“ভারতীয় সাহিত্য, দর্শন, ধর্মশাস্ত্র তথা নারীশিক্ষার ক্ষেত্রে তৎকালীন ভারতীয় সমাজের অচলায়তন ভেঙেছিলেন রামমোহন” আলোচনা করো। অর্থনৈতিক সংস্কারে রামমোহন রায়ের ভূমিকা আলোচনা করো

কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের ভাষ্যে
“এ এক অত্যন্ত আশ্চর্য ব্যাপার যে, সংকীর্ণ প্রাদেশিকতার তমসাচ্ছন্ন যুগে যখন দেশবাসী তাঁকে চিনতে পারেনি, সেই যুগে রামমোহন এমন এক উন্নতমানের অর্ঘ্য তাঁর দেশবাসীর জন্য বহন করে আনলেন, যাঁর উদার সহানুভূতি ও উপলব্ধির মধ্যে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের শ্রেষ্ঠ আকাঙ্ক্ষার মিলন ঘটেছিল।”
ভারতীয় দর্শন, ধর্মশাস্ত্র, নারীশিক্ষার ক্ষেত্রে তৎকালীন ভারতীয় সমাজের অচলায়তন ভেঙেছিল রামমোহন
তৎকালীন ভারতীয় সমাজ আবদ্ধ পঙ্কিল জলাশয়ে রূপান্তরিত হয়েছিল। রামমোহন তাকে গতিশীল স্রোতধারায় পরিবর্তন করার সূচনা করেছিলেন। পাশ্চাত্য শিক্ষার আলোকও তিনিই প্রথম জ্বালান। রামমোহন বাংলা ভাষাকে যেমন প্রতিষ্ঠিত করেন আবার ভারতের অতীত সাহিত্য ও দর্শনের পুনরুদ্ধার করে ইসলাম ও খ্রিস্টধর্মের সঙ্গেও একত্রিত করেন। আধুনিক তুলনামূলক ধর্মতত্ত্বের (Comparative religion) সূচনাও তিনিই করেন। কিন্তু এই বিস্ময় পুরুষের কর্মকান্ডের প্রভাবে পরবর্তীকালে নারীশিক্ষার বিপুল ও ধারাবাহিক অগ্রগতি ঘটলেও তা কখনোই সন্তোষজনক হয়ে উঠতে পারেনি। ভিন্ন ধরনের লিঙ্গ বৈষম্য এবং নির্যাতনও কখনোই সম্পূর্ণ লুপ্ত হয়নি।
অর্থনৈতিক সংস্কারে ভূমিকা : 1833 খ্রিস্টাব্দে কোম্পানির সনদ প্রাপ্তির সময় রাজা রামমোহন রায় বিলাতের পার্লামেন্টে যে প্রতিবেদন পাঠান, তা তাঁর প্রগতিশীল অর্থনৈতিক চিন্তার পরিচায়ক। তিনি চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের ফলে শোষিত কৃষককুলের সপক্ষে বক্তৃতা দিয়েছিলেন। নতুন সনদে তিনি কৃষকদের স্বার্থরক্ষার জন্য উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণেরও দাবি জানান।
আরও পড়ুন – মধ্যযুগীয় ভারতের শিক্ষা প্রশ্ন উত্তর