শিক্ষাসভা সম্পর্কে টীকা লেখো

শিক্ষাসভা সম্পর্কে টীকা লেখো।

অথবা, ভারতবর্ষে শিক্ষার ক্ষেত্রে সরকারি শিক্ষাপ্রচেষ্টায় GCPI-এর অবদান বিবৃত করো।

শিক্ষাসভা সম্পর্কে টীকা লেখো
শিক্ষাসভা সম্পর্কে টীকা লেখো

সনদ আইন অনুযায়ী ভারতে শিক্ষাবিস্তারের রীতি গৃহীত হয় ও পুনেতে একটি সংস্কৃত কলেজ (1821 সালে) এবং কলকাতায় মেডিকেল কলেজ স্থাপিত হয়। এর পাশাপাশি নবদ্বীপ, ত্রিহূত প্রভৃতি স্থানে সংস্কৃত কলেজ প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব গৃহীত হলেও তা কার্যকর করার কোনো প্রস্তাবই দেখা যায়নি।

শিক্ষাসভা

(1) শিক্ষাসভা বা GCPI-এর গঠন: শিক্ষা সংক্রান্ত বিষয়ে সনদ আইনে ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বললেও এক্ষেত্রে সরকারি নিষ্ক্রিয়তা দূরীভূত করার সক্রিয় উদ্যোগ গ্রহণ করেন তৎকালীন অস্থায়ী গভর্নর জেনারেল মি. অ্যাডাম। তাঁর উদ্যোগে 1823 সালের 31 জুলাই গভর্নর জেনারেলের পরিষদের মোট দশ জন সদস্যকে নিয়ে গঠিত হয় General Committee of Public Instruction বা GCPI

(2) শিক্ষাসভার উদ্দেশ্য: প্রধানত ভারতবাসীর জন্য উন্নত শিক্ষার ব্যবস্থা করা ও প্রসার ঘটানো এবং তাদের নৈতিক চরিত্রের উন্নতি ও বিকাশসাধনই ছিল শিক্ষাসভা গঠনের অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য। GCPI কমিটি গঠিত হওয়ার পর ভারতের শিক্ষাখাতে বরাদ্দ অর্থের সবটাই কমিটির হাতে অর্পণ করে।

(3) শিক্ষাসভার সদস্যবৃন্দ: মূলত প্রাচ্যবিদ্যা বিশেষজ্ঞরা যেমন-ড. এইচ টি প্রিন্সেপ, ড. এইচ এইচ উইলসন প্রমুখ বিদগ্ধ পণ্ডিতগণ ছিলেন এই কমিটির সভ্য। তবে শিক্ষাসভার কমিটিতে কোনো ভারতীয় সদস্য ছিলেন না। ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে কমিটির তৎপরতায় শিক্ষার বিশেষ প্রসার ঘটতে থাকে।

(4) শিক্ষাসভা বা GCPI-এর কার্যাবলি: সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাদ্রাসা ও উচ্চশিক্ষার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানগুলি কালক্রমে কমিটির কর্তৃত্বাধীনে চলে আসে। এর প্রধান কার্যাবলি সম্পর্কে নিম্নলিখিতভাবে আলোচনা করা হল-

  •  সংস্কৃত কলেজ প্রতিষ্ঠা: শিক্ষালাভের সক্রিয় উদ্যোগ ও তৎপরতায় কলকাতায় 1824 সালে একটি সংস্কৃত কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়।
  •  দিল্লি ও আগ্রায় কলেজ প্রতিষ্ঠা: দিল্লি ও আগ্রায় কলেজ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে শিক্ষাসভা ভারতে শিক্ষাবিস্তারের উদ্যোগ নেয়।
  • ইংরেজি শিক্ষাপ্রসারের উদ্যোগ গ্রহণ: শিক্ষাব্যবস্থায় ইংরেজি ভাষার প্রসার ঘটানোর জন্য শিক্ষাসভা বা GCPI প্রাচ্য শিক্ষার প্রধান প্রতিষ্ঠানগুলিতে যথা-কলকাতায় মাদ্রাসা, সংস্কৃত কলেজ, দিল্লি কলেজে ইংরেজি শিক্ষার বন্দোবস্ত করেছিল।
  • ছাপাখানা প্রতিষ্ঠা ও পুস্তক প্রকাশ: এসময় কলকাতায় সরকারি ছাপাখানা প্রতিষ্ঠিত হয়। শিক্ষাসভার সক্রিয় প্রচেষ্টায় 1830 সালের মধ্যেই আরবি, ফারসি ও সংস্কৃত ভাষায় গ্রন্থ ছাপা ও প্রকাশিত হয়।
  • পন্ডিতদের সুযোগসুবিধা: শিক্ষাবিস্তার ঘটানোর পাশাপাশি শিক্ষাসভা বা GCPI বিশিষ্ট পণ্ডিতদের পৃষ্ঠপোষকতা দান এবং আর্থিক ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় সুযোগসুবিধা দানের উপযুক্ত ব্যবস্থা করেছিল। শিক্ষাসভা বা GCPI প্রাথমিক পর্বে উল্লিখিত কার্যাবলিগুলি সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করলেও পরবর্তীকালে নানাবিধ সমস্যার সম্মুখীন হয়, এসময় শিক্ষাসভার মধ্যে প্রাচ্যবাদী ও পাশ্চাত্যবাদী এই দুটি দলের সৃষ্টি হয়। ফলে সরকারি শিক্ষানীতির প্রধান নীতি কী হবে, তা নিয়ে উভয় গোষ্ঠীর মধ্যে প্রবল বিতর্কের সৃষ্টি হয় যা কমিটিতে অচলাবস্থা সৃষ্টি করে, এরপর 1833 সালে 1813-এর সনদ আইনের নবীকরণের সময় ইংরেজি শিক্ষা তথা পাশ্চাত্য জ্ঞান-বিজ্ঞান আলোচনার পথ প্রশস্ত হয়।

আরও পড়ুন – মধ্যযুগীয় ভারতের শিক্ষা প্রশ্ন উত্তর

Leave a Comment