রাজা রামমোহনের শিক্ষাজীবন সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করো। “রামমোহন বহুবিবাহ প্রথার বিরোধী ছিলেন”-এর স্বপক্ষে আলোচনা করো। রাজা রামমোহন রায় ছিলেন ‘প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের এক পূর্ণ সমন্বয়ের প্রতীক’ -সংক্ষেপে আলোচনা করো

রামমোহন রায়ের শিক্ষাজীবন
রামমোহন রায় চোদ্দো বছর বয়স পর্যন্ত বাড়িতেই পড়াশোনা করেন। গ্রাম্য পাঠশালায় বাংলা শিক্ষার সঙ্গে সঙ্গে তিনি এক মৌলবির কাছ থেকে ফারসি ভাষা শিখতে আরম্ভ করেন। সেই সময় ফারসি ভাষা ছিল রাজদরবারের ভাষা। তাই ধনী বংশের ছেলেরা ফারসি ভাষায় শিক্ষালাভ করত। ফারসি ভাষার সঙ্গে সঙ্গে তিনি আরবি ভাষাও শিখে ফেলেন। তিনি আরবি ভাষায় অ্যারিস্টটল ও ইউক্লিডের লেখাও পড়েন। অনেক কম বয়সেই তিনি ‘কোরান শরিফ’ অধ্যয়ন করেন।
এ ছাড়াও পারস্যের সুফিবাদী বইপত্রও অধ্যয়ন করেন। সুফিবাদ পাঠ করার ফলেই তাঁর মনে ধর্মবিশ্বাস শিথিল হয়ে পড়ে। এ ছাড়া তাঁর প্রিয় কবি ছিলেন মাওলানা রুমি, শামীজ তাব্রিজ প্রমুখ। মাত্র চোদ্দো বছর বয়সে নন্দকুমার বিদ্যালঙ্কার নামে একজন সংস্কৃত অধ্যাপকের সঙ্গে রামমোহনের পরিচয় হয়। পরবর্তীতে তাঁর সংস্পর্শে রামমোহন সংস্কৃতশাস্ত্রে অধিকার লাভ করেন এবং তান্ত্রিক মতে আকৃষ্ট হন ।
রামমোহন রায় বহুবিবাহ প্রথার বিরোধী ছিলেন
তৎকালীন সামাজিক প্রথানুসারে এবং বাবার নির্দেশে রামমোহনকে নয় বছর বয়সের মধ্যেই বিয়ে করতে বাধ্য করা হয়। তিনি তিনবার বিবাহ করেছিলেন। তাঁর প্রথম স্ত্রী কিছুদিনের মধ্যেই মারা যান। নিজের জীবনের তিক্ত অভিজ্ঞতা থেকেই পরবর্তী জীবনে তিনি বহুবিবাহ প্রথার তীব্র নিন্দা এবং বিরোধিতা করেন। তাঁর নিজের জীবনকালের তিক্ত অভিজ্ঞতা থেকে তিনি তাঁর পুত্রদের উপর শর্ত আরোপ করেন যে, স্ত্রী বেঁচে থাকতে যদি কেউ দ্বিতীয় বিয়ে করে তবে সে পৈতৃক সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত হবে। কারণ পুরুষের একাধিক বিয়েকে স্ত্রীলোকদের জন্যে অত্যন্ত হীন ও অসম্মানের বিষয় হিসেবে দেখতেন তিনি।
রাজা রামমোহন রায় ছিলেন প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের এক পূর্ণ সময়ের প্রতীক
প্রাচ্যের ঐতিহ্যময় দার্শনিক তত্ত্বের প্রতি রাজা রামমোহন রায়ের শ্রদ্ধা ছিল অগাধ, কিন্তু সেই সঙ্গে ভারতীয় সমাজের পুনরুজ্জীবনের জন্য পাশ্চাত্যের যুক্তিবাদ, বৈজ্ঞানিক মনোভাব ও মানবতাবাদের আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে সমাজের সকল শ্রেণির মানুষের সমান অধিকার প্রতিষ্ঠাই ছিল রাজা রামমোহন রায়ের জীবনের অন্যতম সংকল্প। প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের শিক্ষা, সংস্কৃতি ও ধর্ম সম্পর্কে জ্ঞানার্জন করার ফলে তাঁর চরিত্রে বহুত্বের এক বিরাট সমন্বয় ঘটেছিল বলে তাঁকে ‘প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের এক পূর্ণ সমন্বয়ের প্রতীক’ বলে অভিহিত করা হয়েছে।
আরও পড়ুন – মধ্যযুগীয় ভারতের শিক্ষা প্রশ্ন উত্তর