষা শিক্ষার্থীর সু-অভ্যাস গঠনে সাহায্য করে। সু-অভ্যাস গঠনের ফলে শিক্ষার্থীরা ভবিষ্যৎ জীবনে বিশেষ সফলতা লাভ করে।
(6) ব্যক্তিত্বের বিকাশসাধন: জন্মের পর কয়েক বছর পর থেকে ব্যক্তিত্বের বিকাশ ঘটতে থাকে। ব্যক্তিত্ব হল জৈব মানসিক সংগঠন যা প্রাথমিক শিক্ষার মাধ্যমে পরিপূর্ণতা লাভ করে।
(7) জ্ঞান ও দক্ষতা অর্জন: প্রাথমিক শিক্ষা বাল্যকালের শিক্ষার্থীদের জ্ঞান ও দক্ষতা অর্জনে সাহায্য করে। এই জ্ঞান ও দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে শিক্ষার্থীরা জীবনে সফলতা লাভ করে।
(৪) বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি: প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের পাঠে বিভিন্ন দেশের আবিষ্কার, বৈজ্ঞানিক চিন্তাভাবনা প্রভৃতি স্থান পায়, ফলে শিক্ষার্থীর মধ্যে বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি জাগ্রত হয়।
(9) কর্ম অভিজ্ঞতা: প্রাথমিক শিক্ষায় কর্মকেন্দ্রিক শিক্ষার উপর গুরুত্ব দেওয়া হয়। ফলে বিভিন্ন কাজ নিজের হাতে বাস্তব অভিজ্ঞতার মাধ্যমে করানো হয়। ফলে কর্ম অভিজ্ঞতা বৃদ্ধি পায়।
আরও পড়ুন – আজব শহর কলকেতা প্রশ্ন উত্তর