বিদ্যাসাগরকে বাংলা গদ্য সাহিত্যের জনক বলা হয় কেন? সংস্কৃত কলেজের অধ্যক্ষ থাকাকালীন সারা বাংলা জুড়ে বিদ্যালয় স্থাপনে বিদ্যাসাগরের অবদান সংক্ষেপে আলোচনা করো

শিক্ষা সংস্কারক হিসেবে বিদ্যাসাগরের কীর্তি হল সাহিত্যের বিকাশসাধন। সেই সময় তিনি বাংলা সাহিত্য ও ভাষাকে এক উচ্চ শিখরে পৌঁছে দিয়েছেন। তিনি বাংলা গদ্যকে বিশেষভাবে সাহিত্যরূপে প্রতিষ্ঠিত করেছেন।
(1) বাংলা গদ্যের বিকাশে তার বড়ো অবদান হল বাংলা বর্ণমালার সংস্কার। তিনি প্রথম যতি চিহ্নের ব্যবহার করে বাক্য গঠনের সঠিক রূপ দেন।
(2) তিনি প্রাথমিক শিক্ষার উপযোগী ‘বর্ণপরিচয়’ প্রথম ভাগ ও দ্বিতীয় ভাগ রচনা করেন। প্রত্যেক শিশুকে শুরু করতে হয় ‘বর্ণ পরিচয়’ পড়ার মধ্য দিয়ে। তা ছাড়া কথামালা, বোধোদয় বইগুলি রচনা করে বাংলা লেখার সহজ পথ নির্দেশ করেছেন।
(3) সংস্কৃত শিক্ষাকে সহজ ও উন্নত করার জন্য তিনি লিখেছেন- ‘উপক্রমণিকা’, ‘ব্যাকরণ কৌমুদী’, ‘শকুন্তলা‘, ‘ভ্রান্তিবিলাস’, ‘সীতার বনবাস’, ‘বেতাল পঞ্চবিংশতি’ ইত্যাদি।
(4) বিদ্যাসাগর ইংরেজি ও সংস্কৃত ভাষা শিক্ষাচর্চার মাধ্যমে বাংলা ভাষাকে সুপরিচ্ছন্ন ও সুসংযত করে শিক্ষাকে গতিময় করে তুলেছেন। সুতরাং বিদ্যাসাগর বাংলা সাহিত্যকে কেবল সার্বজনীন ব্যবহারযোগ্য করে তোলেনি, বাংলা গদ্যকে সুন্দর করার চেষ্টা করে গেছেন। এই কারণে বিদ্যাসাগরকে বাংলা গদ্য সাহিত্যের জনক বলা হয়।
1855 খ্রিস্টাব্দের 1 লা মে-তে সংস্কৃত কলেজের অধ্যক্ষের পদ ছাড়াও মাসিক অতিরিক্ত 200 টাকা বেতনে দক্ষিণবঙ্গে সহকারী বিদ্যালয় পরিদর্শকের পদে নিযুক্ত হন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর মহাশয়। 17 জুলাই বাংলা শিক্ষক প্রশিক্ষণের উদ্দেশ্যে সংস্কৃত কলেজের অধীনে ওই কলেজের প্রাতঃকালীন বিভাগে নর্মাল স্কুল স্থাপন করেন। এই স্কুলে প্রধান শিক্ষক নিযুক্ত হন অক্ষয়কুমার দত্ত। এই বছরেই দক্ষিণবঙ্গের চার জেলায় একাধিক মডেল স্কুল বা বঙ্গবিদ্যালয় স্থাপন করেন। আগস্ট- সেপ্টেম্বর মাসে নদিয়ায় পাঁচটি, আগস্ট-অক্টোবরে বর্ধমানে পাঁচটি, আগস্ট-সেপ্টেম্বর-নভেম্বরে হুগলিতে পাঁচটি এবং অক্টোবর-ডিসেম্বরে মেদিনীপুর জেলায় চারটি বঙ্গবিদ্যালয় স্থাপন করেন।
আরও পড়ুন – মধ্যযুগীয় ভারতের শিক্ষা প্রশ্ন উত্তর