শিন্টো ধর্মের বৈশিষ্ট্য ও প্রকৃতি লেখো। শিন্টো ধর্মের উপাসনা রীতি কেমন ছিল

জাপানি সংস্কৃতির এক অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হল শিন্টো ধর্ম। বিশিষ্ট কূটনীতিবিদ ও লেখক উইলিয়ম জর্জ অ্যাস্টন (William George Aston) এই ধর্মকে জাপানিদের জাতীয় ধর্ম বলে অভিহিত করেছেন।
বৈশিষ্ট্য
শিন্টো ধর্মের বৈশিষ্ট্যগুলি হল- শিন্টোবাদ মূলত আচারনির্ভর ধর্ম। বিভিন্ন ধর্মীয় প্রথা ও আচারের মাধ্যমে এই ধর্ম পালিত হয়, যা বর্তমান ও অতীতের মধ্যে যোগসূত্র স্থাপন করে। জাপানে পরম্পরাগতভাবে শিন্টোবাদ অনুসৃত হয়। এর কোনও প্রাতিষ্ঠানিক ভিত্তি নেই, নেই কোনও পবিত্র ধর্মগ্রন্থও। প্রথাগত বিশ্বাস এবং তার ভিত্তিতে অনুষ্ঠিত বিভিন্ন উৎসবে শিন্টো ধর্মস্থানে অসংখ্য মানুষের জমায়েত হয়।
প্রকৃতি
শিন্টো ধর্ম কেবলমাত্র জাপানের প্রথাগত কিছু ধর্মীয় অনুশীলনের সমষ্টি নয়, এতে মিশে আছে সেই অনুশীলনের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ বিশ্বাস এবং জীবনবোধ। তাই ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতার বাইরে জনগণের সমাজজীবন এবং ব্যক্তিগত প্রেরণার মধ্যে শিন্টো ধর্ম স্পষ্টরূপে প্রতিভাত হয়। এই ধর্মমতকে প্রধানত তিনটি শ্রেণিতে বিভক্ত করা হয়, যথা- (a) শ্রাইন (Shrine) শিন্টো, (b) সেক্ট (Sect) বা সম্প্রদায় শিন্টো এবং (c) লোক (Folk)শিন্টো এই তিনটি মতবাদ পরস্পরের সঙ্গে গভীরভাবে সম্পর্কযুক্ত।
শিন্টো ধর্মের উপাসনা রীতি
শিন্টো ধর্মে উপাসনা হল একটি গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় অনুশীলন। প্রধানত কামি ও পূর্বপুরুষদের প্রতি শ্রদ্ধাজ্ঞাপনের লক্ষ্যে শিন্টো ধর্মাবলম্বীরা প্রার্থনা, উৎসর্গ ও বিভিন্ন রীতিনীতির মাধ্যমে উপাসনা করেন। এই উপাসনার কয়েকটি দিক হল-
(1) মন্দির উপাসনা: শিন্টো মন্দিরগুলি হল শিন্টোবাদীদের কাছে তাদের উপাসনার মূলকেন্দ্র। প্রথমে মন্দিরের প্রবেশপথ (টোরি বা Torii) মাথা নত করে পার হওয়া, হাত ও মুখ ধোওয়া ও তারপর প্রার্থনার মাধ্যমে উপাসনা করেন শিন্টোরা।
(2) ধর্মীয় নৃত্য: কামিদের সম্মানে শিন্টো মন্দিরে অনুষ্ঠানের সময় নৃত্য পরিবেশন করা হয়। একে কাগুরা (Kagura) বলে।
(3) পূজার উপকরণ: পুজোর সময় শিন্টো ধর্মে উপকরণ হিসেবে কাঠের বাঁশি, পবিত্র দড়ি, পবিত্র কাগজ, ফল, ফুল ইত্যাদি ব্যবহার করা হয়।
(4) ওমি কুজি: জাপানে শিন্টো অনুসারীরা ভাগ্য জানার জন্য ওমি কুজি (Omi Kuji) ব্যবহার করেন। এই রীতিতে উপাসক মন্দিরে ছোটো কাগজের টুকরোয় লেখা সৌভাগ্য বা দুর্ভাগ্যের ভবিষ্যদ্বাণী পান। যদি কাগজে দুর্ভাগ্যের কোনও বাণী থাকে, তবে প্রাপক ব্যক্তি সেই কাগজটিকে আবার মন্দিরে বেঁধে দেন, যাতে কামিরা তাকে রক্ষা করেন। এ ছাড়া শিন্টোরা কামিকে ধন্যবাদ জানাতে বছরের বিভিন্ন সময় অনুষ্ঠান পালন করে থাকেন। এই আচার-অনুষ্ঠানগুলি জাপানের ধর্মীয় সংস্কৃতির অপরিহার্য অঙ্গ।
আরও পড়ুন – মধ্যযুগীয় ভারতের শিক্ষা প্রশ্ন উত্তর